খুলনায় অলিগলিতে চলছে ক্ষুদ্র যান, শহরে কঠোর লকডাউন
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৪-১৫ ১২:২৬:১৩
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধে লকডাউনের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবারও (১৫ এপ্রিল) ফাঁকা রয়েছে খুলনা মহানগরী।
তবে, বিধিনিষেধের আওতামুক্ত কিছু ওষুধ ও মুদি দোকান ছাড়া বন্ধ রয়েছে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দূর পাল্লার যানবাহন।
এদিকে, পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে রিকশা ও ইজিবাইকসহ কিছু কিছু ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে, শহরে কঠোর লকডাউন প্রতিপালনে মাঠে রয়েছে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং র্যা ব-পুলিশসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) লকডাউনের দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত দেখা যায়, খুলনা মহানগরীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা শিববাড়ির মোড়ের দু’পাশই প্রায় ফাঁকা। চলাচল করছে দু’একটি রিকশা ও ভ্যান, যার যাত্রীরা জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়েছেন।
নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের একটি শোরুমের মালিক মোফাস্সিল আলম বলেন, সরকারের বিধিনিষেধ অনুযায়ী আমরা আমাদের শোরুম বন্ধ রেখেছি। যদি খোলার নির্দেশনা পাই তখন খুলবো।
শিববাড়ি মোড়ের চায়ের দোকানদার পাইলট বলেন, রোজা শুরু হইছে এমনিতেই বেচাকেনা নাই। এরপরে আবার লকডাউন, তাই দোকান বন্ধ রাখছি।
রিকশাচালক মোঃ মনির বলেন, রোজা আর লকডাউন দু’টো মিলিয়েই মানুষ নেই রাস্তায়। আমি বের হইছি পেটের দায়ে। সরকার আমাদের ভাত দিয়ে এরপরে লকডাউন দিক, তাহলে আমরা আর বের হবো না।
এদিকে, লকডাউন বাস্তবায়নে মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ সদস্যরা। টহল দিচ্ছেন পুলিশের ভ্রাম্যমাণ দল। বিধি ভেঙে রাস্তায় বেরোলেই জবাবদিহি করতে হচ্ছে পুলিশের কাছে। বন্ধ রয়েছে নগরীর সব অফিস-আদালত। তবে চালু রয়েছে জরুরি সেবা কার্যক্রম। পায়ে হেটে অথবা নিজস্ব পরিবহনে চলাচল করছেন জরুরি সেবার কর্মীরা।
লকডাউনে ৮৫ মামলা, ৫৪ হাজার টাকা জরিমানা:
এদিকে, লকডাউনের প্রথমদিন (১৪ এপ্রিল) কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। এদিন খুলনা জেলাজুড়ে অভিযান পরিচালনা করে ৮৫টি মামলায় ৫৪ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ বসাক।
জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেলের সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের নির্দেশে এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইউসুপ আলীর তত্ত্বাবধানে খুলনা জেলায় কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকল্পে অভিযান পরিচালিত হয়। খুলনা মহানগরে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে দিনব্যাপী মোট ৮টি টিম অভিযান পরিচালনা করে ৩৭ মামলায় ২৮ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া উপজেলাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করেন জেলার স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনাররা (ভূমি)।
এসব অভিযানে উপজেলায় মোট ৪৮ মামলায় ২৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ এবং ‘দণ্ডবিধি, ১৮৬০’ এর সংশ্লিষ্ট ধারার বিধান মোতাবেক অর্থদণ্ড প্রদান করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটরা। এসময় সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের আহ্বান জানানো হয় এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে প্রচারণা চালানো হয়।
খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ বসাক বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিতকরণে জেলা প্রশাসনের এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গত, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে আরোপ করা ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ দিয়ে বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। লকডাউনের জন্য ১৪-২১ এপ্রিল পর্যন্ত চলাচলের সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকবে।