স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে ৬০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৪-০৪ ১১:০৬:৫২


স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তির বছরে ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। ৬ বছর আগে নেওয়া ওই লক্ষ্যমাত্রা থেকে পূর্তির বছরে প্রকৃত রপ্তানির ব্যবধান এখন অনেক কম। চলতি অর্থবছরের গত আট মাসে মাত্র দুই বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। কভিড-১৯সহ বিভিন্ন কারণে প্রতি মাসেই কমছে রপ্তানি। মাসে এখন গড়ে ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এ হারে এগোলে অর্থবছরের বাকি চার মাসে আরও এক হাজার ২০০ কোটি ডলার যুক্ত হতে পারে। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরেও পোশাক খাতের মোট রপ্তানি দাঁড়াতে পারে তিন হাজার ৩০০ কোটি ডলার।

পোশাকের বাইরে অন্যান্য পণ্য মিলে সুবর্ণজয়ন্তীর বছর আরও ১০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। ফলে মোট লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৬০ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের গত আট মাসে পোশাক বহির্ভূত সব খাতের রপ্তানির অর্থমূল্য দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৮৩ কোটি ডলার বা প্রায় আধা বিলিয়ন ডলার। পোশাকের বাইরে অন্যান্য পণ্যেও মাসিক রপ্তানির পরিমাণ গড়ে ৩০ কোটি ডলার। সে হিসাবে আগামী চার মাসে অতিরিক্ত ১২০ কোটি ডলার যুক্ত হতে পারে। বছর শেষে মোট পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৬০০ কোটি ডলারের মতো।

সংশ্নিষ্টরা জানান, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নেয় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের উদ্যোক্তা ও গবেষকদের সঙ্গে বৈঠক করে লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করা এবং তাদের সুপারিশ ও পরামর্শে একটি পথনকশা তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে সংস্থার শীর্ষ এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও রপ্তানি যতটুকু বাড়ানো যায়, সে চেষ্টা থেকে তৈরি পোশাক ছাড়াও সম্ভাবনাময় বড় খাতের উন্নয়নে একটা পথনকশা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তবে যে কোনো কারণেই হোক শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোনো যায়নি।

কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর পর এলো করোনা মহামারি। করোনার কারণে আরও পিছিয়ে পড়েছে রপ্তানি খাত। অন্যদিকে পথনকশা অনুযায়ী রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সব পক্ষ যথাযথ পরিকল্পনা হাতে নেয়নি। কোনো পক্ষই পুরোপুরি তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। তাদের মতে, পথনকশা প্রণয়নেও সবদিক বিবেচনা করা হয়নি। উচ্চমূল্যের পোশাক উৎপাদনের বিষয়টি পথনকশার কোথাও নেই। অথচ দুই ডলারের টি-শার্ট পরিমাণে কয়েক গুণ রপ্তানি করলেও এ লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করা যাবে না। উচ্চমূল্যের পোশাকের পাশাপাশি বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাক উৎপাদনে যেতে হবে।

২০১৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ফ্যাশন সামিটে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে বিজিএমইএ। দুই বছর পর ২০১৬ সালে দ্বিতীয় অ্যাপারেল সামিটে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পথনকশা প্রণয়ন করে বিজিএমইএ। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে করা এ পথনকশায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে ১৮টি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা হয়। এসবের মধ্যে গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দরসহ সহায়ক অবকাঠামো, কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা, দক্ষ শ্রমশক্তি, পণ্যের দর এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়। বহুপক্ষীয় প্রচেষ্টায় এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয় পথনকশায়। এতে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বিজিএমইএ, সরকার, ক্রেতা, উন্নয়ন অংশীদার, ক্রেতা দেশের সরকার, ট্রেড ইউনিয়নসহ মোট ১০ ধরনের অংশীজনের সুনির্দিষ্ট দায়িত্বের কথা বলা হয়। তবে এই পথনকশা অনুযায়ী কাজ এগোয়নি। পথনকশাটি করার সময় বিজিএমইএ সভাপতি ছিলেন এখনকার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। মূল কারিগরদের অন্যতম ছিলেন তখনকার সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম। জানতে চাইলে গতকাল তিনি বলেন, সৎ উদ্দেশ্যে কার্যকর একটি পথনকশা করা হয়েছিল। তবে পথনকশার যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি।

/এ এ