কমিশনের এক বছর

নতুন উচ্চতায় পুঁজিবাজার

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-০৫-১৮ ২৩:০৩:২৪


পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক পতনে সাধারণ বিনিয়োগকারী যখন দিশেহারা ঠিক তখনই শুরু হয় করোনা মহামারি। দেশ লকডাউনের কবলে পড়লে বন্ধ হয়ে যায় বাজার। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে দেশের অর্থনীতি। তবে এর মাঝেই পুনর্গঠন করা হয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে। তিনি ১৭ মার্চ দায়িত্ব নেন। এরপর করোনার ছুটি কাটিয়ে ৩১মে ফের পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয়। তারপর থেকেই নতুন নতুন চমক দেখতে পায় বাজার সংশ্লিষ্টরা। নতুন কমিশনের করিৎকর্মা কিছু সিদ্ধান্তে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করে। ফলে বাজারমুখী হয় সাইটলাইনে থাকা বিনিয়োগকারীরা। তার ফলশ্রুতিতে গত এক বছরে পুঁজিবাজারে চাঙা ভাব বিরাজ করছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, করোনার বন্ধের পর গত বছরের ৩১ মে লেনদেন শুরু হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। এই সময় বেড়েছে সূচক ও লেনদেন। নতুন কমিশনের এক বছরে ডিএসইএক্স বা প্রধান সূচক বেড়েছে এক হাজার ৭৬৯ পয়েন্ট। ৩১ মে ডিএসই’র প্রধান সূচক ছিলো চার হাজার ৬০ পয়েন্টে, গতকাল ১৮ মে পর্যন্ত যা স্থির হয়েছে পাঁচ হাজার ৮২৯ পয়েন্ট। এই এক বছরে ডিএসই’র লেনদেন বেড়েছে কয়েকগুণ।গত সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। তার আগের সপ্তাহে এটি ছিলো এক হাজার ৩০০ কোটি টাকার উপরে।

পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন 

Sunbd Newsক্যাপিটাল নিউজক্যাপিটাল ভিউজস্টক নিউজশেয়ারবাজারের খবরা-খবর

বাজারের এই ইতিবাচক পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বরাবরই স্টেকহোল্ডাররা বিএসইসি’র নেতৃত্বকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। তারা বলছেন, নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কিছু পদক্ষেপের কারণে বাজার এমন পরিস্থিতিতে এসেছে। কমিশনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পদক্ষেপ হলো- আলোচ্য সময়ের মধ্যে পুঁজিবাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সাঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করা, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতকে নতুনভাবে সাজানো, ৩০ শতাংশ ও ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে কঠিন অবস্থান, তারল্য সংকট কমাতে নানা উদ্যোগ, ডিজিটাল বুথ, স্ট্যাবিলাইজেশন ফন্ট, রোড শো, দুর্বল কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ, লকডাউনে পুঁজিবাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত, স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশনের ডিজিটালাইজেশন, বন্ড মার্কেটে শক্তিশালীকরণ, মার্কেট ইন্টেলিজেন্ট স্থাপন, বহুজাতিক কোম্পানিসহ দেশীয় ভালো প্রতিষ্ঠানের আইপিও’র অনুমোদন। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় ১৩টি কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে আইপিও নিয়মে পরিবর্তন,  ও বাজার মধ্যস্থতাকারীদের কাজে উৎসাহ বাড়াতে পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত, নতুন ট্রেক ইস্যুর সিদ্ধান্তসহ অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নতুন কমিশন।

এছাড়া নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জিরো টলারেন্সে অবস্থান করছে। শেয়ার কারসাজির দায়ে বড় ধরণের জরিমানা করেছে কয়েকটি কোম্পানিকে। ফ্রিজ করেছে অনেক কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকদের বিও হিসেবে থাকা শেয়ার। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে জব্দ করা হয়েছে অনেকের ব্যাংক হিসাব।

এর বাইরেও ম্যাজিকের মতো কাজ করছে পরিচালকদের ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শেয়ার ধারনের বিষযে কমিশনের নির্দেশনা। বন্ড মার্কেটকে গতিশীল করতে এনবিআরের সাথে বৈঠক করে কর সুবিধা বাড়ানো, ব্যাংকের নগদ লভ্যাংশ সেপ্টেম্বরের আগে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কথা বলা, আইসিবিকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেওয়াসহ অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

অন্যদিকে, মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তির জন্য সময় কম লাগানো, ঝুলন্ত কাজ দ্রুত শেষ করা, আইপিও অনুমোদন ও লেনদেন দ্রুত শুরু করা, লটারির পরিবর্তে সবাইকে শেয়ার দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা, তারল্য বাড়াতে সর্বনিম্ম বিনিয়োগ নির্ধারণ করা, কোম্পানিগুলোকে নগদ লভ্যাংশ দিতে উৎসাহিত করা,লেনদেনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সোশ্যাল মিডিয়ায় রিউমার বন্ধ করা উদ্যোগ গ্রহণ করা। এছাড়া বিএসইসি ও ডিএসইর সার্ভেল্যান্স শক্তিশালী করাসহ অনেক যোগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের কথা: নতুন কমিশনের কাজে সন্তুষ্ট বাজার সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমান বলেন, বর্তমান কমিশন প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে স্বল্পতম সময়ে পুঁজিবাজার উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন সংস্কারে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছেন। কমিশনের নিরলস প্রচেষ্টা সামনের দিনগুলোতে বাজারে আরও অধিকতর টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা অনুযায়ী চেয়ারম্যানের সফল নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা এবং দিক নির্দেশনায় শিগগির দেশের পুঁজিবাজার নতুন উচ্চতায় এবং সাফল্য অর্জন করবে৷

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, বর্তমান কমিশনের দূরদর্শী চিন্তার ফলে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। অনেক ঝুলন্ত বিষয় কম সময়ের মধ্যে সমাধান করেছে বিএসইসি।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছে। তার প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ছে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতকে নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে, ৩০ শতাংশ ও ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে কঠিন অবস্থান, তারল্য সংকট কমাতে নানা উদ্যোগ, ডিজিটাল বুথ, স্ট্যাবিলাইজেশন ফন্ট, রোড শো, দুর্বল কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ, লকডাউনে পুঁজিবাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত, স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশনের ডিজিটালাইজেশন, বন্ড মার্কেটে শক্তিশালীকরণ, মার্কেট ইন্টেলিজেন্ট স্থাপন, বহুজাতিক কোম্পানিসহ দেশীয় ভালো প্রতিষ্ঠানের আইপিও’র অনুমোদন। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় ১৩টি কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে আইপিও নিয়মে পরিবর্তন,  ও বাজার মধ্যস্থতাকারীদের কাজে উৎসাহ বাড়াতে পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত, নতুন ট্রেক ইস্যুর সিদ্ধান্তসহ অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নতুন কমিশন।

এক বছরে এতো কাজ করার পর সন্তুষ্ট নয় বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, আমার যা ইচ্ছে ছিলো তার মাত্র ২০ শতাংশ কাজ করতে পেরেছি। আরও ৮০ শতাংশ কাজ করতে পারিনি। বিএসইসির জনবল সংকট, করোনার প্রভাব গতি থামিয়ে দিয়েছে। তবে তিনি পুঁজিবাজারকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান।

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরণের সহযোগিতা পাচ্ছি। জনবল সংকটের সমাধান হচ্ছে। আগামীতে আরও অনেক গতিতীতে পুঁজিবাজার এগিয়ে যাবে। অর্থনীতির প্রতিচ্ছবি হবে দেশের পুঁজিবাজার।

জেড ক্যাটাগরি: নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোকে পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন। দায়িত্ব নেওয়ার সময় ৫৩টি কোম্পানি এই তালিকায় ছিলো। বর্তমানে এই তালিকায় আছে মাত্র ৩১টি কোম্পানি। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এই তালিকায় থাকা ১০ টি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। অনেক কোম্পানি লভ্যাংশ দিয়ে ক্যাটাগরি পরিবর্তন করেছে।

৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ: কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ৬১টি কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ছিলো না। পরে কমিশন আইন পরিপালন করার উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে মাত্র ১৮টি কোম্পানি এই আইন পরিপালনে ব্যর্থ। বাকীগুলো আইন পরিপালন করেছে। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে চারটি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। আরও তিন থেকে চারটি কোম্পানি তালিকায় আছে।

দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ: নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২০ সালের ২ জুলাই ২২ কোম্পানির ৬১জন পরিচালককে নূন্যতম শেয়ার ধারণ নিয়ে আল্টিমেটাম দেয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নূন্যতম শেয়ার ধারণ না করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। বিএসইসির নির্দেশনা মেনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শতভাগ পরিচারখ আইনটি পরিপালন করেন।

উল্লেখ,২০০৯-১০ সালে শেয়ার কারসাজির পর ভয়াবহ দরপতনের প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে ও সম্মিলিতভাবে নূন্যতম শেয়ার ধারণের শর্ত আরোপ করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল, কোম্পানি পরিচালনায় জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে যথাযথ প্রতিনিধিত্বশীল পর্ষদ গঠন করা।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড: পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিষয়ে কঠিন নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে সুসাশন নিশ্চিতে আগামীতে কমিশন যে ধরণের তথ্য চাবে তা অ্যাসেট ম্যানেজার, ট্র্যাষ্টি,কাস্টডিয়ান ও উদ্যোক্তাদের সকল তথ্য কমিশনের নিকট দিতে বাধ্য থাকবে।

জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারের উন্নতির জন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ড ভূমিকা রাখছে। কিন্তু বাংলাদেশে মিউচ্যুয়াল ফান্ড অনেকটা বিপরীত অবস্থানে। যার কারণে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। এবার এই খাতে সুসাশন ফেরাতে চায় নতুন কমিশন। নির্দেশনাগুলো হলো-

১. মিউচ্যুয়াল ফান্ডে সুসাশন নিশ্চিত করার জন্য অ্যাসেট ম্যানেজার, ট্র্যাষ্টি,কাস্টডিয়ান ও উদ্যোক্তাদের সকল তথ্য কমিশনের নিকট দিতে বাধ্য থাকবে।

২ এর (এ). কমিশন তথ্য না চাইলেও সঠিক সময়ে নিরীক্ষিত আথিক প্রতিবেদন ও ফান্ডের ফিন্যান্সিয়াল অবস্থা, ফান্ডের অবস্থা,বাজারের বিনিয়োগের অবস্থা, ক্যাসফ্লোর অবস্থা বছর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে জানাতে হবে।

২ এর (বি). ফান্ডের ৬ মাস মেয়াদ শেষ হলো ৪৫ দিনের মধ্যে বিএসইসিতে সব তথ্যসহ জমা দিতে হবে। একই সাথে গত বছরের একই সময়ের অবস্থান জানাতে হবে।

২ এর (সি).ফান্ডের ৩ মাস মেয়াদ শেষ হলো ৩০ দিনের মধ্যে বিএসইসিতে সব তথ্যসহ জমা দিতে হবে। একই সাথে গত বছরের একই সময়ের অবস্থান জানাতে হবে।

৩. প্রতি প্রান্তিক শেষ হওয়ার পর ইউনিটহোল্ডারদেরকে ফান্ডের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে হবে।

৪. প্রতি প্রান্তিকের প্রতিবেদন অ্যাসেট ম্যানেজারের ওয়েবসাইডে প্রকাশ করতে হবে। একই সাথে আর্ধ বার্ষিকী প্রতিবেদন ৪৫ দিনের মধ্যে অ্যাসেট ম্যানেজারের ওয়েবসাইডে প্রকাশ করতে হবে।

অবন্টিত ২১ হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়্যাল ফান্ডের ব্যবস্থাপকদের কাছে অলস পড়ে আছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। অলস এই টাকা বিনিয়োগে নীতিমালা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বিএসইসিতে ২০ হাজার ৯৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার তথ্য একত্রিত করা হয়েছে। এর মধ্যে নগদ ৯৫৬ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বরের বাজার দর অনুযায়ী বোনাস শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৯৮৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এই টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য একটি নীতিমালা করছে বিএসইসি। আজ বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১৫ হাজার কোটি টাকা ফান্ড আবেদন: পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বল্প সুদে ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১৫ হাজার কোটি টাকার ফান্ড চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর বিএসইসির চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত এই চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই টাকা দিয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)কে শক্তিশালী করতে বিএসইসি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এই ফান্ড চেয়েছে। পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য স্বল্প সুদে আইসিবিকে ৫ হাজার কোটি টাকা এবং ঋণে জর্জরিত ব্রোকারেজহাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সুত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে উল্লেখিত তহবিলে ৩ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ সুদে ১০ বছর মেয়াদী ঋণ প্রদান করবে। এ ফান্ডের বিনিয়োগের সুদের হার হবে ৪ শতাংশ যার ১ শতাংশ সিংকিং ফান্ডে জমা থাকবে। ফান্ডের মাধ্যমে উত্তেলিত অর্থ মার্চেন্ট ব্যাংকার, স্টক ব্রোকারস ও স্টক ডিলার কতৃক ইস্যুকৃত কর্পোরেট বন্ড/ডেট সিকিউরিটিজে (যার কুপন হার হবে ৬ থেকে ৭ শতাংশ) বিনিয়োগ করা হবে। এ ফান্ড গঠন ও বিনিয়োগের মাধ্যমে তারল্য ও লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি সরকারের রজস্ব আহরণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।

বন্ড পেতে লাগবে ২০০ কোটি টাকার তহবিল: পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন সামাল দিতে ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তহবিলের নীতিমালা অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষ সুবিধায় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের সুযোগ হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুত্রে জানা গেছে, তহবিল গঠন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর গত ১০ মাসে ২১টি ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠন করেছে, যার পরিমাণ ২ হাজার ৫০ কোটি টাকা। আর ওই তহবিল থেকে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।

বিশেষ সুবিধায় ৬০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য তহবিল গঠনের সুযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ২১টি ব্যাংক এই তহবিল গঠন করেছে। এর মধ্যে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, ওয়ান, ইউসিবি, এনসিসিবিএল ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা করে বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এ ছাড়া এক্সিম ব্যাংক ৮০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। সিটি ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ৫০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এর বাইরে রূপালী, ইসলামী, পূবালীসহ আরও ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৫২০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। বেশিরভাগ ব্যাংকই নিজস্ব উৎস থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের তহবিল গঠন করেছে।

ব্যাংকগুলোর ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ থাকলেও অধিকাংশ ব্যাংক তা না করায় হতাশ হয়ে পড়ে কমিশন। বাংলাদেশ ব্যাংক পরামর্শ দিলেও তা উপেক্ষা করে ব্যাংকগুলো। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে কমিশন। ব্যাংকগুলোর ব্যাসেল সংক্রান্ত শর্ত পরিপালনের জন্য ব্যাংকগুলোকে বন্ড ইস্যু করতে হয়। এক্ষেত্রে এসইসির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এখন এই বন্ড অনুমোদনের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ গত ১০ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের জারি করা বিশেষ তহবিল সংক্রান্ত নির্দেশনা পরিপালনের শর্ত জুড়ে দিচ্ছে এসইসি। বিশেষ তহবিল গঠন না করলে ব্যাংকগুলো বন্ডের চাঁদা সংগ্রহ করতে পারবে না। সম্প্রতি ৫-৬টি ব্যাংকের পার্পিচ্যুয়াল বন্ডের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেগুলোতে এমন শর্তারোপ করা হয়েছে।

তফসিলি ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ড রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারে। ব্যাংকগুলো চাইলে নিজস্ব উৎস থেকেও এমন তহবিল গঠন করতে পারে। ওই বিশেষ তহবিলের সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নিজস্ব পোর্টফোলিওতে ব্যবহার করতে পারবে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠন করা বিশেষ তহবিল ২০২৫ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবে ব্যাংক, যা পুঁজিবাজারে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বর্ণিত বিনিয়োগ গণনার বাইরে থাকবে।

আইপিওতে আবেদন করতে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ: পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে একটি অভিনভ উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আবেদনকারীদের সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম বিনিয়োগ ২০ হাজার টাকা রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসবে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ।

বীমা কোম্পানির থাকতে হবে ২০% বিনিয়োগ: বীমা কোম্পানিগুলোকে বাজার আনার জন্য অনেক আইনে ছাড় দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তবে একটি শর্ত দিয়েছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের। বীমা কোম্পানির তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রেও আইপিওর (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থের অন্তত ২০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। এছাড়া ব্রেআকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকে দাবীহিন টাকা বিএসইসির গঠন প্রক্রিয়ায় নিতে চায়।

আইপিও বাতিল: পুঁজিবাজারে আসার অপেক্ষায় থাকা সাতটি কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন বাতিল করেছে নতুন কমিশন। নতুন কমিশন আসার পর বাতিল হওয়া কোম্পানিগুলো হলো-জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফেক্চারিং, বি ব্রাদার্স গার্মেন্টস,বিডি পেইন্টস, বেকা গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল, এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ,আল ফারুক ব্যাগস,ইনফিনিটি টেকনোলজি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।

সূত্র মতে,সিকিউরিটিজ আইন লংঘন এবং আর্থিক প্রতিবেদনে অংসগতি থাকায় আইপিওগুলো বাতিল করা হয়েছে। তবে কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে চাইলে আর্থিক প্রতিবেদন ঠিক করে এবং সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন করে আবারও বিএসইসিতে আবেদন করতে পারবে।