স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ; পাল্টে গেছে কৃষকের জীবনযাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৩-১১ ২৩:০৮:৫০


কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও আমদানি নির্ভরতা কমাতে ডাল ও মশলা জাতীয় ফসল উৎপাদনে ৪ শতাংশ সুদে বিশেষ কৃষি ঋণ চালু রয়েছে। এ স্কিম থেকে কৃষকরা ঋণ নিয়ে ফসল ফলিয়ে লাভবান হচ্ছে এরইসঙ্গে পরিবর্তন এসেছে কৃষকের জীবনমানের।

কৃষকরা নামে মাত্র সুদে কৃষি ঋণ পেয়ে ভালো ফসল উৎপাদন করে লাভোবান হওয়ায় ঋণ পরিশোধের পর যে মুনাফা পেয়েছেন তা দিয়ে কৃষক ও তার পরিবারের কাটছে সুখি জীবন। প্রতিটি কৃষকের পরিবারে হাসি ফুটেছে। অভাব নেই খাবার ও পোশাকের।

এ সকল কৃষকদের পরিবারে এক সময় অভাবের কারণে সন্তানদের অল্পতে শিক্ষার আলো থেমে যেত কিন্তু সেই সংকট থেকে অনেকটা মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন না ঋণ সুবিধার কারণে শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছেন। মুনাফার টাকায় নিজস্ব ঘরবাড়ি তৈরি ও জমির মালিকও হয়েছেন তারা। গেল ১০ বছরে তাদের জীবনযাত্রায় এই পরিবর্তন এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত ‘ এন ইমপেক্ট এসেসমেন্ট স্ট্যাডি অন স্পেসিয়াল অগ্রিকাল্চারাল প্রোগ্রাম অ্যাট ৪ পারসেন্ট কনসেশন্যাল ইন্টারেস্ট রেট’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।

৬টি বিভাগের ২৩টি জেলার ৫৩৫ জন গ্রাহকের (কৃষক) মতামত এবং অর্থবছর ২০১১ থেকে ২০২০ পরযন্ত সময়ের তথ্য নিয়ে এই জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

ডাল, তেলবীজ, মশলা ও ভুট্টাসহ ২০টি শস্যের ক্ষেত্রে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রথম ২% সুদে এই বিশেষ কৃষি ঋণ সুবিধা (স্কিম) চালু করা হয়।
২০১১-১২ অর্থবছরে এই ঋণের সুদহার বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছিল। গেল অর্থবছরে স্কিমের অধীনে ১০৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, জামানত বিহীন এই ঋণের খেলাপির হার বেশি নয়, মাত্র ৭ শতাংশ। তবে খেলাপিরা যৌক্তিক কারণেই খেলাপি হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুরযোগের কারণে ফসল নষ্ট হওয়া কিংবা ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারা। তবে ঋণের সুদহারকে কোন কৃষকই উচ্চ সুদ বলেননি।

কৃষক যাতে ফসলের ন্যায্য মূল পায় সেজন্য একটি নীতিমালা থাকার সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ঋণ পরিশোধে তাড়া না দেয়া এবং ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে কৃষক যাতে মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই স্বল্পমূল্যে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য না হয় তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। খেলাপি কম হওয়ার পাশাপাশি ঋণের টাকা অন্যখাতে ব্যবহারের প্রবণতাও কম ‍কৃষকদের। এক্ষেত্রে মাত্র ৯% গ্রাহক তাদের ঋণের টাকা ভিন্নখাতে ব্যবহার করেছেন।

জরিপে অংশ নেয়া কৃষকদের বেশির ভাগই মনে করেন চাহিদার তুলনায় এই ঋণের পরিমাণ অনেক কম এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমাও কম।
ঋণের পরিমাণ ও পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি অন্যান্য ফসলে যেমন- কলা, লিচু, মালটা, পেপে, আনারস, পেয়ারা, তাল, ড্রাগন ফ্রুট, কমলা চাষের ক্ষেত্রেও এই স্কিমের অধীনের ৪% সুদে ঋণ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ঋণ বিতরণ সহজ করতে শুধু ব্যাংকের শাখা নয় বরং উপ-শাখা কিংবা এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমেও ঋণ বিতরণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া করোনায় প্রধান প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদনে কৃষি ঋণের সুদহার কমিয়ে ৪% করা হয়েছে। এর ফলে অনেক কৃষক আমদানি নির্ভর শস্য উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। তাই এই স্কিমের অধীনে ঋণের সুদহার কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি ঋণের সুদহার ২ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয় তাহলে সরকারকে চলতি অর্থবছরের জন্য মাত্র ২.৮৩ কোটি থেকে ১.৪২ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।

বিশেষ সুবিধার এই ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কৃষকদের ঝক্কি ঝামেলাও কম বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। আবেদন পাওয়ার পর ৬ দিনেরও কম সময়ে মধ্যে ঋণ অনুমোদন হয়ে যায়। কৃষকরা জানিয়েছে, কোন ব্যাংকই ৪শতাংশের বেশি সুদ নিচ্ছে না।