ঈদে আসছে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৪-৩০ ২২:৩০:৪৫
মহামারি করোনার সংক্রমণ রোধে আসন্ন রোজার ঈদেও সর্বসাধারণের মাঝে নতুন ও খুচরা টাকা বিনিময়ের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না। তবে এবার রোজা ও ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটায় গ্রাহকদের বাড়তি চাহিদার কথা বিবেচনায় নতুন-পুরনো মিলে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ছোট-বড় মূল্যমান মিলে একেবারে নতুন নোট রয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা।
লকডাউন শুরুর আগে থেকেই এই টাকা বাজারে ছাড়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের যাঁরা গ্রাহক, তাঁরা লেনদেনের সময় নতুন টাকা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এ ছাড়া এটিএম বুথেও মিলছে নতুন টাকা। এদিকে ঈদের আগে নগদ টাকার চাহিদা বাড়তে শুরু করায় আন্ত ব্যাংক কলমানি বাজারে লেনদেনও বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এবার নতুন-পুরনো মিলে ৩৫ হাজার কোটি টাকা প্রস্তুতি রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকাই নতুন নোট। বাকি টাকা ঈদের আগেই চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ছাড়া হবে।’ বিশেষ ব্যবস্থায় এবার নতুন টাকা জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তে যাব না। বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য পুরো জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হোক সেটা আমরা চাই না। তাই যা হবে ব্যাংকের মাধ্যমেই করা হবে।’
জানা যায়, দ্বিতীয় দফার করোনার সংক্রমণ রোধে গত ৫ এপ্রিল থেকে প্রথম ৯ দিন সরকারি বিধি-নিষেধের পর ১৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে টানা লকডাউন চলছে। দেশ আবার লকডাউনে যাচ্ছে—এমন খবরে ওই সময় নগদ টাকার চাহিদা অনেক বেড়ে গিয়েছিল এবং আকস্মিকভাবে অনেক টাকা ব্যাংকের বাইরে তথা জনগণের হাতে চলে যায়। যার কারণে ঈদের প্রস্তুতি হিবেসে রাখা নতুন টাকা ওই সময় থেকেই বাজারে ছাড়তে বাধ্য হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এখন পর্যন্ত হিসাবে ১৫-২০ হাজার কোটি টাকা বাজারে চলে গেছে। ঈদের আগে নগদ টাকার চাহিদা আরো বাড়বে। ফলে প্রস্তুতি হিসেবে রাখা বাকি সব টাকাই ঈদের আগেই বাজারে ছাড়তে হবে।
জানা গেছে, সারা বছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বিভিন্ন মূল্যমানের নোট প্রয়োজন হয়। এর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ প্রয়োজন হয় দুই ঈদে। তবে এবার করোনার সংকটের কারণে এবার নগদ টাকার চাহিদা বেশি হচ্ছে। ঈদের আগে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন টাকা বাজারে এলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়বে কি না, জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা বলেন, সে রকম কোনো চাপ পড়বে না। কারণ ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল বন্ড অকশন করে বা বন্ড বিক্রি করে এই টাকা নেবে। তা ছাড়া এই টাকা খুবই শর্টটাইমের। ১৫ দিন পরেই বাংলাদেশ ব্যাংক তুলে নেবে। যার কারণে এটার খুব বড় ধরনের প্রভাব নেই।
এদিকে লকডাউনের কারণে এ মাসের শুরু থেকেই ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলার চাপ বেড়েছে। মাঝখানে কয়েক দিন সেই চাপ কিছুটা কমার পর ঈদের কারণে আবার বাড়তে শুরু করেছে। ফলে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলো আন্ত ব্যাংক কলমানি বাজার থেকে অর্থ ধার করছে। এতে তিন দিন ধরে এই বাজারে লেনদেন আবার বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার আন্ত ব্যাংক কলমানি বাজারে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস বুধবার যার পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। তার আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার হয়েছিল তিন হাজার ১৬৪ কোটি টাকার। তবে লেনদেন বাড়লেও এই বাজারের সুদহার দীর্ঘদিন ধরেই সোয়া ৫ শতাংশেই স্থিতিশীল রয়েছে।
সানবিডি/এএ