রোহিঙ্গাদের জন্য প্রথম দিনেই এক-তৃতীয়াংশ তহবিল সংগ্রহ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৫-১৮ ১৯:৫৪:০৬


রোহিঙ্গাদের জন্য চতুর্থবারের মতো ৯৪ কোটি ডলারের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান- জেআরপি ভার্চুয়ালি ঘোষণার প্রথম দিনেই ৩৬ কোটি ডলার তহবিল জোগাড় করা সম্ভব হয়েছে, যা মোট অর্থের এক-তৃতীয়াংশ।

মঙ্গলবার (১৮ মে) চতুর্থবারের মতো ৯৪ কোটি ডলারের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান- জেআরপি ভার্চুয়ালি ঘোষণা করা হয়।

জেআরপি ঘোষণার সময় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়া তহবিলে প্রায় ২১ কোটি ডলার যোগান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া কানাডাসহ কয়েকটি দেশ আগেই তহবিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যে অর্থ যোগাড় করা হবে তার পুরোটাই জাতিসংঘ ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে খরচ করা হবে। এই সংস্থাগুলো যেন সুষ্ঠুভাবে তহবিল খরচ করতে পারে, সেজন্য বাংলাদেশ নিজেদের অর্থে সব ব্যবস্থা করবে।

উল্লেখ্য, গত বছর জেআরপির পরিমাণ ছিল ১০০ কোটি ডলার, কিন্তু এরমধ্যে ৬১ কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহ করা গিয়েছিল।

জেআরপি ঘোষণা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন,‘প্রতি জেআরপি ঘোষণার সময়ে আমরা আশা করি, এটাই শেষ ঘোষণা হবে। কিন্তু সমস্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে আবারও আরেকটি জেআরপি ঘোষণা করা হলো। এ মুহূর্তে আমার এবং অন্যদের মনেও এই প্রশ্ন এসেছে— কতদিন এই বোঝা আমাদের বহন করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কতদিন এই বোঝা টেনে নিয়ে যেতে পারবে।’

বাংলাদেশের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হচ্ছে— রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরতে যাওয়াই হচ্ছে এর সমাধান। যেকোনও তহবিল সংগ্রহের সময়ে এই সমাধানের বিষয়টি সবার মনে রাখা উচিত। মানবিক সহায়তা দরকার কিন্তু, এটি চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য যথেষ্ট নয়। জাতিসংঘসহ অন্যদের চিরস্থায়ী সমাধানের প্রতি নজর দিতে হবে।’

রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের পরিবেশগত ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে ৬,৮০০ একর বন নষ্ট হয়ে গেছে। এই রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় জনগণের ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ক্যাম্পে ঘনসবতি কমানোর জন্য সরকার নিজে ৩৫ কোটি ডলার ব্যয়ে ভাসানচরে বসতি তৈরি করেছে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে— এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার। এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার গেছে।’

ভাসানচর নিয়ে সমালোচনার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘অনেক সময়ে আমাদের ইতিবাচক উদ্যোগকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া হয় এবং ভিন্নভাবে চিত্রিত করা হয়। কিন্তু এ ধরনের প্রয়াস এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে না। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জাতিসংঘ ও কয়েকজন রাষ্ট্রদূত ভাসানচর পরিদর্শন করেছেন। আমরা আশা করি, জাতিসংঘ ভাসানচরে যত দ্রুত সম্ভব দায়িত্ব গ্রহণ করবে।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০১৭ সালে যখন রোহিঙ্গারা দলে দলে পালিয়ে আসছিল তখন বাংলাদেশ তার দরজা খুলে দিয়েছিল। অন্য কোনও দেশ কোনও শরণার্থীর জন্য তাদের দরজা এভাবে খুলে দেয়নি। আমরা প্রথম থেকেই তাদের মঙ্গলের জন্য কাজ করছি। এমনকি করোনার সময়েও এটি বাদ যায়নি।’ প্রথম থেকেই এদের দেখাশোনা করার জন্য বিপুল পরিমাণ সরকারি কর্মকর্তাকে ক্যাম্পে নিয়োগ করা হয় বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘চার বছর হয়ে গেছে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এবং এখন সময় হয়েছে সমাধানের দিকে নজর দেওয়ার, যাতে করে এই মাত্রায় সম্পদ সংগ্রহহের জন্য আমাদের চেষ্টা করা না লাগে।’

রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাসহ অন্যান্য উদ্যোগ এমনভাবে নিতে হবে, যাতে করে রোহিঙ্গারা ফেরত যাওয়ার পরে মিয়ানমার সমাজে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আমরা শিক্ষার ক্ষেত্রে রাজি হয়েছি, কিন্তু এই শিক্ষা অবশ্যই মিয়ানমারের কারিকুলাম অনুসরণ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সব উদ্যোগই সাময়িক হতে হবে এবং পরিবেশের বিষয়টি আমাদের চিন্তা করতে হবে, যাতে করে জেআরপি যেন কোনও ধরনের ক্ষতি না করে।’

সানবিডি/এএ