জেরুজালেমে রাতভর ত্রিমুখী সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত শতাধিক, গ্রেফতার ৫০
আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-০৪-২৪ ১০:৪৪:৩৩
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পূর্ব জেরুসালেমে উগ্রপন্থী ইসরাইলিদের পদযাত্রার জেরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাতে উগ্রপন্থী ইসরাইলিদের এই পদযাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলিদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনায় ৫০ জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে ইসরাইলি পুলিশ।
এদিকে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত এক শ’ পাঁচজন আহত ফিলিস্তিনিকে তারা চিকিৎসা দিয়েছে। এর মধ্যে ২০ জনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপরদিকে ইসরাইলি পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষে তাদের ২০ সদস্য আহত হয়েছে এবং এর মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ইসরাইলি উগ্রপন্থী সংগঠন লেহভার আয়োজনে পূর্ব জেরুসালেমের পুরনো দুর্গ শহরের দামিশক গেটের কাছে পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। এই পদযাত্রায় অংশ নেয়া ইসরাইলিরা ‘আরবরা মুর্দাবাদ’ স্লোগান দেয় এবং ফিলিস্তিনিদের হয়রানি করে।
উগ্র ইসরাইলিদের এই পদযাত্রার খবর শুনে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি দামিশক গেটের কাছে জড়ো হয়। এই সময় তারা পদযাত্রায় অংশ নেয়া ইসরাইলিদের আচরণের প্রতিবাদ করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলিদের মধ্যে এই সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জামে সজ্জ্বিত কয়েক শ’ ইসরাইলি পুলিশকে মোতায়েন করা হয়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে তারা জলকামান ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে।
এই সময় তারা পদযাত্রায় অংশ নেয়া ইসরাইলিদের ফিলিস্তিনিদের থেকে দূরে সরিয়ে ইহুদি অধ্যুষিত পশ্চিম জেরুসালেমের দিকে ঠেলে দেয়।
ফিলিস্তিনিরা তাদের দিক থেকে ইসরাইলি পুলিশকে বাধা দেয়ার জন্য আবর্জনার স্তুপ জমা করে এবং কিছু জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এছাড়া কেউ কেউ ফিলিস্তিনিদের আক্রমণ করতে আসা উগ্র ইসরাইলি নাগরিক ও ইসরাইলি পুলিশকে ছত্রভঙ্গ করতে আতশবাজি নিক্ষেপ করে।
ইসরাইলি পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়, সংঘর্ষের ঘটনায় তারা ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে তারা কী ফিলিস্তিনি না ইসরাইলি এই সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত বলা হয়নি।
ফিলিস্তিনিরা অভিযোগ করছেন, ১৩ এপ্রিল রমজান শুরু হওয়ার পর থেকেই ইসরাইলি পুলিশ পুরনো দুর্গ শহরের দেয়ালের ধারের পায়চারির স্থানে তাদের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে।
জেরুসালেমের বাসিন্দা মোহাম্মদ আবুল হামুস সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেন, ‘মসজিদুল আকসায় মাগরিব নামাজের পর ফিলিস্তিনিরা এখানে আরাম করতে ভালোবাসেন, কিন্তু দখলদাররা তা পছন্দ করে না। এটি সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন।’
জেরুসালেমে সংঘর্ষের ঘটনায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের দফতর নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে ‘উগ্র ইসরাইলি বসতিস্থাপনকারী দলগুলোর ক্রমেই বাড়তে থাকা উস্কানির’ নিন্দা জানানো হয় এবং ‘বসতি স্থাপনকারীদের চলে আসা হামলা থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষায়’ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানানো হয়।
এতে আরো বলা হয়, ‘পূর্ব জেরুসালেম ফিলিস্তিনের চিরস্থায়ী রাজধানী এবং তা অলঙ্ঘনীয় সীমারেখা।’
অপরদিকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, মসজিদুল আকসার বিরুদ্ধে এটি ইসরাইলি এক ষড়যন্ত্র।
জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস সংঘর্ষের ঘটনায় ইংরেজি, আরবি ও হিব্রুতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, ‘আমরা আশা করি, সকল দায়িত্বশীল কণ্ঠ এই উস্কানির অবসান, শান্তিতে ফিরে আসা এবং জেরুসালেমের সকলের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সম্মানের বিষয়ে প্রচার করবে।’
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ইসরাইল মসজিদুল আকসাসহ পূর্ব জেরুসালেম দখল করে নেয়। ১৯৮০ সালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরোধিতা উপেক্ষা করে শহরটিকে ইসরাইলের ভেতর একীভূত করে একে দেশটির রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে।
সূত্র : আলজাজিরা
সানবিডি/এএ