কর্মের মাধ্যমে নিজেকে উপস্থাপন করতে চান রোকসানা আকতার
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-০৩-০৮ ১৭:৩৯:২৯
‘নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে চাওয়া দোষের কিছু নয়, আমি মনে করি প্রত্যেকটা মানুষের নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে কাজে লাগানো উচিৎ।’ কথাগুলো দেশীয় খাদ্য পণ্য নিয়ে কাজ করা রোকসানা আকতারের।তিনি থাকেন ময়মনসিংহের ত্রিশালে।
তিনি বলেন, ‘আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করে ঢাকায় ফ্রী ল্যান্সিং দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করি। এর পর একে একে দুটো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরী ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত ছিলাম।’
রোকসানা আকতার জানান, ‘বর্তমানে আমি একজন উদ্যোক্তা এবং এমফিল গবেষক(জাককানইবি)।’
উদ্যোক্তা জীবনের কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে রোকসানা আকতার সানবিডি প্রতিনিধিকে জানান, চার বছরের ক্যারিয়ার ছেড়ে ২০১৭ সালে হাজবেন্ডের চাকুরীসূত্রে ঢাকা ছেড়ে চলে আসি ত্রিশাল,ময়মনসিংহে। এরপর দীর্ঘ প্রায় চার বছর নানারকম হতাশায় মানসিক কষ্টে ভুগতে থাকি কর্মহীন আমি। নিজের সেই পেশা জীবন খুব মিস করতাম। সারাদিন সংসার, সন্তান সামলে আর হাতে স্মার্ট ফোনে ফেসবুক, ইউটিউব দেখে নিরুপায় আমি নিজেকে একদম এককোণে হারাতে বসেছিলাম, সবসময় শুধু চিন্তা করতাম এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
এত পড়ালেখা, এত ভালো সার্টিফিকেট এভাবেই এখানে শেষ হতে দিবো না,মা বাবা এত করলো তাদের কথা খুব মনে হতো,তাদের জন্য কিছুই করতে পাচ্ছি না। এসব খুবই ভাবাতো। কষ্ট হতো খুব।
আগে থেকেই দেশীয় পণ্যের প্রতি আমার দূর্বলতা ছিল এজন্য চিন্তা করি দেশী খাদ্য নিয়ে অনলাইনে কাজ করবো কিন্তু আমি যেভাবে কাজ করতে চাই সেরকম প্লাটফর্ম পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ‘ই ২০২০ সালের জুলাই মাসে নাসিমা আক্তার নিশা’র প্রতিষ্ঠা করা বৃহত্তম উদ্যোক্তা প্ল্যাটফর্ম ওমেন এন্ড ই কমার্স ফোরাম (উই) এর দেখা পাই। ঠিক এসময় একটা জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় জামদানী নিয়ে কাজ করা একজন উদ্যোক্তার গল্প আমাকে খুবই অনুপ্রাণীত করে।
‘আর থেমে না থেকে শুরু করে দিই কাজের চিন্তা। অনলাইনে কাজ করলে অনেকে অনেক কথা বলবে এই চিন্তা মাথায় আসার আগে শুধু মনে হয়েছে আমার খারাপ দিনগুলোতে কাউকে পাশে পাইনি কে কি বললো তাতে কি এসে যায়। আমি মনে করি সততার সাথে করা যেকোন ভালো কাজই সম্মানের।’
রোকসানা আকতার বলেন, আমার উদ্যোগ নিজ তত্ত্বাবধানে আখের রস থেকে সম্পুর্ণ হাতে বানানো অপরিশোধিত ব্রাউন চিনি যাকে স্থানীয় ভাষায় আখের চিনি বা গুড়ের চিনিও বলে এবং শেরপুরের বিখ্যাত তুলশীমালা চাল নিয়ে কাজ শুরু করি।শুরু থেকেই খুব ভালো সারা পাই আলহামদুলিল্লাহ।
তিনি জানান, সাদা চিনিকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, হোয়াইট পয়জন, ‘আমার সন্তানকে আমি সাদা চিনি দিতে চাইতাম না এজন্য বেশ বিপাকে পড়তাম। আমি উদ্যোগ শুরুর প্রায় ২ বছর আগে থেকে পরিচিত হই আমাদের এই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আখের চিনির সাথে তখন আমার বাচ্চাকে একটু একটু করে দিতাম। এরপর এই চিন্তাটা এলো যে আমি তো এই ব্রাউন চিনি নিয়ে কাজ করতে পারি।’
‘আমার মত মায়েরা যারা কিনা সাদা চিনিকে পরিহার করতে চায়, সন্তানকে ভালো খাওয়াতে চায় তাদের চিন্তা একটু হলেও যেন দূর করতে পারি আমার উদ্যোগের মাধ্যমে। আর একটি দেশীখাদ্য তুলশীমালা ধান সরাসরি কৃষকের থেকে সংগ্রহ করি এরপর শুকানো থেকে প্যাকেজিং সব আমরাই করি। তাই এই চাল কৃত্রিম সুগন্ধ বা ক্যামিকেল মুক্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মূলত অর্গানিক পণ্য নিয়ে কাজ করতে বেশি পছন্দ করি। এজন্যই আমার পেজের নাম ‘মাটির ফুল’ অর্গানিক। এভাবেই উদ্যোগের পথ চলা শুরু উই এর সাথে। আমার উদ্যোগের বয়স সাত মাস। এর মধ্যে উই ও আমার পেজ থেকে আমার সেল হয়েছে এক লক্ষ্য নয় হাজার টাকা (১,০৯০০০)।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে তিনি বলেন ‘আমার উদ্যোগের উদ্যেশ্যই হচ্ছে নিজের একটা পরিচয়, স্বাবলম্বী জীবন। আমার শিক্ষাকে কাজে লাগানো। উদ্যোগ খুব কঠিন কাজ তবে ভালোবাসা দিয়ে করলে তা সহজ হয়ে যায়। আমি সবসময় মনে করি আমার উদ্যোগ দিয়ে আমি যেমন সমৃদ্ধ হবো তেমনি যেনো সমাজের উপকারে আসতে পারি। তাহলেই আমার উদ্যোগ সফল হবে। আর সেই লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছি, কাজ করে যেতে চাই।’
সানবিডি/ফাহমিদ জামান