ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে:বিএমবিএ

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২১-০৮-০৯ ২২:১১:৩০


বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ভারত, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থা রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ)। এমনকি প্রাইস আর্নিং (পিই) রেশিও সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে দেশের পুঁজিবাজারের পিই রেশিও ভারতের চেয়ে অর্ধেক অবস্থানে রয়েছে।

বিএমবিএ মনে করে বাজার অতি মূল্যায়িত নয়; বরং অব মূল্যায়িত রয়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার।সোমবার সংগঠনটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের কাছে এই সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিএমবিএ সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ মতিন।

সেখানে বলা হয়েছে, সম্প্রতি মুদ্রানীতিকে কেন্দ্র করে কতিপয় আলোচক গণমাধ্যমে কিছু বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে মুদ্রা বাজার, পুঁজিবাজার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কার্যক্রমকে দ্বিধাগ্রস্ত করছেন। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বিএমবিএ মনে করে, “বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির আলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে সেটাতে যেন পুঁজিবাজারে ক্ষতি না হয় বা ভুল উপস্থাপনায় না হয় সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদৃষ্টি ও সহযোগীতা প্রয়োজন। অন্যথায় বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য পুঁজিবাজারকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

‘সম্প্রতি মুদ্রানীতি নিয়ে আলোচনাকালে পুঁজিবাজার নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ আলোচক বলেছেন, ‘পুঁজিবাজার এখন চাঙ্গা। এটাকে আর বেশি দূর যেতে দেওয়া ঠিক হবে না’।

‘উনি মুদ্রানীতি নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে কিসের উপর ভিত্তি করে উপরোক্ত বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার করেছেন সে সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেননি। এ ধরনের বক্তব্য স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবাইকে হতাশ করেছে বলে আমরা মনে করি। তিনি ছাড়া আরও কতিপয় ব্যক্তি পুঁজিবাজার অতি মূল্যায়িত বা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত বিহীন মতামত প্রদান বা গণমাধ্যমে ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের অতঙ্কিত করছেন।”

বিশ্বের ১০টি পুঁজিবাজারের কিছু তথ্য উপস্থাপন করে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের ডিএসইএক্স সূচক ২০২০ সালের ১ জুলাই ছিল ৩৯৮৭ পয়েন্টে। আর ২০২১ সালের ১ জুলাই সূচকটি অবস্থা করে ৫২২০ পয়েন্টে। গত এক বছরে সূচকটি ৫৬.০১ পয়েন্ট বেড়েছে। আর ২০২০ সালে সূচকটির সর্বনিম্ন অবস্থা ছিল ৩৬০৪ পয়েন্টে। আর ২০২১ সালের ৫ আগস্ট সূচকটি বেড়ে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৬৫৯৬ পয়েন্টে। ফলে সূচকটি সর্বনিম্ন অবস্থান থেকে ৮৭ শতাংশ বেড়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।

এদিকে ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে শ্রীলঙ্কার সিএসইঅল সূচক ৫০.১৪ শতাংশ, ‍ভারতের সেনসেক্স সূচক ৪৭.৭৪ শতাংশ, পাকিস্তানের কেএসই ১০০ সূচক ৩৭.০১ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের ডিজেআইএ সূচক ৩৪.৫৮ শতাংশ, জাপানের নিক্কি ২২৫ সূচক ২৯.৭৭ শতাংশ, জার্মানির ডিএএক্স সূচক ২৭.২৭ শতাংশ, চীনের শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জের এসজেডএসই কম্পোনেন্ট সূচক ২৪.১৬ শতাংশ, থাইল্যান্ডের এসইটি সূচক ১৮.১৬ শতাংশ ও যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচক ১৫.৭০ শতাংশ বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন 

Sunbd Newsক্যাপিটাল নিউজক্যাপিটাল ভিউজস্টক নিউজশেয়ারবাজারের খবরা-খবর

এছাড়া একই সময়ে সর্বনিম্ন অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের দিক থেকে ১২৪ শতাংশ বেড়েছে থাইল্যান্ডের এসইটি সূচক, ১০৯ শতাংশ বেড়েছে ‍ভারতের সেনসেক্স সূচক, ৯৩ শতাংশ বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিজেআইএ সূচক, ৯১ শতাংশ বেড়েছে শ্রীলঙ্কার সিএসইঅল সূচক, ৮৭ শতাংশ বেড়েছে জার্মানির ডিএএক্স সূচক, ৮৩ শতাংশ বেড়েছে বাংলাদেশের ডিএসইএক্স সূচক, ৭৫ শতাংশ বেড়েছে পাকিস্তানের কেএসই সূচক, ৬৮ শতাংশ বেড়েছে জাপানের নিক্কি সূচক, ৫৫ শতাংশ বেড়েছে চীনের এসজেডএসই কম্পোনেন্ট সূচক এবং ৪৩ শতাংশ বেড়েছে যুক্তরাজ্যের এফটিএসই সূচক।

অপরদিকে ঝুঁকির দিক থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ভারত, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজার প্রাইস আর্নিং (পিই) রেশিও সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। পিই রেশিও হিসেবে বাংলাদেশ ১৫.৮৬ পয়েন্টে, ভিয়েতনাম ১৬.৮৮ পয়েন্টে, যুক্তরাষ্ট্র ২৩.৯১ পয়েন্টে, থাইল্যান্ড ২৭.০২ পয়েন্টে এবং ভারত ৩০.৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এসব তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমাদের শেয়ার বাজার অতি মূল্যায়িত নয়। যেখানে ভারত থেকে আমাদের মাথাপিছু আয় বেশি, জিডিপি গ্রোথ বেশি, আমাদের ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড বেশি। অথচ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের পিই রেশিও ভারতের চেয়ে অর্ধেক।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বিএমবিএ মনে করে, তথ্য উপাত্ত ছাড়া এমন বক্তব্যের ওপর আতঙ্ক তৈরি করে পুঁজিবাজারের ক্ষতি সাধন করা হলে তা দেশের অর্থনীতির জন্যই খারাপ সংবাদ বহন করবে। এটা সরকারের জন্যও বিরক্তির কারণ হতে পারে।

তাই বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংক ও মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো নির্দেশনাকে অপব্যাখ্যা বা অপব্যবহার করে যেন পুঁজিবাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে সেই প্রত্যাশা করি এবং পুঁজিবাজারকে গতিশীলতায় সকল অংশীজন দায়ীত্বশীল ভূমিকা রাখবে সেই প্রত্যাশা করছি।