আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-০৪-১২ ০৮:৪০:৩০
ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকপক্ষের নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিনের ঘটনা। যাচাই-বাচাই ছাড়াই প্রতিষ্ঠানগুলো বিতরণ করা ঋণের অধিকাংশই আদায় করতে পারছে না। যার কারণে করোনাকালীন বিশেষ সুবিধা পেয়েও বাড়ছে খেলাপি ঋণ। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলো তারল্যের অভাবে প্রতিনিয়ত দুর্বল হচ্ছে। এ অবস্থায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেখা যায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমান ছিল ৬৬ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা মোট ঋণের ১৫ দশমিক ০২ শতাংশ। এরআগের বছর ২০১৯ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৭ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল ছয় হাজার ৪৪১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের সাড়ে ৯ শতাংশ।
করোনাকালীন বিশেষ সুবিধা পেয়েও গত এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন হাজার ৬১২ কোটি টাকা, অর্থাৎ প্রায় ৩৬ শতাংশ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল পাঁচ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। সেই হিসাবে প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে খারাপ করছে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। তাদের খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এছাড়া করোনার কারণে ঋণ আদায় ব্যাপক কমেছে। বিভিন্ন অনিয়মের খবরে সাধারণ গ্রাহকরা আমানত তুলে নিচ্ছেন। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান তারল্য সংকটে পড়েছে। এদের মধ্যে কমপক্ষে ১০টি প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের সময়মতো টাকা ফেরত দিতে পারছে না। তারল্য সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিলও চেয়েছে।
দেশে প্রথম আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮১ সালে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের হাত ধরে। এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্স দিয়ে থাকে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৪- এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর মতোই ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও রেগুলেটরি বডি হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
দেশে বর্তমানে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এছাড়া গত বছর স্ট্র্যাটেজি ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট নামে নতুন আরও একটি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডের (এমএফএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুই কারণে মন্দ ঋণ বাড়ে। এর একটি কারণ হলো ঋণ দেওয়ার পর তা তুলতে ব্যর্থ হলে আর দ্বিতীয়টি হলো দেশের ব্যবসা বাণিজ্য খারাপ হলে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এমন কোন অবস্থা তৈরি হয়নি, যে মন্দ ঋণের পরিমাণ এতো বেড়ে যাবে। আমার মনে হয় যে, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের খারাপ অবস্থা তাদের মন্দ ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। যার নেতিবাচক প্রভাব পুরো খাতের উপর পড়েছে।
অন্যদিকে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, ব্যবসা বাণিজ্য ঠিক রাখার জন্য সরকার অনেক সুযোগ দিয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থা না হওয়া পর্যন্ত মন্দ ঋণের আসল হিসাব পাওয়া যাবে না। ব্যবসা বাণিজ্য চলমান রাখার জন্য অনেক গ্রাহককে চাপ দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে মন্দ ঋণের অবস্থা এমন মনে হচ্ছে।