খাদিজা খানম ঊর্মি
নারীর এগিয়ে চলা ও প্রতিবন্ধকতা
:: প্রকাশ: ২০২১-০৩-০৮ ১৩:৪১:১২
স্বাধীনতার ৫০ বছরে সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীরা বড় ভূমিকা রেখেছে। নারীর অগ্রগতি দেশের অর্থনৈতিক চালচিত্র পাল্টে দেওয়ার ক্ষেত্রেও রেখেছে অনন্য অবদান। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন, “জগতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’’
বর্তমানে নারীরা পুরুষদের সাথে পা মিলিয়ে এগিয়ে গিয়েও পিছিয়ে পরছে নানা প্রতিবন্ধকতায়। পরিবার ও সমাজের নানা বিধি-নিষেধের কারণে ইচ্ছে থাকলেও উচ্চশিক্ষার গন্ডিতে পা রাখা হয়না অনেক নারীর। খর্ব করা হয় একজন নারীর বাইরে বেরিয়ে চাকরী করার অধিকার। দেয়া হয়না নিজের স্বপ্নের পথে নির্বিঘ্নে এগিয়ে চলার স্বাধীনতা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসেও উন্নত হয়নি আমাদের মন-মানসিকতা। এমনকি নারীরা নিজেরাও সচেতন নয় নিজের অধিকার সম্পর্কে। নারীদের এগিয়ে চলা ও সমাজের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আমাদের প্রতিনিধি খাদিজা খানম ঊর্মি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েকজন তরুণীর বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে , রোজিনা হক, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে নারীরা দেশের অগ্রগতিতে আরো বেশি অবদান রাখতে পারতো যদি সর্বক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হতো। শিশু থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী সকল নারীরাই শিকার হচ্ছে যৌন হয়রানির। স্কুল-কলেজে যাওয়ার পথে কিশোরীরা শিকার হচ্ছে ইভটিজিং এর। যার কবলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শত শত মেয়ের শিক্ষাজীবন। এমনকি শিক্ষাজীবন শেষে একজন নারী যখন কর্মক্ষেত্রে পা রাখে সেখানেও তাকে ভুগতে হয় অনিরাপত্তায়, অনিশ্চয়তায়। ঘরে-বাইরে নারীরা শিকার হচ্ছে ধর্ষণের। এমনকি শিশুরাও রেহায় পাচ্ছেনা এই ধর্ষণ থেকে। একজন নারীরও অধিকার আছে নিরাপত্তার সাথে চলাফেরা করার। সর্বক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে নারীদের দ্বারা দেশ আরো এগিয়ে যাবে।
নিজের অধিকার আদায়ে সচেতন হতে হবে, কাজী রাফিদা ফারিহা, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আমরা প্রায়ই বলে থাকি, পুরুষরা নারীদের সঠিক মূল্যায়ন করেনা। তেমনি নারীরা নিজেও অনেকক্ষেত্রে নিজেদের ঠিকঠাক মূল্য দেয়না।একজন মা নারী হয়েও তার মেয়ে শিশুটিকে ছেলে শিশুর থেকে আলাদা চোখে দেখে। দুজন শিশুর বেড়ে উঠায় করে হাজারো পার্থক্য। শিক্ষাদীক্ষা, মতবিনিময় সব কিছুতেই প্রাধান্য পায় ছেলেরা। একটা মেয়ে যদি পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে তাহলে তাকে সকল প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েই এগিয়ে যেতে হবে।রুখে দাঁড়াতে হবে সমস্ত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমাদের সমাজের বেশিরভাগ নারীই দুর্বলচিত্তের অধিকারী। সমাজে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রত্যেক নারীকে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, অন্যকেও অধিকার আদায়ে অনুপ্রাণিত করতে হবে এবং নিজেকে মূল্য দিতে শিখতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, অনামিকা সুলতানা, শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
একটু তলিয়ে দেখলেই দেখা যাবে এখনো এদেশের নারীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অনেক উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও প্রবল পুরুষতান্ত্রিকতার বেড়াজাল থেকে তারা মুক্ত হতে পারছেনা। নারীর অগ্রগতির প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হলে প্রথমে নারীর প্রতি সহিংসতা বা নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। নানা পর্যায়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও নারী নির্যাতনের ঘটনা কমছে না। নিরাপত্তার অভাব নারীর স্বাভাবিক চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করছে ও তার কর্মক্ষেত্র থেকে পিছু হটতেও বাধ্য করেছে। সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে নারীসমাজকে যদি যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত করে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তাহলে পুরুষের মতো তারাও জাতি গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে।
যৌতুকপ্রথা বন্ধ করুন, নারীদের সম্মান করুন, চন্দ্রিকা চক্রবর্তী, শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
অতীতে ( আইয়্যামে জাহিলিয়া বা অন্ধকার যুগ) এমন এক সমাজ ছিলো যেখানে কন্যা সন্তান জন্ম দেয়া ছিলো একজন মায়ের জন্য অভিশাপস্বরুপ। বর্তমানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের অবাধ বিচরণ থাকলেও নারী-পুরুষের অধিকারের মধ্যে পার্থক্য রয়েই গেছে। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও চিরতরে নির্মূল হয়নি যৌতুকপ্রথা । যা নিস্ব করে দেয় একটি অসহায় পরিবারকে। আবার, কখনো কখনো সরাসরি পাত্রপক্ষ যৌতুক দাবি না করলেও মেয়ের বাড়ি থেকে কিছু না দেয়া হলে হেয় করা হয় মেয়েটিকে। বিয়ের পর নানানভাবে কথা শুনতে হয় বাড়ির বউকে। আবার, অনেক সময় মেয়েদের বিয়ের পরেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বিয়ের পর শ্বশুড় বাড়ি ভিন্নরূপ ধারণ করে। অন্যদিকে, বিয়ের পর একজন শিক্ষিত নারী চাকরী করতে চাইলে নানা দায়িত্বের বেড়াজালে রুদ্ধ করা হয় তার পথ।