বন্ধ কোম্পানি সচল করতে চায় বিএসইসি

ইউনাইটেড,ফ্যামিলিটেক্স ও সি অ্যান্ড এর পর্ষদ পুনর্গঠন

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২১-০২-২৮ ২১:২৮:১৫


পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বন্ধ কোম্পানি সচল করতে চায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি)। এই জন্য ইতোমধ্যে কয়েকটি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে বিএসইসি। পর্ষদে বসেই বন্ধ কোম্পানি চালু করতে কাজ শুরু করেছে বিএসইসির নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালকরা। ফলে বিনিয়োগকারীদের নতুন আশার আলো দেখাচ্ছেন তারা। ইতিবাচক অবস্থার কারণে বন্ধ থাকা বাকী কোম্পানিগুলোতে নতুন পরিচালক বসাচ্ছে বিএসইসি। এরই আলোকে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, ফ্যামিলিটেক্স ও সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইলসের পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে বিএসইসি। আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি কোম্পানি দুটিতে নতুন পর্ষদ নিয়োগ দিয়েছে কমিশন।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ : নতুন পর্ষদের কাজী ওয়াহিদুল আলম, ড. এম সাদিকুল ইসলাম, মাকসুদুর রহমান সরকার, এটিএম নজরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. বদরুজ্জামান ভূইয়া, মুহাম্মদ ইউনুস ও মুহাম্মদ শাহ নেওয়াজ। কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে কাজী ওয়াহিদুল আলম।

তালিকাভুক্ত চার কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন হচ্ছে

ডিএসইর তথ্য মতে, ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ইউনাইটেড এয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করেছে। একইসঙ্গে গত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করা কোম্পানিটি অবশেষে মূলবাজার থেকে সিটকে পড়লো ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে (ওটিসি)।

পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন 

Sunbd News–ক্যাপিটাল নিউজক্যাপিটাল ভিউজস্টক নিউজশেয়ারবাজারের খবরা-খবর

কোম্পানি সূত্র মতে, ২০০৬ সালে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেড। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১০ সালে। কোম্পানিটি ১ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। তালিকাভুক্তির পরের বছর ২০১১ সালে কোম্পানিটি ১০ টাকা ফেসভ্যালুর সঙ্গে অতিরিক্ত ৫ টাকা প্রিমিয়াম নিয়ে ২১ কোটি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৩১৫ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করে।

বর্তমানে কোম্পানিটির অনুমোধিত মূলধন ১১শ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন হলো ৮২৮ কোটি টাকা। কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে রয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ার। বাকী শেয়ারের মধ্যে ১১ দশমিক শূণ্য ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং ৮৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।

বিএসইসি সূত্র জানায়, সিভিল অ্যাভিয়েশন থেকে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে ইউনাইটেড এয়ারের পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। এর ফলে ইউনাইটেড এয়ার সচল হবে এবং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারে।

কোম্পানিটি ২০১২-১৩ অর্থবছরে মুনাফা করেছিল ৫৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, লভ্যাংশ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের প্রতি ১০০ শেয়ারে নতুন ১২টি শেয়ার দিয়েছিল। পরের অর্থবছরে ৫৮ কোটি ৭ লাখ টাকা মুনাফা করে কোম্পানিটি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মুনাফা করে ১৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা; লভ্যাংশ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের প্রতি ১০০ শেয়ারে নতুন ১০টি শেয়ার দিয়েছিল।

ফ্যামিলিটেক্স: উৎপাদন বন্ধ থাকা পুঁজিবাজারের বস্ত্র খাতের পর্ষদে ৬ জন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- কাজী আমিনুল ইসলাম, ড. সামির কুমার শীল, ড. গাজী মোহাম্মদ হাসান জামিল, ড. মো. জামিল শরিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফ এহসান ও ড. মো. ফরজ আলী। এ ৬ জন পরিচালকের মধ্যে কোম্পানিটির চেয়ারম‌্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কাজী আমিনুল ইসলাম।

‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির জন্য গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসির জারি করা নির্দেশনার ২ নম্বরে উল্লেখ রয়েছে, ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে যাওয়ার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে। পুনর্গঠিত পর্ষদে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা পুনরায় পরিচালক হওয়ার সুযোগ পাবেন। এছাড়া, কমিশন এক বা একাধিক স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেবে। ওই নির্দেশনার আলোকেই কোম্পানিটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ফ্যামিলিটেক্স বিডি ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর মূল মার্কেট থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এরপর কোম্পানিটির কোনো উন্নতি হয়নি। এছাড়া, সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালকরা মাত্র ৪.০২ শতাংশ শেয়ার ধারনের মাধ্যমে বিএসইসির সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণের নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে। অথচ কোম্পানিটির ৭৫.৫৭ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং ১৮.৪১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী শেয়ারধারণ করেও বিগত দুই বছর ধরে কোনো লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। এ বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকারক ও কমিশনের কাছে অপ্রত্যাশিত।

কমিশন লক্ষ্য করেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগে অর্থাৎ ২০১১ থেকে ২০১২ সালে ফ্যামিলিটেক্সের মুনাফা ৪৩৮ গুণ বেড়েছিল। আর তালিকাভুক্তির সময়ে অর্থাৎ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালে মুনাফা বেড়েছিল ৭৬ শতাংশ। কোম্পানিটির এ মুনাফা বৃদ্ধির এর ধারাবাহিকতা কেবল ২০১৪ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল। আর ২০১৬ সাল থেকে কোম্পানির মুনাফা অস্বাভাবিকভাবে কমতে থাকে। ওই সময়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিল মোহাম্মদ মোর্শেদ এবং চেয়ারম্যান রোকসানা আরা। তারা কোম্পানিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কোম্পানিটির নিট মুনাফা আকস্মিকভাবে কমতে থাকে।

প্রসঙ্গত, ফ্যামিলিটেক্সের উৎপাদন কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ২০১৩ সালে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ওই বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১০০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। ঠিক পরে বছর ২০১৪ সালে কোম্পানিটি মাত্র ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। এরপর ২০১৫ সালের কোম্পানি কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। আর ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোম্পানি মাত্র ৫ শতাংশ করে বোনাস লভ্যাংশ দেয়েছে বিনিয়োগকারীদের। আর ২০১৯ ও ২০২০ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। যার ফলে কোম্পানিটির ২০১৯ সাল থেকেই ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। আর তালিকাভুক্তির পর থেকে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো নগদ লভ্যাংশ দেয়নি।

সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইলস: এই কোম্পানিতে সাতজন পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে বিএসইসি। তারা হলেন-নারায়ন চন্দ্র দেবনাথ, ড. মোহাম্মদ শরীয়ত উল্লাহ,ড. এবিএম শহিদুল ইসলাম, ড. রেজওয়ানুল হক খান, এবিএম আশরাফুজ্জামান,ড. তৌফিক, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহসান।

কোম্পানিটি বিএসইসির ৫২৮ তম কমিশন সভায় প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের(আইপিও) অনুমোদন দেওয়া হয়। কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে ৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ২০১৫ সালে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ রয়েছে পরিচালকদের কাছে। বাকী ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। এছাড়া ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।