মাগুরায় পৃষ্টপোষকতার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎশিল্প
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৪-২৪ ১৪:৩৭:৩৮
আধুনিক যুগ ও কালের বিবর্তনে জ্বালানী কাঠের সূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় নানা সমস্যায় হাবুডুবু খেয়ে হারিয়ে যাছে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার নহাটা গ্রামের সেই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সংকটের মুখে পড়েছে শিল্পটি।
তারপরও পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছে অনেকেই। শ্রীপুর উপজেলার পালপাড়া যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা একটি স্বর্ণালি ছবি। উপজেলা সহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য কুটিরে নয়নাভিরাশি, যা সহজেই যে কারও মনকে পুলকিত করে। সময় এ গ্রামগুলো মৃৎশিল্পের! বিখ্যাত ছিল।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নতুন নতুন শিল্প সামগ্রীর প্রসারের কারণে এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুকূল বাজারের অভাবে এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
প্রাচীনকাল থেকে ধর্মীয় এবং অর্থসামাজিক কারণে মৃৎশিল্পে শ্রেণিভুক্ত সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা মৃৎশিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। তবে বর্তমান শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাজার গুলোতে এখন আর আগের মতো মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাষ্টিকের তৈজসপত্র। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সাথে নিচ্ছে না। তাদের চাহিদা নির্ভর করে ক্রেতাদের ওপর।
সে কারণে অনেক পুরনো শিল্পীরাও পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাটির জিনিসপত্র তার পুরনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দুঃখ-কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও মৃৎশিল্পীরা এখনো স্বপ্ন দেখেন। কোনো একদিন আবারও কদর বাড়বে মাটির পণ্যের। সেদিন হয়তো আবারও তাদের পরিবারে ফিরে আসবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।
শ্রীপুর পজেলার নহাটা গ্রামের নিমাইপদ পাল বলেন, বাপ-দাদার কাছে শেখা আমাদের এই জাত ব্যবসা আজও আমরা ধরে রেখেছি। শ্রীপুরে শতাধিক পাল পরিবার বসবাস করে।শ্রীপুর বাজারসহ আশপাশের এলাকায় এক সময় মাটির তৈরি জিনিসের ব্যাপক চাহিদা ছিল কিন্তু বর্তমানে বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে পড়েছে শিল্পটি। আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিল্পীদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারলে মৃৎশিল্পের বিদেশে বাজার তৈরি করা সম্ভব। উপজেলা ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃৎশিল্পের প্রসারের জন্য প্রশিক্ষণের ও আর্থিক সহায়তা করা দরকার।