দুই জবি শিক্ষার্থীর নতুন প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কার

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৫-২৯ ১৭:১৯:১৬


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের (৬ষ্ঠ ব্যাচ) শিক্ষার্থী হাসান আল রাজী চয়ন ও একই বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের (১২তম ব্যাচের) মারজান মারিয়া নতুন প্রজাতির একটি ব্যাঙ আবিষ্কার করেছেন। নতুন প্রজাতির আবিষ্কার করা এ ব্যাঙটির নাম দেয়া হয়েছে “Leptobrachium sylheticum”।

শনিবার (২৯ মে) সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তরুণ দুই গবেষক হাসান আল রাজী চয়ন ও মারজান মারিয়া।

তারা জানান, গত বছর জুনে সিলেটের মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গবেষণার কাজের জন্য গেলে তারা সেখানে এ ব্যাঙটিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। তারা বুঝতে পারেন যে, এটা আমাদের পরিচিত ব্যাঙয়ের থেকে কিছুটা আলাদা প্রকৃতির। তারপর তারা এটা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে বুঝতে পারেন যে, এটা পুরো বিশ্বের জন্য একদম নতুন প্রজাতির ব্যাঙ।

নতুন প্রজাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এ ব্যাঙের শারীরিক পরিমাপ, এদের মলিকুলার বিশ্লেষণের পাশাপাশি ডাকের বিশ্লেষণও করেছেন, যা এ গণের অন্য ব্যাঙদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

এরপর তারা তাদের গবেষণাপত্রটি Journal of Natural History জার্নালে পাঠালে সেখান থেকে এটা প্রকাশ হয় এবং তাদের এ আবিষ্কার এখন বিশ্বের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে।

গবেষণা কাজের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সহযোগিতায় ছিলেন Lomonosov Moscow state Universit-এর রাশিয়ান প্রফেসর Nick Poyarkov।

আবিষ্কারের বিষয়ে হাসান আল রাজী চয়ন বলেন, “ব্যাঙটি মূলত লাউয়াছড়া বন থেকে পাওয়া। নতুন প্রজাতির এই ব্যাঙটি আমাদের দ্বিতীয় আবিষ্কার। এর আগেও আমরা ওই বন থেকে আরো একটি ব্যাঙ আবিষ্কার করেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বনটি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে, বিভিন্ন কারণে বনের প্রাণ পানির ছড়াগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। বনের ছড়াগুলো ব্যাঙদের আবাসস্থল, তাই আমাদের ছড়াগুলো রক্ষার্থে এগিয়ে আসতে হবে।

Leptobrachium Sylhetian ব্যাঙটির বিভিন্ন শারীরিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যাঙটি মাঝারি আকৃতির। ইংরেজিতে একে Liter Frog বলে কারণ এটি ঝরাপাতার ওপর চুপ করে বসে থাকে। এর শরীরের রঙ গাছের পাতার মতই। এদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এদের চোখগুলো লাল। তাই চোখে আলো পড়লে সেগুলো জ্বলে উঠে। এছাড়াও এই ব্যাঙটির ডাক অনেকটা হাসির মত বলেও জানান তিনি।

তাদের এমন আবিষ্কার দেশের জন্য গৌরবের দাবি করে তিনি বলেন, “নতুন কিছু আবিষ্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করাটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দদায়ক।

ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সম্বন্ধে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে আমাদের আরো একটা ব্যাঙ নিয়ে গবেষণা চলছে। সেটা খুব দ্রুতই ঘোষণা হবে।”

গবেষণার সহযোগী আরেক শিক্ষার্থী মারজান মারিয়া বলেন, “নতুন প্রজাতির এই ব্যাঙ আবিষ্কার করে আমরা অনেক খুশী। নতুন এই ব্যাঙ দুটি আবিষ্কার আমাদের জন্য একটা অনুপ্রেরণা। নতুন কিছু আবিষ্কার করে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পেরে আমরা গর্বিত। ভবিষ্যতে এমন আরও কাজ করতে চাই।”

উল্লেখ্য যে, গত বছরের (২০২০) ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রাণিবিজ্ঞানী ড. আলী রেজা খানের নাম অনুসারে “raorchestes rezakhani” নামে পুরো বিশ্বের জন্য নতুন প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কার করেছিলেন। তারা দুইজন দীর্ঘদিন যাবত ব্যাঙ নিয়ে গবেষণা করে আসছেন।