রিজার্ভে নতুন রেকর্ড:৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২১-০৫-০৩ ২০:১১:১৭
করোনার মধ্যেও নতুন রেকর্ড করলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। প্রথম বারের মতো রিজার্ভ হলো ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারের। মঙ্গলবার (৪ মে) দিন শেষে রিজার্ভের পরিমান দাঁড়ায় ৪৫.১০ বিলিয়ন ডলার। যা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৪৫ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে বলে সানবিডিকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান
প্রসঙ্গত, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে আগামী ১২ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। জানা গেছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের সঙ্গে রফতানি আয় বেড়েছে। এ কারণে রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
৪৫ বিলিয়ন ডলারে ফেরিয়ে বাংলাদেশের রিজার্ভ। এ প্রসঙ্গে পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর ডিস্টিঙ্গুইসড ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিনিয়োগের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি হচ্ছে না বললেই চলে, তার প্রভাব পড়ছে রিজার্ভে। শুধু রিজার্ভ বাড়লেই সামস্টিক অর্থনীতি (ম্যাক্রো ইকনোমি) স্থিতিশীল থাকবে এটা বলা ঠিক নয়। বরং বিনিয়োগ কিভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।
অন্যদিকে পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মানসুর বলেন, করোনার কারণে বিদেশে বেড়াতে যাওয়া বন্ধ। এছাড়া সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এমনকি ভারতের চিকিৎসা নিতেও যেতে পারছেন না অনেকে। এসবের প্রভাবে ব্যাপক পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে না, যার প্রভাবে বাড়ছে রিজার্ভ।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২ এপ্রিল দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৪.৯৫ বিলিয়ন বা চার হাজার ৪৯৭ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ তিন লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে মজুত এ বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে প্রায় ১১ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
এর আগে চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৪.০২ বিলিয়ন বা চার হাজার ৪০২ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। এরও আগে ৩০ ডিসেম্বর দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার, ১৫ ডিসেম্বর ৪২ মিলিয়ন এবং ২৮ অক্টোবর রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন অতিক্রম করেছিল।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসছে। রফতানিও বেড়েছে। এছাড়া আমদানি ব্যয়ের চাপ কম, দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাইকার বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ও বিশ্ব সংস্থার অনুদানের কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। তবে সামনে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধ করলে রিজার্ভ আবার কিছুটা কমে যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির মধ্যেও চলতি অর্থবছরের ১০ মাস পার না হতেই রেমিট্যান্স দুই হাজার কোটি (২০ বিলিয়ন) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি বাংলাদেশে। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলের প্রবাসীরা। অর্থবছর হিসাবে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের রেকর্ড হয়। ওই সময় এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে এর সঙ্গে আরও দুই টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী। এছাড়া ঈদ ও উৎসবে বিভিন্ন ব্যাংক এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি এক শতাংশ দেওয়ার অফার দিচ্ছে। এতে করে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা।