ভারতীয় গরু ঠেকাতে পারলে খামারিরা লাভবান হবেন

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৬-২৫ ১৭:১২:৩৭


এ বছর চাঁদপুরে চাহিদার তুলনায় কোরবানিযোগ্য পশুর সঙ্কট রয়েছে। এবার  জেলাটিতে কোরবানির পশুর চাহিদা এক লাখ ১৮ হাজার ৩৬১টি। আর কোরবানিযোগ্য পশু আছে এক লাখ ১৭ হাজার ২৬৮টি।

ফলে চাহিদার তুলনায় এক হাজার ৯৩টি পশুর সঙ্কট রয়েছে। প্রাণিসম্পদ দফতরের তথ্যানুযায়ী—জেলায় কোরবানির জন্য চাহিদার চেয়ে গরু কম রয়েছে পাঁচ হাজার ৯১টি। তবে বাড়তি রয়েছে ছাগল ভেড়া ও অন্যান্য পশু।

চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বখতিয়ার উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘জেলায় চাহিদার তুলনায় একেবারে অল্পসংখ্যক কোরবানির পশুর সঙ্কট রয়েছে। প্রতি বছর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে চাঁদপুরের হাটে গরু-ছাগল বিক্রি করতে আনা হয়। ফলে চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে।’

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বখতিয়ার উদ্দিন, ‘সঙ্কট আছে ভেবে কোনোভাবেই জেলায় ভারতীয় গরু ঢুকতে দেয়া ঠিক হবে না। তাহলে খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বে। ভারতীয় গরু ঠেকাতে পারলে খামারিরা লাভবান হবেন।’

খামারিরা বলছেন, কোরবানির পশুর কোনো সঙ্কট নেই। সঙ্কটের কথা বলে কোনোভাবেই বাইরের গরু ঢুকতে দেয়া ঠিক হবে না। প্রশাসনের এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি চান তারা।

জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় তালিকাভুক্ত খামারি রয়েছেন তিন হাজার ২৪০ জন। তাদের খামারে কোরবানিযোগ্য গরু আছে ২৬ হাজার ৭৯০টি। আর ছাগল, ভেড়াসহ অন্যান্য পশু রয়েছে ১৩ হাজার ৬৫৪টি। আর তালিকাভুক্ত নয়, এমন খামারে ৫১ হাজার ৮৯টি গরু এবং ২৫ হাজার ৭৩৫টি ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য পশু রয়েছে। সবমিলিয়ে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ২৬৮টি।

এদিকে, জেলায় কোরবানির জন্য গরুর চাহিদা ৮২ হাজার ৯৭০টি। ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৩৫ হাজার ৪১৬টি। সেই হিসেব জেলায় গরুর সঙ্কট পাঁচ হাজার ৯১টি। তবে বাড়তি রয়েছে ছাগল ভেড়া ও অন্যান্য পশু। চাহিদার তুলনায় এসব পশুর তিন হাজার ৯৭৩টি বেশি রয়েছে।

চাহিদা অনুযায়ী কোরবানির জন্য উপজেলাভিত্তিক হিসাবে গবাদিপশুর প্রয়োজন সদরে ১১ হাজার ৬০২, মতলব দক্ষিণে ১৪ হাজার ৫০০, মতলব উত্তরে ১১ হাজার ৪৫০, কচুয়ায় ১৪ হাজার ৩৬৫, শাহরাস্তিতে ২৫ হাজার ১১৯, হাজীগঞ্জে ১৭ হাজার ৯০০, ফরিদগঞ্জে ১৯ হাজার, হাইমচরে ৪ হাজার ৪৫০টি।

সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের খামারি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘করোনার কারণে মানুষের হাতে টাকা নেই। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চলমান না থাকায় মানুষ জমানো টাকা খরচ করে জীবনযাপন করছে। তাই যেসব খামারি ১০টা গরু পালন করত, তারা এখন ৩-৪টা গরু পালন করে। এতে উৎপাদন কম হয়েছে।’

রামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও গরু খামারি মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘এ বছর গরু নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। সঙ্কটের কারণে যদি ভারতীয় গরু আসতে থাকে, তবে নিশ্চিত লোকসানে পড়তে হবে।’

করোনাভাইরাসের মধ্যে গত বছর জেলায় ২২৫টি হাটে কোরবানির গরু-ছাগল বিক্রি করা হয়েছিল। এবারও এসব হাটে গবাদিপশু বিক্রি করা হবে। জেলায় এখনো কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়নি।

তবে দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় খামারি ও ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। করোনার প্রকোপ বাড়লে লকডাউন বা শাটডাউন দেয়া হলে, স্বাভাবিকভাবে হাট চলবে না। এতে লোকসানের শঙ্কায় দিন পার করছেন খামারিরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘করোনার মধ্যে গরুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য প্রশাসন কাজ করছে। জেলা প্রশাসন কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন নিয়মিত মনিটরিং টিম নিয়ে খামারে যাচ্ছি। কেউ যাতে অসাধু উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ ওষুধ ও ইনজেকশন ব্যবহার না করতে পারে, সেদিকে নজর দেয়া হচ্ছে। এছাড়া রোগমুক্ত করতে গরুকে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে।’