আড়াই বছর ধরে চাহিদা কমছে * আট মাসে যন্ত্রপাতির এলসি ২৪.৩৩ শতাংশ, আমদানি কমেছে ৩৬.৭৭ শতাংশ
করোনায় শিল্পখাতের উপকরণ আমদানিতে বিপর্যয়
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-০৪-২০ ০৯:৪৫:৪১
করোনাভাইরাসের প্রভাবে শিল্পখাতে সার্বিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে সব ধরনের শিল্পের উপকরণ আমদানিতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। নতুন শিল্প স্থাপন বা পুরোনো শিল্প আধুনিকায়নে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, শিল্পপণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য থেকে পূর্ণাঙ্গ পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ বেশ কমে গেছে।
এতে একদিকে নতুন শিল্প স্থাপনের গতি কমে গেছে। অন্যদিকে চাহিদা কম থাকায় চলমান শিল্পগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি একাধিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলার হার কমেছে ২৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। একই সময়ে আমদানি কমেছে ৩৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা কমেছিল শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ। আমদানি কমেছিল ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। পুরো অর্থবছরে গড়ে আমদানি কমেছিল ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে আমদানি কমেছিল ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে কমছে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণ। এতে নতুন শিল্প স্থাপনের গতি ও চালু শিল্প আধুনিকায়নের গতি কমে গেছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই শিল্পখাতে মন্দা যাচ্ছে। এর প্রভাবেই শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। বিদেশি বিনিয়োগ যেমন কম হচ্ছে, তেমনি দেশি বিনিয়োগও আসছে কম।
বিদেশি বিনিয়োগ আসে দেশি বিনিয়োগকারীদের হাত ধরে। দেশি বিনিয়োগকারীরা এখন হাত গুটিয়ে বসে আছেন। আবার বিদেশি বিনিয়োগ এলে এর সম্পূরক হিসাবে দেশি বিনিয়োগ বাড়ে। বিনিয়োগ না-বাড়ায় শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। এতে নতুন শিল্প স্থাপন কম হচ্ছে। ফলে কমেছে নতুন কর্মসংস্থান।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। শুধু দেশি বিনিয়োগ বাড়ালে হবে না। বিদেশি বিনিয়োগও বাড়াতে হবে। দুটির সমন্বয়ে শিল্পখাতের বিকাশ ঘটবে।
প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। একই সময়ে এলসি খোলা বেড়েছে ৫ দশমিক ০৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা কমেছিল ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। আমদানি বেড়েছিল ১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
কিন্তু পুরো অর্থবছরের হিসাবে এ খাতের আমদানি কমেছিল ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন শিল্প স্থাপন ও চালু শিল্প আধুনিকায়ন কম হওয়ায় শিল্পের কাঁচামালের চাহিদা কমেছে। এ ছাড়া করোনার কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমায় পণ্য বিক্রি কম হচ্ছে। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পুরো সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছে না।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা বেড়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। একই সময়ে আমদানি কমেছে ১৪ দশমিক ০৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে আমদানি কমেছিল ১৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক শিল্প মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানি করে তা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ পণ্য তৈরি করে। এ খাতের শিল্পগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না চাহিদা কমার কারণে।
সূত্র জানায়, রপ্তানিমুখী শিল্পগুলো ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি করে। সেগুলো দিয়ে পণ্য তৈরির পর রপ্তানি করে। গত দুই অর্থবছর ধরে এ খাতের কাঁচামাল আমদানিতেও মন্দা চলছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আমদানি কমেছে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা কমেছিল ৭ দশমিক ০২ শতাংশ এবং আমদানি কমেছিল ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কারখানার সক্ষমতার ৭০-৭৫ শতাংশ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। অর্র্ডার কম হওয়ায় সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করা যাচ্ছে না। যে কারণে ব্যাংক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানিও কমেছে।