পাবনায় ভাঙনে অর্ধশতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন

জেলা প্রতিনিধি আপডেট: ২০২১-০৯-১৪ ১০:৫২:৪৯


পাবনায় গত কয়েক দিনে সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের ২৭ পরিবারের অর্ধশতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শতাধিক বসতভিটা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামে মসজিদ, ঈদগাহ, গোরস্থান ও ইটভাটা বিলীনের পথে।

এদিকে বেড়া উপজেলার কয়েকটি স্থানে নদীভাঙন বেড়েছে। আগস্ট মাসের শুরু থেকে নদীভাঙন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত তা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয়দের তথ্য মতে, ২৫ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

পাবনা সদরের গোহাইলবাড়ি গ্রামের হতদরিদ্র মনোয়ারা খাতুন জানান, গত দুই মাসে পদ্মার করাল গ্রাসে তিন বার বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছেন। এখন আর তার ঘর তোলার জায়গা নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করছেন। মনোয়ারার অভিযোগ, এখনো তিনি কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি। সহায়-সম্বল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, সচেতন মহল ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পাবনায় পদ্মা নদী ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলোর টিন, কাঠসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র স্তূপ করে রাখা হয়েছে। আবার অনেকেই সব কিছু ভেঙে অন্যত্র বাড়ি বানাচ্ছেন। অনেকে গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগিসহ যাবতীয় জিনিস বিক্রি করে দিয়েছেন। যাদের সামর্থ্য আছে তারা অন্য জায়গায় নতুন করে ঘর তুলে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিচ্ছেন। আর সামর্থ্যহীনরা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

খাইরুল ইসলাম, বাচ্চু আলী, ওহাব আলী, মনোয়ারা, সালমা খাতুনসহ বেশ কয়েকজন জানান, আগস্ট মাসের শুরুতে একদিন রাতে দেখি, প্রচন্ড শব্দে পদ্মার পানি ভয়ঙ্কর বেগে ঘরের দিকে আসছে। চিৎকার করে আশপাশের লোকদের ডেকে তুলে ঘর ভেঙে সরাতে শুরু করি। এরই মধ্যে কয়েকটি ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়। মসজিদ, স্কুল, ঈদগাহ বিলীনের অপেক্ষায় আছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তারা বলেন, এই মৌসুমে তিন বার ঘরবাড়ি সরিয়েছি। এখন আর কোথাও ঘর তোলার মতো জায়গা নেই। হাতে টাকা-পয়সাও নেই। অন্য জায়গায় জমি কিনে বাড়ি করব। আমরা ঠিকমতো সংসারই চলাতে পারি না। মোটা অংকের টাকা দিয়ে জায়গা জমি কিনে বাড়িঘর তৈরি করব কীভাবে? ছেলে-মেয়েদের স্কুল খুলে দিয়েছে। রাতে পড়ালেখা করতে পারছে না। সবাই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। সব কিছু হারিয়ে এখন আমরা নিঃস্ব।

তারা আফসোস করে বলেন, খেয়ে না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত-দিন যাপন করছি। স্থানীয় প্রতিনিধি বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ত্রাণ তো দূরের কথা, ঠিকমতো খোঁজখবর নেয়নি।

কয়েকদিন আগে এমপি মহোদয় এসে নদী ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধানের কথা বলে গেছেন। আমাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা হবে কি না জানি না। আমরা ত্রাণ চাই না নদী ভাঙনরোধ চাই। স্থায়ী সমাধান দিতে হবে।

চরতারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম টুটুল বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এই এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বসতভিটা, গাছপালা, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শতাধিক পরিবার নদীভাঙন আতঙ্কে রাত-দিন পার করছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে অর্থ বরাদ্ধ পেলে তাদের মাঝে বণ্টন করা হবে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী পরিচালক (ভূমি ও রাজস্ব) মোশাররফ হোসেন বলেন, চরতারাপুর এলাকায় প্রভাশালী কিছু মহলের অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পদ্মার ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় এমপি মহোদয় ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে আমাদের হাতে একটি ডিওলেটার দিয়েছেন। সেটার আলোকে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।

পাবনা সদর-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে নদী ভাঙনরোধ করা সম্ভব নয়। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীকে সোচ্চার হওয়ার কথা বলেছি।

বালুখোরদের বিরুদ্ধে গেলে প্রয়োজনে আমিও তাদের পাশে থাকব। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে নদীভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা করেছি। আশা করি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নদীভাঙনের স্থায়ী সমাধান হয়ে যাবে।

সানবিডি/ এন/আই