সভাপতি পদ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারে হট্টগোল, সভা মুলতবি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৫-০৫ ১০:৩৬:৪২


সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে নতুন করে কাকে নির্বাচিত করা হবে তা নিয়ে হট্টগোল হয়েছে। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।

মঙ্গলবার (৪ মে) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে।

আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীদের দাবি কণ্ঠভোটে বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। অন্যদিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দাবি, হট্টগোল হওয়ায় সাধারণ সভা মুলতবি করা হয়। কাউকে সভাপতি পদে নির্বাচিত করা হয়নি।

সভায় অংশ নেয়া প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জানা যায়, শুরুতে সাধারণ সভার সভাপতিত্ব নিয়ে আওয়ামী এবং বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। এ অবস্থায় সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ঘোষণা দেন- ‘বারের সংবিধান অনুযায়ী আমি এ সভা পরিচালনা করব।’

তখন এক পক্ষ বিরোধিতা শুরু করলে আওয়ামীপন্থী আইনজীবী, বারের নির্বাচিত সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্লাহ দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন তিনি সভার সভাপতিত্ব করবেন।

তখন বিএনপিপন্থী আইনজীবী রুহুল কুদ্দস কাজল বলেন, ‘উনাকে (শফিক উল্লাহ) সভাপতিত্ব করার কোনো কার্যবিবরণী পাস হয়নি। সিনিয়র আরেকজন সহ-সভাপতি আছেন।’

এ সময় শফিক উল্লাহ বলেন, ‘আমি আজকের সভার সভাপতি। এই সভা থেকে ঘোষণা করছি, আজ থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন।’ তখন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা তাকে সমর্থন দেন।

এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে থাকেন। তারা চিৎকার করে বলতে থাকেন-‘কণ্ঠ ভোট নয়, নির্বাচন চাই’। এক পর্যায়ে মিলনায়তনের বৈদ্যুতিক সংযোগ ও মাইকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। মঞ্চের ওপর ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে পদটি শূন্য হয়। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিশেষ সাধারণ সভা ডেকে পরবর্তী সভাপতি নির্বাচিত করার বিধান রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বারের আর্টিকেল ১৬-তে আছে, যদি কোনো কারণে পদ শূন্য হয়। সভাপতি পদত্যাগ করেন বা পদচ্যুত করা হয়, কিংবা মারা যান, তাহলে বিশেষ সাধারণ সভার মাধ্যমে নতুন একজন সভাপতি নির্বাচিত হবেন। সেই বিশেষ সাধারণ সভায় সভাপতি কিভাবে নির্বাচিত হবেন তা নির্ধারণ করা হবে। আমি শুনতে পেলাম যে, আজকে বিশেষ সাধারণ সভায় ওনারা আমার নাম প্রস্তাব করেছেন। সেখানে অন্য কোনো নাম না-কি প্রস্তাব হয়নি। আমি এখনও রেজুলেশন পাইনি। রেজুলেশন পাওয়ার পর বিস্তারিত জানতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুর কারণে বারের সভাপতি পদ যে শূন্য হয়েছে, বারের সাধারণ সদস্যরা মনে করছেন আমার মাধ্যমে বারের দাবিটা হয়তো পূরণ হবে। সেই কারণে ওনারা হয়তো আমার নাম প্রস্তাব করেছেন।’

অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দস কাজল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত ছাড়াই পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাধারণ সভা মুলতবি ঘোষণা করা হলো।

বিএনপিপন্থী আইনজীবী রুহুল কুদ্দস কাজল বলেন, ‘আজকের সাধারণ সভার এজেন্ডা ছিল নির্বাচনের পদ্ধতি কি হবে তা নিয়ে। আমি এই সভার সম্পাদক হিসেবে সভা পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলাম। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম, সাধারণ সভার জন্য যে ব্যানার করা হয়েছিল, সেটি টানানো হয়। কিন্তু সভার শুরুতে দেখি ভিন্ন একটি ব্যানার। যেখানে সভার সভাপতিত্ব করার জন্য একজন সহ-সভাপতির নাম রয়েছে। সভার শুরুতে কে সভাপতিত্ব করবেন সিনিয়র সহ-সভাপতি না-কি সহ-সভাপতি এ বিষয়ে যখন আমি ব্যাখ্যা দিচ্ছিলাম। তখন আইনজীবীদের মধ্য থেকে কেউ কেউ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তখন সভা পরিচালনা করা সাধ্য ছিল না। সভা মুলতবি করতে বাধ্য হই। আজকে সভায় কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই মুলতবি করা হয়।’

২০২১-২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের সাদা প্যানেল থেকে সভাপতি পদে নির্বাচিত হন আবদুল মতিন খসরু। নির্বাচনে বিজয় হলেও দায়িত্ব নেয়ার আগেই তিনি করোনা আক্রান্ত হন। এরপর গত ১৪ এপ্রিল মারা যান। তারপরই পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এরপরই নতুন করে সভাপতি নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় আসে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনে ১৪ পদের মধ্যে সভাপতিসহ ৮টিতে আওয়ামী আইনজীবীদের সাদা প্যানেল এবং সম্পাদকসহ ছয়টি পদে বিএনপিপন্থী নীল প্যানেল জয়লাভ করে।

সানবিডি/এএ