বোরো ধানের মিষ্টি গন্ধে মাতোয়ারা কৃষক-কৃষাণি

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৪-২৩ ১৪:৪৪:৫৩


গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমেও বোরোর সোনালি ধানের মিষ্টি গন্ধে মাতোয়ারা বাংলার জনপদের কৃষক। তারা আনন্দের সাথে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করেছেন। ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষাণ-কৃষাণির।বেশ উৎফুল্লতার সাথে ধান কাটা-মাড়াই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে এ পর্যন্ত মাত্র ১০ শতাংশ ধান কাটার কাজ শেষ হয়েছে।

আগামী ১০/১৫ দিনের মধ্যে ৮০ ভাগ ধান কাটা শেষ হবে। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। এদিকে সুখবর জানাচ্ছেন যশোর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হওয়ায় এবছর যশোর অঞ্চলের ইরি-বোরো ফলনেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। যশোর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জাহিদুল আমিন বলেন যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা,কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর সহ এই ছয় জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৫৩ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমি। তবে তা ছাড়িয়ে গিয়ে আবাদ হয়েছে তিন লাখ ৬৭ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমিতে।

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ হাজার ১৮১ হেক্টর বেশি জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে যশোর জেলায় হাইব্রিড ধান ২৭ হাজার ৫৪৫ হেক্টর ও উচ্চ ফলনশীল ধান এক লাখ ৩০ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলায় হাইব্রিড ধান ৮ হাজার ২১৭ হেক্টর ও উচ্চ ফলনশীল ধান ৭২ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। মাগুরা জেলায় হাইব্রিড ধান ৭ হাজার ৫৮০ হেক্টর ও উচ্চ ফলনশীল ধান ৩২ হাজার ২৪১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলায় হাইব্রিড ধান ৪ হাজার ৬৯৫ হেক্টর ও উচ্চ ফলনশীল ধান ৩০ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

চুয়াডঙ্গা জেলায় হাইব্রিড ধান ২ হাজার ৪৬১ হেক্টর ও উচ্চ ফলনশীল ধান ৩৩ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে এবং মেহেরপুর জেলায় হাইব্রিড ধান ১ হাজার ৫৮০ হেক্টর ও উচ্চ ফলনশীল ধান ১৭ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। জাহিদুল আমিন আরো জানান গত কাল বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল ২০২১) পর্যন্ত আবাদ হওয়া মোট জমির ১০ শতাংশ ফসল কাটা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে ফসল কাটার কাজ সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন এ মৌসুমে একদিনের ঝড়ে আবাদী ফসলের সামন্য ক্ষতি হয়েছে। তারপরও ফসল ভাল হয়েছে। এবছর চালের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯৮৩ মেট্রিকটন। ধান কেটে ঘরে তোলার আগে যদি শিলাবৃষ্টি না হয় তবে উৎপাদন ছাড়িয়ে উদ্বৃত্ত হবে বলে মনে করছেন এই কর্মকর্তা। এদিকে স্বচ্ছলতার হাসি নিয়ে কৃষাণ- কৃষাণির দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে মাঠের সোনালী ফসল ঘরে আসতে শুরু করেছে। তাদের আঙিনা ভরে উঠেছে সোনালি শস্যে। মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। ফসলের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে সারা বাড়ি।

উঠোনে ছড়ানো সোনালী ধান। সাথে আনন্দেওর বন্যা। ঘরে ঘরে উৎসব। তাই ব্যস্ততার মধ্যে কাটছে তাদের দিনরাত। যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর গ্রামের কৃষক বাবলু বলেন দেড় বিঘা জমিতে চিকন জাতের (২৮) হাইব্রিড ধান আবাদ করেছিলাম। ফলন বেশ ভাল হয়েছে। ধান কাটা হয়েছে। এখন বাড়িতে আনার অপেক্ষা। কাঠায় দেড় মণ করে ধান পাবেন বলে তিনি জানান। একই গ্রামের মোক্তার হোসেন জানান আবহাওয়া অনুকুল থাকায় এবছর বোরোর ফলন বেশ ভালো হয়েছে।

তিনি প্রায় এক একর জমিতে চিকন জাতের (২৮) হাইব্রিড ধান চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে ধান কাটা শুরু করেছেন। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব ধান ঘরে চলে আসবে বলে তিনি জানান।