মাহে রমাদানের ১১ প্রস্তুতি

:: প্রকাশ: ২০২১-০৩-১৯ ১৭:৩৭:৩৫


পবিত্র রমাদানুল কারীম আমাদের একেবারে দোরগোড়ায় চলে এসেছে। আর কয়েকদিন পরই শুরু হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার রহমত, বরকত, মাগফিরাত নাজাতসহ বহুবিধ কল্যাণের মাস রমাদানুল মোবারক।

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ, রমজানুল কারীমকে আমরা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হলে আগে থেকে তার জন্য যথাযোগ্য প্রস্তুতি থাকা দরকার। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভালো প্রস্তুতি মানে কাজটার অর্ধেক পূর্ণতা। যেকোন গুরুত্বপূর্ণ বা বড় কাজ আগে থেকে যদি ভালোভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয় তাহলে সে কাজটি অর্ধেক পরিপূর্ণতায় পৌঁছে যায়। আর যদি প্রস্তুতি যেনতেন থাকে তাহলে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজই পূর্ণতা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। সেজন্য রমজানকে সুন্দরভাবে কাটানোর জন্য আমাদেরকে ভালোভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

বিখ্যাত তাবেয়ী মুয়াল্লা ইবনে ফজল বলেন, সালাফে সালেহীনগণ রমজানের ৬ মাস আগে থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন যেনো রমজান পর্যন্ত তারা হায়াত পান। আর রমজান শেষে বাকি ৬ মাস তারা দোয়া করতেন রমজানে করা আমলগুলো যেনো আল্লাহ কবুল করে নেন।

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ, নবী (সা) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর কোন বান্দা যখন কোনো কাজ করে সে যদি কাজটি উত্তম উপায়ে করে তাহলে সে কাজটা আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা পছন্দ করেন। যেনতেনভাবে কোন কাজ করলে আল্লাহ তাআলা সেটা পছন্দ করেন না।(তাবারী)

সেজন্য রমজানের প্রস্তুতির জন্য ১১টি প্রস্তুতি বা পরামর্শের কথা আপনাদের বলতে চাই, যে প্রস্তুতি গুলো আমাদেরকে সহায়তা করবে রমজান মাসকে সুন্দরভাবে কাটানোর জন্য এবং যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা রমজান দিয়েছেন তথা তাকওয়ার পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য এই ১১ টি পরামর্শ ইনশাআল্লাহ আমাদের কাজে আসবে।

০১. তাওবা -ইস্তেগফার পড়া।

কেউ যদি আল্লাহর কাঠগড়ায় আসামি হয়ে থাকেন আগে থেকে তার নামে মামলা হয়ে থাকে আগে থেকে তিনি দাগি আসামি হয়ে থাকেন তাহলে নতুন করে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন নেক আমলের তাওফিক তার জন্য পাওয়া একটু কঠিন। এজন্য আগের যে অপরাধগুলো আছে রমজান আসলে আল্লাহর কাছে সেগুলোর জন্য তাওবা ইস্তেগফার করে নতুন করে জীবন গড়ার জন্য সংকল্প করতে হবে। এখন থেকে তাওবা এবং ইস্তেগফার করে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

০২. রমজানের ফজিলত সম্পর্কিত আয়াত হাদিস অধ্যয়ন করা।

কুরআন এবং হাদিসে রমজান মাসের যে সকল ফজিলত মর্যাদা এবং করণীয়ের কথা বলা হয়েছে যে সমস্ত উপকারিতার কথা বলা হয়েছে সেগুলো এখন থেকে বেশি বেশি অধ্যয়ন করতে হবে জানতে হবে এবং আলোচনা করতে হবে।

০৩. ক্ষমা এবং সওয়াব লাভের জন্য মানসিকভাবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা।

ক্ষমা এবং সওয়াব লাভের জন্য এখন থেকে মানসিকভাবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা করতে হবে যে, আমি এ রমজান হেলায় কাটাবো না। নবী সা. এর জীবনে ৭ বা ৮ বার রমজান পেয়েছেন, বেশিরভাগ সাহাবী জীবনে ২ থেকে ৮ বার রমজান পেয়েছেন। আমরা একেকজন আলহামদুলিল্লাহ জন্মসূত্রে মুসলিম। আমরা প্রাপ্ত বয়স্ক থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বার রোজা পাচ্ছি। সাহাবায়ে কেরাম জীবনে অল্প কটি রমজান পেয়েও সেগুলোকে এত সুন্দর ব্যবহার করেছেন যে তাদের জীবনে তারা সফল হয়ে গেছেন অথচ আমারা জীবনে ৩০/৪০ টা রমজান পেয়েও সেগুলো সফলভাবে কাটাতে পারিনা। তাই আসুন এ রমজান আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই যে এ রমজান আমি ব্যতিক্রম রমজান কাটাবো, এই রমজানে আমি আমার মালিকে খুশি করবো, আমার নাম যদি জাহান্নামের খাতায় লিপিবদ্ধ হয়েও থাকে তাহলে আমি তা কাটিয়ে ছাড়বো। এই রমজানে আমি জান্নাতিদের খাতায় নাম লিখিয়েই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।

৪. পূর্বের কাজা রোজা আদায় করা

পূর্বের রমজান মাসের কোন রোজা যদি কাজা হয়ে থাকে তাহলে সেগুলো এ শাবান মাসে রাখতে হবে কেননা একটি রমজান আসার আগেই পূর্বের কাজা রোজা গুলো আদায় করতে হয়। মা-বোনদের কাজা রোজা থেকে থাকলে তাদেরকেও এ মাসেই আদায় করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।

৫. নিজেকে ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ত করা

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজান মাসে যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন সেটি পাওয়ার জন্য হাদিসে কয়েকটি শর্ত আছে তন্মধ্যে একটি হলো শিরক মুক্ত হওয়া,আরেকটি হলো হিংসা থেকে মুক্ত হওয়া। এ দুটি কাজ করতে পারলে ইনশাআল্লাহ আপনি রমজান মাসে সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ত হয়ে যাবেন।

৬.  রমজান সম্পর্কিত যে সকল মাসআলা মাসায়েল আছে সেগুলো সম্পর্কে জানা।

৭.  বিগত রমজান গুলোতে যে সকল আমল করতে পারিনি সেগুলো করতে না পারার কারণ চিহ্নিত করে এ বছর রমজানের আগেই সেগুলো থেকে নিজেকে পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে।

৮.  রমজানের যে নেক আলম গুলো আছে সেগুলো এ শাবান মাস থেকে রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে করা শুরু করতে হবে।

৯.  রমজানের মাসের ২৪ ঘন্টার রুটিন করতে হবে। রমজানে আমি যেখানেই থাকিনা কেনো আল্লাহ কে সন্তুষ্ট করতে পারি সেই রুটিন এখন থেকেই করতে হবে।

১০. বর্তমানে চাঁদ দেখার সুন্নত পৃথিবী থেকে বিদায় হওয়ার পথে।তাই আমাদেরকে শাবানের ২৯ তারিখে চাঁদ দেখার জন্য পশ্চিম আকাশে অনুসন্ধান চালাতে হবে।

১১.  রমজানের সকল ধরনের নেক আমল গুলো যেন পরিপূর্ণ ভাবে করা যায় সেজন্য আল্লাহর কাছে এখন থেকে বেশি বেশি করে দোয়া করতে হবে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে এ প্রস্তুতিগুলো সম্পন্ন করে রমজানের রোজাগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুক। আমিন।।