মাহবুব কবীর মিলনকে লঘুদণ্ড, ‘তিরস্কার’ করেছে সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৩-১২ ১২:৩৩:৩০
দুর্নীতি দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১০ কর্মকর্তার উইং চাওয়া ওএসডি অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবীর মিলনকে তিরস্কার করেছে সরকার। তবে তিনি ওএসডি থাকলেও পদায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
গত ১ মার্চ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন স্বাক্ষরিত মিলনকে তিরস্কার করার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবীর যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ও প্রকৃত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্র ব্যতীত তার মনগড়া, ভিত্তিহীন ও সরকারের জন্য অস্বস্তিকর বক্তব্য দেয়া, সরকারি কর্মচারী হিসাবে তার আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল।
তিনি সরকারের অতিরিক্ত সচিব পদের কর্মকর্তা বিধায় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করা হয়।
তার বিরুদ্ধে আনীত অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। অভিযোগের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক প্রশাসনিক বিষয় বিবেচনায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী তাকে তিরস্কার নামে লঘুদণ্ড দেয়া হলো।
গণমাধ্যমে দেয়া সেই বক্তব্যে অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর বলেছিলেন, ‘আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তবে হতাশা হচ্ছে ওই জায়গায়, আমরা পারা জিনিস অনেক সময় করি না।
পারা জিনিসও অনেক সময় পারব না মনে করে বসে থাকি। আমি যদি প্রধানমন্ত্রীকে পেতাম তবে বলতাম, স্যার আমাকে ১০ জন অফিসার দিন। এদের আমি চুজ (নির্বাচন) করব, এদের নিয়ে আমি একটা উইং করব। মানুষের চোখের পানি দূর করার জন্য সব মন্ত্রণালয়, সব দপ্তর, সব অধিদপ্তরের বিষয়গুলো অ্যাড্রেস করব আমরা এই ১০ জন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি বলে আমরা দুর্নীতি দূর করতে পারব না, কেউ যদি বলে সিন্ডিকেট ভাঙা যায় না, আমি ওটারই চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি-আমার তিন মাস সময়ই যথেষ্ট, যে কোনো ডিপার্টমেন্টের সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য।
এনাফ টাইম (পর্যাপ্ত সময়)। দেশের অনেক ডেভেলপমেন্ট আনা যাবে, অনেক পরিবর্তন আনা যাবে। পারা যায়, আমরা পারবই। করতে না পারলে যে কোনো শাস্তি মাথাপেতে নেব।
এটা আমার খুব ইচ্ছা। তবে আমাদের স্বাধীনতা দিতে হবে। জবাবদিহিতা থাকবে একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে। অন্য কারও কাছে নয়। কেন এই কথাটা বলছি-নানা পারিপার্শ্বিকতা আমাদের কাজ করতে দেয় না। নানা কারণে করতে দেওয়া হয় না। সেখানে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে, সেখানে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।’
মাহবুব কবীর মিলন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে ভেজাল ও নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচিত হয়েছিলেন। কর্মজীবনে অত্যন্ত সৎ কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিত মিলন। তিনি রেলওয়ের দুর্নীতি বন্ধ এবং ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে বেশকিছু উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। বিশেষ করে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া ট্রেনের টিকিট কাটা যাবে না’ এবং ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’-এ নিয়ম প্রবর্তন করেন তিনি।
এ ছাড়াও অনলাইন রিফান্ড বা অনলাইনে টিকিট কাটার পর যাত্রী যদি সেটি পরিবর্তন করেন বা যাত্রা বাতিল করতে চান, তাহলে তিনি টিকিট ফেরত দিয়ে অনলাইনেই অর্থ ফেরত নিতে পারবেন-এমন নিয়মও চালু করতে চেয়েছিলেন। একই সঙ্গে রেলওয়ের নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধেও নিজে ভূমিকা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আলোচিত এই অতিরিক্ত সচিব।