করোনা ও ক্যান্সারের নকল ওষুধ তৈরি করত তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৯-০৩ ২১:০৪:৪৮


জীবন বাঁচাতে যেসব ওষুধের ওপর নির্ভর করে সাধারণ মানুষ, সেসব ওষুধকেই বিষে পরিণত করছে একদল প্রতারক চক্র। দেহের ক্ষতিকর উপাদান দিয়ে প্রস্তুত করা নকল ওষুধ বাজারজাত করছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এ রকম এক প্রতারক চক্রের সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ। তাদের কাছ থেকে ক্যান্সার ও করোনা মহামারিতে বহুল ব্যবহৃত দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ এবং ওষুধ তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।

শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন তরিকুল ইসলাম, সৈয়দ আল মামুন, সাইদুল ইসলাম, মনোয়ার, আবদুল লতিফ, নাজমুল ঢালী ও সাগর আহমেদ মিলন। এ সময় তাদের কাছ থেকে একমি কোম্পানির মোনাস-৭০০ বক্স, স্কয়ার কোম্পানির সেকলো-৫০ বক্স, জেনিথ কোম্পানির ন্যাপ্রোক্সেন প্লাস-৭৪৮ বক্সসহ অন্যান্য কোম্পানির বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ, ওষুধ তৈরির মেশিন, ডায়াস ও ওষুধের খালি বক্স উদ্ধার করা হয়।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘একটি অসাধু চক্র নকল ওষুধ বাজারজাত করছে। এ চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। বুধবারের ধারাবাহিক অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।’

ডিবির প্রধান বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত তরিকুল ইসলাম ও সৈয়দ আল মামুন কারখানা স্থাপন করে জীবন রক্ষাকারী এ সব নকল ওষুধ তৈরি করতেন। সাইদুল ইসলাম এ নকল ওষুধ তৈরির প্রধান কারিগর। মনোয়ার ফয়েল ও আবদুল লতিফ ওষুধের পাতায় ছাপ দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসহ সিলিন্ডার সরবরাহ করতেন। গ্রেপ্তারকৃত নাজমুল ঢালী ওষুধের বক্সে ছাপ দেওয়ার পর তৈরিকৃত এ সব নকল ওষুধ গ্রেপ্তারকৃত সাগর আহমেদ মিলনের নেতৃত্বে মিটফোর্ডের কয়েকটি গ্রুপের মাধ্যমে বাজারজাত করা হতো।’

এ কে এম হাফিজ আক্তার আরও বলেন, ‘এই সব নকল ওষুধের ইনগ্রিডিয়েন্টসে মূলত প্রয়োজনীয় কোনো সক্রিয় উপাদান থাকে না। এ ছাড়া মেইন স্টার্চ নিম্ন গ্রেডের ব্যবহৃত হয়। এমনকি স্টেরয়েড ও ডাই ব্যবহৃত হতে পারে। নন ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রেডের এসব কেমিক্যাল সেবনের ফলে মানুষের কিডনি, লিভার, হৃদযন্ত্রে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এ সব নকল ওষুধ সাধারণ মানুষের জন্য মরণ ফাঁদ।’

‘বিশ্ব বাজারে ১৪৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। ভেজাল ও নকল এসব ওষুধ এই সুনাম এবং আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মফস্বলের ওষুধ ফার্মেসিগুলোকে টার্গেট করে একটি অসাধু সংঘবদ্ধ চক্র সারা দেশে ভেজাল ও নকল ওষুধ ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ ধরনের ওষুধ মাদকের চেয়েও ভয়াবহ’, যোগ করেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে বংশাল থানায় মামলা করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের আদালতে পাঠানো হলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এএ