যৌক্তিক ক্ষতিপুরণ দাবি সোলার মিনিগ্রিড উদ্যোক্তাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-০৩-০৩ ১৯:০৬:০৬


দেশের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে ২০ বছরের জন্য  সোলার মিনিগ্রিড স্থাপন করে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের অর্থনৈতিক স্থাপনে ভূমিকা রাখছেন বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা। এসব মিনিগ্রিড স্থাপনের আগে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এসব এলাকায় তাদের কোন প্রকল্প নিবে না মর্মে এনওসি প্রদান করেছিল। কিন্তু ২/৩ বছর যেতে না যেতেই এই দুটি প্রতিষ্ঠান সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া শুরু করেছে। একই বাড়িতে দুটো মিটার বসানোর ঘটনাও ঘটেছে। বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হচ্ছে। লোকসানের মুখে পড়েছেন মিনিগ্রিড উদ্যোক্তারা।

এমতাবস্থায় যৌক্তিক ক্ষতিপুরণ চান এসব প্রকল্পের উদ্যোক্তারা। হয় যৌক্তিক মূল্যে তাদের বিদ্যুৎ কিনে নেওয়া অথবা পুরো প্রকল্প সরকার যাতে কিনে নেয় সেই দাবি করেছেন উদ্যোক্তারা।

মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন সোলা মিনিগ্রিড অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। এসময় লিখিত বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডিএম মজিবুর রহমান। তিনি জানান, বর্তমানে ২৬টি সোলার মিনিগ্রীডের মধ্যে ১৭টিতে আরইবি ও পিডিবি জোর পূর্বক তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ব্যপারে তারা উদ্যোক্তাদের সাথে কোন প্রকার আলাপ আলোচনা ছাড়াই পূর্বের প্রদত্ত ছাড়পত্রের কোনরকম তোয়াক্কা না করেই সোলার মিনিগ্রিড এলাকায় বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু করে এবং সোলার মিনিগ্রিডের গ্রাহকের মিটারের পাশেই তাদের মিটার স্থাপন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন।

তিনি বলেন, প্রায় ১০ বৎসর পূর্বে সরকার বিভিন্ন চর ও দ্বীপসংশ্লিষ্ট অফগ্রিড এলাকায় বসবাসরত প্রায় ২ কোটি সুবিধাবঞ্চিত গরীব ও বিধ্বস্ত মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সোলার মিনিগ্রিড প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করার কার্যক্রম শুরু করে। ইতিমধ্যে ২৬টি সোলার মিনিগ্রিড কোম্পানির মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২০ লাখ লোকের বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।

বর্তমানে আরইবি ও পিডিবি সেখানে প্রবেশ করায় মিনিগ্রিডের ৯০ শতাংশ গ্রাহক এখন তাদেও বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। যে কারণে সোলার মিনিগ্রিড উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে এবং তারা কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ অবস্থায় সোলার মিনিগ্রিড প্রকল্পের উদ্যোক্তারা ইডকলের  কিস্তি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকে সিআইবি রিপোর্ট খারাপ হচ্ছে এবং অন্যান্য ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে।

সোলার মিনিগ্রিড কোম্পানির কোন উদ্যোক্তাই এ যাবৎ বিনিয়োগকৃত ইকুইটি থেকে ১টি পয়সাও ফেরত নিতে পারেনি বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি সোলার মিনিগ্রিড এলাকায় আরইবি এবং পিডিবি প্রবেশ করার আগেই বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের ‘সৌর বিদ্যুৎ বাস্তবায়ন উন্নয়ন কর্মসূুচ নির্দেশিকা ২০১৩’ অনুযায়ী উৎপাদিত বিদ্যুতের পাইকারী ট্যারিফ মূল্য নির্ধারন করার দাবি জানান। অথবা একই নির্দেশিকা অনুযায়ী বিনিয়োগকৃত ইকুইটির উপর ১৫ শতাংশ লাভ বরাদ্ধপূর্বক জমিসহ মোট প্যাকেজ মূল্যের মাধ্যমে ইউটিলিটি কর্তৃক পুরো প্ল্যান্ট কিনে নিলেও সোলার মিনিগ্রিড উদ্যোক্তাদের কোনরুপ আপত্তি থাকবে না বলে তিনি জানান।

সরকার বিভিন্ন বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ক্রয় করে, সেই অনুযায়ী সোলার মিনিগ্রিড উদ্যোক্তাদেরকেও সুবিধা নিশ্চিত করা, আরইবি ও পিডিবি’র আগমনে বিগত ২ বছর যাবত যে সমস্ত এলাকায় সোলার মিনিগ্রিড উৎপাদিত বিদ্যুতের বিক্রির অভাবে যে অবচয় হয়েছে এবং হচ্ছে তা সংশ্লিষ্ট ইউটিলিটি কর্তৃক জরিমানা বাবদ এসএমজি উদ্যোক্তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে আরইবি পিডিবি’র আগমনে মিনিগ্রিড এলাকায় ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ অবিক্রিত থাকায় ইডকলের কিস্তি প্রদান সম্ভব না হওয়ায় এ বিষয়ে সরকারের মাধ্যমে যৌক্তিক সুরাহা হওয়ার পূর্বে ইডকলের লোন মওকুফ করার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও গ্রিনহাউজ এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহম্মেদ, এসটেক লিমিটেডের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর রনদেব দাশ গুপ্ত, ওয়েস্টার্ন রিনিউয়েবল এনার্জি লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার এসএম কাইয়ুম বাপ্পী, পূরবী গ্রিন এনার্জি লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. মেহেদী হাসান, এসএসজি সোলার লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার তপন চন্দ্র ঘোষ, ব্লু মেরিন এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব পাটওয়ারী, প্যারাসল এনার্জি লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার রুম্মান ইকবাল রনি, এনভিস এনার্জি লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. তাজুল ইসলাম প্রমুখ।

সানবিডি/এনজে