অন্যখাতে স্থবিরতা, কৃষি ঋণ আদায়ে রেকর্ড
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-০৫-২২ ২১:৪৪:০৪
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্থ অর্থনীতি। আমদানি-রপ্তানি এখনও হয়নি স্বাভাবিক। করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারছে না স্থানীয় শিল্প-কারখানা। ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবিরতায় আঘাত লেগেছে দেশের প্রতিটি খাতে। তবে গত বছরে কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হলেও চলতি অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণ ছিলো ভালে। শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো বড় পরিমাণে বিতরণকৃত ঋণ আদায় অনেকটা ব্যাহত হলেও কৃষকরা নতুন ঋণ পাওয়ার আশায় ঋণ প্রদানে ছিল তৎপর।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের কৃষিখাতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা তবে ব্যাংকগুলো প্রথম দশ মাসে (জুলাই- এপ্রিল) ২০ হাজার ১৭২ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে যা শতাংশ হিসেবে দাড়ায় ৭৭.৪৯ শতাংশ । আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ১৭ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ঋণ বিতরণ দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা বেড়েছে।
শুধু ঋণ বিতরণই বাড়েনি। আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে চলতি অর্থবছরে দশ মাসে ২১ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তারা ১৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। অর্থাৎ তারা এক বছরে ৩ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ‘ঋণ পরিশোধে যে ছাড় ছিল, সে কারণে কৃষকদের ঋণ আদায় ভালো ছিল। তবে বিতরণের আকারটা আরও বেশি হতো। বিভিন্ন প্যাকেজ থাকায় কিছুটা কম হয়েছে। সরকারে বিভিন্ন ধরণে প্রণোদনা প্যাকেজ ও ফসলের মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা থাকায় কৃষক ঋণ কম নিয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, লকডাউন না থাকলে আমাদের মে মাসের মধ্যে অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা পরিপূর্ণ হতো। তারপরও জুনের মধ্যে পরিপূর্ণ করতে চেষ্টা করবো। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিটি পরিবারের কাছে পৌঁছাবো এবং তাদের কৃষি ব্যাংকের সদস্য হিসেবে ঋণের আওতায় নিয়ে আসব।
চলমান কৃষিঋণ কর্মসূচির বাইরে কোডিভ এর কারণে সরকার গেল বছর ৫ হাজার কোটি টাকার যে রি-ফাইন্যান্স স্কিম করেছিল তা গত মার্চ পর্যন্ত ৩ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড নয় মাসে বিতরণ করেছে ৮২৪ কোটি টাকা।
কৃষি ঋণ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, কৃষিখাতে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের কথা ছিল ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো ৮ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা বিতরণ করেছে যা লক্ষমাত্রার ৮১.৪৪ শতাংশ। এছাড়া ঋণের টাকা আদায় করেছে ৮ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা।
এছাড়া বেসরকারি ও বৈদেশিক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর লক্ষমাত্রা ছিলো ১৫ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এ ব্যাকগুলো বিতরণ করেছে ১১ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা যা শতাংশ হিসেবে দাড়িয়েছে ৭৪.৭২%। তবে এই সময়ে ১২ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা আদায় করেছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর খেলাপি রয়েছে ৫১৯ কোটি টাকা অর্থাৎ বিতরণের ৭.৬৫ শতাংশ।
বরিশালের বাকের গঞ্জের ঋণ গ্রহিতা মোহাম্মদ আলী হোসেন বাণিজ্য প্রতিদিনকে বলেন, আমি ঋণ নিয়ে লাভবান হয়েছি। তাই যথাসময়ে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে পেরেছি। এতে আমি খুশি।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃষক ইমরান হোসেন বাণিজ্য প্রতিদিনকে বলেন, “ঋণ প্রদানে ব্যাংকগুলো খুব একটা আন্তরিক নয়। আমরা অশিক্ষিত মানুষ। কাগজপত্রের হিসাব বুঝি না। স্যাররা শুধু বারবার ঘুরায়”। এই কৃষক ঋণ পেতে ব্যাংকগুলো যাতে সহজ পদ্ধতি বের করে সেই অনুরোধ করেন।
কুমিল্লার ব্যাংক কর্মকর্তা সুজন মাহমুদ বাণিজ্য প্রতিদিনকে বলেন, কৃষকের ঋণ দেওয়া হলেও সেটা খুব একটা খেলাপি হয় না। তাই কৃষকদের আমরা ঋণ দিতে সাহস হারাই না। তিনি বলেন, কৃষক যাতে সহজে ঋণ পায় এবং পরিশোধ করতে পারে সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরে ঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে এটা ইতিবাচক দিক। এ খাতকে সরকারও গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। কৃষিঋণ বিতরণের ধারা অব্যাহত থাকতে হবে সেইসঙ্গে আগামীতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো প্রয়োজন।
‘সরকারের রিফাইন্যান্স স্কিম থেকে ঋণ বিতরণ বাড়াতে হবে। সময়মতো কৃষি ঋণ বিতরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সময়মতো কৃষক ঋণ না পেলে দুইভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে। প্রথম তার শস্য উৎপাদন ব্যবহত হয়, দ্বিতীয়ত সময়মতো কাজে না লাগলেও ঋণের টাকা ঠিকই পরিশোধ করতে হয়।’
এই অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেন, কৃষিখাতে ঋণ আদায় আগের বছরের তুলনায় ইতিবাচক। আমারা মনে করছি কৃষকরা ভালো মূল্য পেয়েছে তাই ঋণ পরিশোধ ভালো ছিল। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য ঋণ বিতরণ আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া শস্য ও শস্য বর্হিভূত ঋণের বাইরে শাকসবজি কিংবা পেঁয়াজের মত শস্য গুদামজাত করার সুবিধা বাড়ানোর জন্য এখাতে ঋণ সুবিধা বাড়ানো যেতে পারে।