ঠাকুরগাঁওয়ে আমের বাজারে ধস, নেই অন্য জেলার পাইকার
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৬-৩০ ১৬:৫৯:৩৪
সারা দেশে আংশিক লকডাউন এবং বৃহস্পতিবার থেকে পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করায় ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন আমের বাজারে ধস নেমেছে। বিশেষ করে বুধবার (৩০ জুন) আমের দাম অনেক কমে গেছে। সাধারণ মানুষও সস্তায় আম পেয়ে কিনছে।
বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা শুনে ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে নতুন করে বেশি আম কিনছেননা। খুচরা বিক্রির জন্য বাজারে আম নিয়ে এসেছেন।
শহরের চৌরাস্তার ফল ব্যবসায়ী মো. মিলন জানান, রাজশাহীর আম এখন শেষেন দিকে। ঠাকুরগাঁওয়ের আম বাজারে আসা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে মিস্রিভোগ, খিরসাপাতি, হাড়িভাঙ্গা ও সূর্যপুরী আম বাজারে এসেছে। এবার এই অঞ্চলে আমের ফলন কম। কিন্তু লকডাউনের কারণে ঢাকার পার্টি আসেনি। স্থানীয় বাজারই ভরসা। দামও কম।
সিঙ্গিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, তিনি এবার ৭টি আম বাগান কিনেছেন। কিন্তু এবার ঢাকা থেকে পার্টি আসেনি। অনেক আম পেকে বাগানেই ঝরে পড়েছে। তাই নিজেরাই লোকজন দিয়ে আশেপাশের হাটে বাজারে আম বিক্রি করছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জাতের আম। ইতিমধ্যেই পৌর শহরের বিভিন্ন স্থান ও সদর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বসেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট। সেখানে প্রতিদিন ক্রেতা সমাগমও হচ্ছে প্রচুর। করোনার প্রকোপ থাকলেও এতদিন মোটামুটি বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছিল আম। কিন্তু দু’একদিনের মধ্যে আমের দাম পড়ে যায়। শহরের সাধারণ পাঠাগার চত্বরে অস্থায়ী আমের বাজারে মিস্রিভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। ঐতিহ্যবাহী সূর্যপুরী আম বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা ও হাড়িভাঙ্গা আম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। একদিকে দাম কম অন্যদিকে লকডাউনের ঘোষণা শুনে শহরের মানুষ ভিড় করেছে আমের বাজারে। দাম কম হওয়ায় আম কিনছে তারা। আম বিক্রেতা সাইফুল বলেন এই আম গত বছর প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করেছিলাম। এবার দাম কম।
আমের দামের এই অবস্থা শহরের কালিবাড়ি বাজার, চৌরাস্তা, কালেক্টরেট চত্বর, বাসস্ট্যান্ড, সত্যপীর ব্রিজ, গোধুলী বাজার, সেনুয়া হাট, কোর্ট চত্বর, আমতলা মোড়, তাঁতীপাড়া, মুন্সিরহাট, ঠাকুরগাঁও রোড যুব সংসদ মাঠ, রেল ক্রোসিংসহ বেশকিছু স্থানে বিভিন্ন জাতের আমের অস্থায়ী বাজার বসেছে। ফেরি করেও অনেক ব্যবসায়ী বিক্রি করছেন আম।
ঠাকুরগাঁও জেলায় সুর্যপুরী, লাবুয়া, হাড়িভাঙ্গা, ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসা, অরুনা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, কালীভোগ, কাঁচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপূরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, পাহুতান, ত্রিফলা, ছাতাপরা, গুঠলি, লখনা, আদাইরা, কলাবতী ইত্যাদি যাতের আম চাষ হয়। এগুলোর মধ্যে স্থানীয় জাতের সূর্যপুরী ও হাড়িভাঙ্গা জাতের আমের চাহিদা অনেক বেশি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে আসা আম বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক বছর শুরুতেই আম বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু করোনার কারনে এ বছর আম কম বিক্রি হচ্ছে। মানুষজন বাড়ি থেকে বের হচ্ছে কম। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জুস ও অন্যান্য কোম্পানীর পক্ষ থেকে বাগানেই আম কিনলেও এ বছর তারা আসেননি। ফলে বাগানে অনেক আম নষ্ট হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় আম বাগানের পরিমাণ ৮ হাজার ২৯ হেক্টর। আর আম বাগানের সংখ্যা ৩ হাজার। এর মধ্যে পীরগঞ্জ-হরিপুর উপজেলায় আম বাগানের সংখ্যা বেশি। ঠাকুরগাঁও জেলার বিখ্যাত আমের নাম সূর্যপূরী। এটি সাধারণত বালিয়াডাঙ্গী এলাকায় বেশি চাষ হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান। করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তার পরও স্থানীয়ভাবে আমের চাহিদা থাকায় কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়েই লাভবান হবেন।