বিধি বহির্ভূত ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ: ম. খা. আলমগীর/ অভিযোগ ভিত্তিহীন: নাফিজ সারাফাত

সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বে ফের আলোচনায় পদ্মা ব্যাংক

:: আপডেট: ২০২১-০৩-১০ ০৭:৫৩:২৬


ফের আলোচনা চলে এসেছে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড (সাবেক দি ফারমার্স ব্যাংক)। এবার দ্বন্ধে জড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফাত ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। ব্যাংকটির বিধি বহির্ভূত ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তবে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফাত। তিনি বলেন, তার অনুমোদন নিয়েই ফান্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। প্রত্যেক বছর ফান্ড থেকে লভ্যাংশ পাচ্ছি।

বিধি বহির্ভূত ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ: ম. খা. আলমগীর: পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড (সাবেক দি ফারমার্স ব্যাংক) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে অভিযোগ করেছেন ব্যাংকের পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠানের ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। অভিযোগের চিঠির কপি অর্থমন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, আইন না মেনে বিধি বহির্ভূতভাবে পদ্মা ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই টাকা থেকে ব্যাংক কোন ধরণের লভ্যাংশ পায়না ।

তিনি বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফাতের নিজস্ব একটি কোম্পানি হলো স্ট্রাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। সেই প্রতিষ্ঠান অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড অব বাংলাদেশ নামে একটি প্রাইভেট ইক্যুইটি করেছে। সেখানে পদ্মা ব্যাংকের ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। কোন ধরণের আইন না মেনেই এই ফান্ডের বিনিয়োগ করা হয়েছে। এখান থেকে কোন লভ্যাংশ পায় না ব্যাংক। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

অভিযোগ ভিত্তিহীন: নাফিজ সারাফাত

পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের বর্তমান চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফাত বলেছেন, সাবেক চেয়ারম্যানের কথা ভিত্তিহীন। তিনি ব্যাংকটি ডুবিয়ে গেছেন, এখন আবার প্রতিষ্ঠানটির পেছনে লেগেছেন। তিনি বলেন, এই টাকা বিনিয়োগের সময় কোন ভাবেই আমি জড়িত ছিলাম না। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন স্বাপেক্ষে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকর অনুমোদন নিয়ে ব্যাংক এখানে বিনিয়োগ করেছে। তিনি চেয়ারম্যান থাকার সময়ে, তার অনুমোদন নিয়ে বিনিয়োগ করা হয়েছে। রেজুলেশনে তার সই রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের পর ট্রাস্টির সাথে চুক্তি হয়। তার পর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন নিয়ে ফান্ডের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফান্ড ম্যানেজার তা ম্যানেজ করছে। আমি এটার সাথে সম্পৃক্ত নই।

লভ্যাংশের বিষয়ে তিনি বলেন, ফান্ডটি প্রত্যেক বছর লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। এ যাবতকালে ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দিন দিন ভালো করছে। এখন প্রতিদিন একটি করে চিঠি ইস্যু করেন তিনি। এতে করে ব্যাংকের সুনাম খর্ব হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

হঠাৎ মায়াকান্না মখা আলমগীরের: পদ্মার এমডি

ডুবন্ত একটি প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করাতে নিরলসভাবে কাজ করছেন বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যাংকের কর্মকর্তারা দাবী প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরুর। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি যখন ভালো করছে, তখন তার জ্বালা পোড়া শুরু হয়েছে। এখন তিনি মায়াকান্না করছেন।

এহসান খসরু বলেন, ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সাথে বর্তমান চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফাত কোনভাবেই জড়িত নয়। মহীউদ্দীন খান আলমগীর ব্যাংকের বিরুদ্ধে অনেক কথাই বলেন। তার কাজ হলো প্রতিদিন একটি করে অভিযোগ দেওয়া। প্রতিষ্ঠানটি ভালো করার জন্য তার কোন সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। তার অপর্কমের কারণে তাকে ব্যাংক থেকে চলে যেতে হয়েছে। তার সময়ে ব্যাংকের ৭৮ শতাংশ কুঋণ ছিলো। ব্যাংক চলার মতো কোন টাকা ছিলো না। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই আড়াই বছরে ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা লেনদেন করেছি। ২০১৯ সালে সাড়ে ৩ হাজার কোটি গ্রাহককে ফেরত দিয়েছি। ২০২০ সালে চার হাজার কোটি টাকার বেশি দিয়েছি। এই হলো ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা। তিনি ব্যাংকে শেষ করে দিয়েছেন, ‌‌‌‍’এখন তার কেন মায়াকান্না’ প্রশ্ন করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমি ২০১৮ সালে পদ্মা ব্যাংকে যোগ দিয়েছি। ওই সময়ে ব্যাংকের খারাপ অবস্থা ছিলো। প্রতিষ্ঠানটির টাকা ফেরত পেতে আমি ১৬ থেকে ১৭টি চিঠি তাকে দিয়েছি। তার সহযোগীতা চেয়েছি। কিন্তু কোন সহযোগিতা পাইনি। এখন উনি আবার চাচ্ছেন ব্যাংকটা বিপর্যয়ে পরে বন্ধ হয়ে যাক। তা না হলে কেন এভাবে সকাল-বিকাল বিরক্ত করছেন? তিনি বলেন, আমরা যেই টাকা বিনিয়োগ করেছি; তার থেকে নিয়মিত লভ্যাংশ পাচ্ছি। এ পর্যন্ত আমরা বিনিয়োগ থেকে ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা লভ্যাংশ পেয়েছি। তার মানে হলো তিনি লভ্যাংশ না পাওয়ার যে অভিযোগ করেছেন তা ভিত্তিহীন।

দি ফারমার্স ব্যাংক থেকে ‘পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড: রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া নতুন ৯ ব্যাংকের একটি ফারমার্স ব্যাংক। ২০১৩ সালের ৩ জুন প্রতিষ্ঠিত পদ্মা ব্যাংক। কয়েক বছরের মাথায় ২০১৬ সালে শত শত কোটি টাকা অনিয়ম দেখে ফারমার্স ব্যাংকে পর্যবেক্ষক দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের কারণে ২০১৭ সালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন খান আলমগীর তার পদ ছাড়তে বাধ্য হন ও ব্যাংকটির এমডি এ কে এম শামীমকে বাংলাদেশ ব্যাংক অপসারণ করে। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সরকারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়।

ব্যাংকটি বাঁচাতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশান অব বাংলাদেশ (আইসিবি) মূলধন জোগান দেয়। এক পর্যায়ে ব্যাংকের মালিকানায় আসে সরকারি চার ব্যাংক ও একটি বিনিয়োগ সংস্থা। বর্তমানে ৮২ দশমিক ১২ শতাংশ শেয়ারের মালিক সরকারি পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ করে শেয়ারের মালিক রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) মালিকানায় রয়েছে ৭ শতাংশ শেয়ারের। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধি রয়েছে ব্যাংকটির পর্ষদে।

ঋণ কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিতর্কিত ফারমার্স ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে ‘পদ্মা ব্যাংক’ করার অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছিল বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটি নাম পরিবর্তন করে ‘পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড’ করা হয়।