হতাশাকে জয় করে সফল হলেন ফারহানা লিলি
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-০৪-০৪ ১৯:০২:২১
কাজ না থাকলেই নেমে আসে রাজ্যের হতাশা।হাত গুটিয়ে বসে না থেকে নিজের দক্ষতাকে প্রস্ফুটিত করার চেষ্টা করলেই ধরা দেয় সফলতা।এই সফলতায় মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখায়।আর তাই নিজের হতাশাকে দূর করে সফল হওয়ার লক্ষ্যে নিজ হাতে বিভিন্ন রকমের গহণা তৈরির কাজ শুরু করেন ফারহানা লিলি।এই কাজের মাধ্যমেই পেয়েছেন সফলতা।তিনি ময়মনসিংহের মেয়ে থাকেন খুলনায়। ‘সাজুনি বুড়ি’ নামে একটি অনলাইন পেজের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার করে থাকেন।
ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে কিভাবে সফলতার পথে এগিয়ে নিলেন তাই জানিয়েছেন সানবিডি প্রতিনিধিকে।
ফারহানা লিলি বলেন, ‘প্রতিটা নারীর একটা গল্প থাকে সেরকম আমারও একটি গল্প আছে।এই গল্পটি আমকে নিয়েই হয়েছ। আর এই গল্প তৈরী হওয়ার জন্য যে ডিপ্রেশন ছিল তা এখন বড়ই মিস করি। কারন এখন ডিপ্রেশন এ যাওয়ারও সময় নাই। আমি এবং আমার হাজবেন্ড দুজনেই পড়াশুনা করি এবং আমরা ব্যাচমেট। সম্পর্কে আমরা শব্দটা বেশ ভালো যায়,ভালো মানায়। এখানে আমি বা আমার কোন শব্দ নেই। কিন্তু ঐ যে ব্যাচমেট নিজের কাছে লজ্জা লাগে যখন আমার সমবয়সী একটা মানুষ আমাকে আমার বাচ্চাকে দেখাশোনা করছে সাথে আমাদের দুজনের পড়াশুনার খরচ বহন করছে আমি কি করছি? আমি তো তার সাথেই পড়ছি? আমার জীবন রুমে আটকা কেন? ফার্স্ট ইয়ার এ না বুজলেও সেকেন্ড ইয়ার থেকেই আমার রাত যাচ্ছে হতাশায়,লজ্জায়। যদিও আমাকে কোনদিনও বলে নি কিছু কিন্তু নিজের ভেতর থেকে একটা যন্ত্রনা ছিল আমি কেন করি না কিছু? আমার পরিচয় কি? শুধুই কি মেয়ে,মা,বৌ?
তিনি বলেন, ‘হতাশায় যখন মুষড়ে পড়েছিলাম ঠিক সেই মুহুর্তে ২০২০ সালের ১৮ জুন আমি উই এর সন্ধান পাই একজন আপু ইনভাইট করে। এখানে দেখি সবাই কিছু না কিছু করছে । যেটা যার জন্য সহজ…এখন আমি কি করি? আমি শেরপুর এর মেয়ে খুলনায় আমার চেনাজানা কম। বাচ্চা নিয়ে বাহিরে বের হওয়া কঠিন। আর তখন তো করোনায় পুরোপুরি লকডাউন। অনলাইন এ টুকটাক গহনা দেখি। ভালো লাগে কিন্তু ভাবি নি এটা নিয়ে কাজ করবো।
তিনি জানান, ‘সে সময় অনেকের নতুন কিছু বানানো দেখে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগতো আমার কাছে। সময়টা এরকম আমার মাথায় ডিজাইন এর অভাব নেই যেভাবে যা দেখছি গহনায় মনে হচ্ছে এটা আমি পারবো। হঠাৎ মনে হলো আমি তো কিছু কিনে বাসায় বসে বানাতে পারি। সেল হলে ভালো না হলে রয়ে গেল। শুরু তো করি আমি,আল্লাহ ভরসা। এরপর মাত্র ৪৫০ টাকার পণ্য কিনে এনে সেই যে কাজ শুরু হলো এখন পর্যন্ত আমার আর থেমে থাকা নেই। আমি চাইলেও বসে থাকতে পারি না। এন্টিক জুয়েলারি,সিল্ক থ্রেড জুয়েলারি, ফ্লোরাল জুয়েলারি স্পেশালি আমার বেবী জুয়েলারি সেট যা উই এ প্রথম আমি নিয়ে আসি এবং অনেক বেশি সাড়া পাই।মুলত কাঠের গহনা ছাড়া বাকি সব ধরনের গহনা নিয়ে আমার কাজ। ইংল্যান্ড থেকে আমি একটা অর্ডার পাই। আমার এমন কিছু ফিক্সড কাস্টমার আছে যারা কিনা নতুন ড্রেস মানেই সাজুনি বুড়ি এটার সাথে মিলিয়ে দিন। কিংবা আমার প্রোগ্রাম এত তারিখ তার আগে এত সেট দিবেন। আমার এতটা ভালো লাগা ভালোবাসার কাজ এটা যে আমি -৩.৭৫ পাওয়ার চশমা নিয়েও রাত জেগে কাজ করতে কস্ট অনুভব করি না।’
ফারহানা লিলি জানান, ‘উই কে আমি আমার কর্মস্থল বলি। সকাল ১১ টা থেকে পর দিন ভোর ৫টা পর্যন্ত আমি আছি। আমার নাম লিলি যদি ১০০ জন জানে সাজুনি বুড়ি জানে ৩০০ জন। টানা ৯ মাসের প্রাপ্তি এটা আমার।এছাড়া উই এ এখন পর্যন্ত আমার ৪০ টা রিভিউ। সংখ্যায় অল্প হলেও এটা অনেক বেশি পাওয়া কেননা শতকরা রিভিউ দেন ১০জন। নিশার আপু প্রতি আমরা উইবাসী কৃতজ্ঞ।তার এরকম প্লাটফর্ম এর জন্যই আজ হাজার হাজার নারী উদ্যোক্তা। এখন পর্যন্ত ১৭টি ওয়ার্কশপ করি আমি যা থেকে ব্যবসার সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। যে কিছু নাও বুঝে ৩ মাস শুধু পোস্ট পড়েও অনেক কিছু জানতে পারবে।’
তিনি জানান, বর্তমানে তার উদ্যোগের মাধ্যমে আরও দুজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনি লাখ টাকার কাছাকাছি পণ্য সেল করেছেন।ভবিষ্যতে তিনি আরও অনেক লোকের কর্মসংস্থান করতে চান। তার উদ্যোগকে ব্রান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান।যাতে সবাই মানে গহনা মানেই সাজুনি বুড়ি।
সানবিডি/ফাহমিদ জামান