নৌপথে প্রাণ-এর খাদ্যপণ্যের প্রথম চালান গেল ভারতে

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-০৩-১৬ ১৫:২১:২৪


স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে খাদ্যপণ্যের প্রথম চালান হিসেবে প্রাণ গ্রুপের ২৫ হাজার কার্টন লিচি ড্রিংকস নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে পন্যবোঝাই জাহাজ।

মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে নরসিংদীর পলাশে অবস্থিত প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক থেকে রওনা হয়েছে জাহাজটি। এটি সরাসরি কলকাতা বন্দরের টিটি শেডে গিয়ে পৌঁছাবে। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত থেকে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

পণ্যবোঝাই জাহাজটি নরসিংদীর শীতলক্ষ্যা থেকে যাত্রা শুরু করে দুপুর ১টায়। জাহাজটি নারায়ণগঞ্জ, খুলনার শেখবাড়িয়া হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে এবং কলকাতার বন্দরে গিয়ে পৌঁছাবে। এটি যেতে ৩-৪ দিন সময় লাগবে। মোট নদীপথের দৈর্ঘ্য হবে ৭১০ কিলোমিটার।

সড়ক পথের চেয়ে নৌপথে পণ্য পরিবহন খরচ ৩০ শতাংশ কম। সড়ক পথে অনেক জায়গায় রাস্তা খারাপ হওয়ায় পণ্য নষ্ট কিংবা পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু নৌপথ এক্ষেত্রে নিরাপদ। ট্রাকে পণ্য পরিবহনে একের অধিকবার লোডিং ও আনলোডিংয়ের প্রয়োজন পড়ে।

এতে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু নৌপথে পণ্য পরিবহনে পণ্যের গুণগতমান ভালো থাকে। সড়ক পথে পণ্য পাঠানোর জন্য যে পরিমাণ ট্রাক লাগে তাতে রফতানিকারকদের বেশ বেগ পেতে হয়। এছাড়া ট্রাক ভাড়াও বিভিন্ন সময় ওঠানামা করে। এতে খরচ বেড়ে যায়।

কিন্তু নৌপথে একটি বার্জে একসঙ্গে অনেক পণ্য পাঠানো যায়। ফলে নদীপথে অবকাঠামোগত কোনো সমস্যা থাকলে তার সমাধান করে এই পথে পণ্য রফতানি করলে দেশের রফতানি বাড়বে এবং উভয় দেশ এর মাধ্যমে উপকৃত হবে।

ভারতে উল্লেখযোগ্য রপ্তানিকৃত পণ্য :

ভারতে প্রাণ বর্তমানে দেড় শতাধিক পণ্য রফতানি করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পণ্য হলো- ফ্রুট ড্রিংকস, চিপস, স্ন্যাকস, বিস্কুট, ক্যান্ডি, সস, কেচাপ, নুডলস্, সস, জেলি ও মশলা।

উল্লেখযোগ্য রপ্তানিকৃত রাজ্য :

আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, বিহার, ত্রিপুরা, গুজরাট, পঞ্জাব, তামিলনাড়, কেরালা।

যেসব পথে রফতানি হয় :

স্থলবন্দরের মধ্যে রয়েছে ভোমরা, বুড়িমারী, সুতারকান্দি, আখাউড়া, ডাউকি। সমুদ্রবন্দরের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর।

ভারতে প্রাণ পণ্যের বাজার :

১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে প্রাণ পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় ভারতের আবহাওয়া, মানুষের খাদ্যাভ্যাসসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সঙ্গে অনেক মিল থাকায় এবং সহজ যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকায় বাংলাদেশি খাদ্যপণ্যের ভালো করার সুযোগ রয়েছে।

বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের সেভেন সিস্টারস অঞ্চলে বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রাণ প্রতিনিয়ত দেশটির মানুষের চাহিদা উপযোগী পণ্য সরবরাহের চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং দুদেশের মধ্যে থাকা কিছু প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠে রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিবছর ভারতে প্রাণের রফতানি গড়ে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। এছাড়া বিশ্বে প্রাণের খাদ্যপণ্যের মোট রফতানির প্রায় ৩০ শতাংশ হয় ভারতে। এখন নদীপথ যুক্ত হলে এবং সফলভাবে রফতানি করতে পারলে ভারতে খাদ্যপণ্য রফতানিতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

গত তিন বছরে ভারতে প্রাণ পণ্য রফতানি :

২০১৮ সালে রফতানি হয় ৭৯ মিলিয়ন, ২০১৯ সালে ৮৫ মিলিয়ন এবং ২০২০ সালে রফতানি হয় ৬০ মিলিয়ন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রাণ গ্রুপের রফতানিকার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৭ সালে ত্রিপুরাতে চানাচুর রফতানির মাধ্যমে। সেখান থেকে এখন ভারতের ২৮টি রাজ্যের প্রতিটিতেই প্রাণ পণ্য রফতানি হচ্ছে।

করোনার কারণে ২০২০ সালে ভারতে পণ্য রফতানি তুলনামূলক কম হয়েছে। একারণে এ অর্থবছরে ভারতে প্রাণের রফতানি খারাপ ছিল। তবে এখন রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে।

ভারতের নামী-দামি সুপারশপ ও অনলাইনে প্রাণ পণ্য :

প্রাণ পণ্য ভারতে বিভিন্ন দেশের নামী-দামি ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে দেশটির বিখ্যাত সব চেইনশপ ও অনলাইনে স্থান করে নিচ্ছে যা বাংলাদেশের জন্য গর্বের। এসব সুপারশপ ও অনলাইন হলো- ডি-মার্ট, স্পেন্সর রিটেইল, মোর রিটেইল, মেট্রো ক্যাশ এন্ড ক্যারি, বিগ বাস্কেট অনলাইন, অ্যামাজন ইন্ডিয়া, গ্রোফারস ও উড়ান অনলাইন স্টোর।

প্রাণ গ্রুপের পণ্য বর্তমানে বিশ্বের ১৪৫টি দেশে প্রাণের প্রায় ৫০০ ধরনের পণ্য রফতানি হচ্ছে। রফতানি বাণিজ্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ সরকারের কাছ থেকে পরপর ১৬বার জাতীয় রফতানি ট্রফি অর্জন করেছে।