মুনিয়ার মৃত্যু নিয়ে রহস্যের ধুম্রজাল
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৪-৩০ ১১:৩৯:৫১
আলোচিত মুনিয়ার মৃত্যু নিয়ে রহস্যের ধুম্রজাল তৈরি হয়েছে। মা বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের সাথে দূরত্ব ও হতাশা ছিলো দীর্ঘদিনের। লাশ উদ্ধারের সময় পরিবার তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখেছিলো। বাসার দরজার তালা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
নিহত মোসারাত জাহান মুনিয়ার পারিবারিক সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে কুমিল্লা নগরীতে জন্ম তার। গুলবাগিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মুনিয়া। কুমিল্লা মর্ডান স্কুল থেকে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়ে চলে যান ঢাকায়। মিরপুর থেকে ২০১৮ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে। ২০২০ সালে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের কথা ছিলো।
মুনিয়ার বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ জানান, আমার বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. শফিকুর রহমান পেশায় ঠিকাদার ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। মা সেতারা বেগম ছিলেন ব্যাংক অফিসার । ২০১৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বাবা ও ২০১৮ সালের ১২ জুন মা মারা যায়। মা-বাবার মৃত্যুর পর আমার ছোট দুই বোনের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। জমি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে কয়েক বছর কথা বন্ধ।
মুনিয়ার সাথে আমার বোন নুসরাতের যোগাযোগ ছিলো। মুনিয়া কোথায় থাকে, কোথায় পড়ে আমি কিছুই জানি না। তাকে হত্যা করা হয়েছে। সে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে নয়। আমি বোন হত্যার বিচার চাই।
মামলার বাদী নিহত মুনিয়ার বড় বোন ব্যাংক কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, ঢাকায় মুনিয়ার পড়ার খরচ আমি দিতাম। আনভীরের সাথে তার কিভাবে পরিচয় তা আমরা জানি না। সে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতো। ফেব্রুয়ারি মাসে আনভির তাকে ঢাকা নিয়ে যায়। বাসা ঠিক করে দেয়। আনভির তাকে এমন ভাবে ফুসলিয়েছে, মুনিয়া আমার নিষেধ অমান্য করে আনভিরের ভাড়া বাসায় চলে যায়। সম্পর্কের বিষয়ে যখন আমরা জেনেছি, তাকে নিষেধ করেছি। সে আমাদের কথা শুনেনি।
আনভির তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, বিয়ে করে দেশের বাইরে রাখবে। হত্যা নাকি আত্মহত্যা এমন প্রশ্নে নুসরাত জাহান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। যে দিন সে মারা যায়, তার সাথে রাতে ও সকালে কথা হয়েছিলো। মুনিয়া বলেছে, আপু আমি বিপদে আছি, তোমরা ঢাকায় আসো। সর্বশেষ দিনের ১১টায় তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়। ২টায় কুমিল্লা থেকে রওয়া দিয়ে কল দিয়ে ফোন বন্ধ পাই। ৫ টায় তার বাসায় গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ। দরজা ভেঙ্গে বাসায় প্রবেশ করে দেখি তার লাশ। দরজাটি অটোতালা ছিলো। তার গলায় ও বাম হাতে আঘাতের চিহ্ন ছিলো।
প্রসঙ্গত, সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া বাদি হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।