বিশ্বের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের দাবি ব্যবসায়ীদের
প্রকাশ: ২০১৬-০১-২৭ ২২:১০:০০
দেশের ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প খাতে বিনিয়োগে বাড়াতে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। বুধবার মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) নেতারা এ দাবি জানান। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ। এসময় এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকরাসহ দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সংবাদ কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
তারা বলেন, বর্তমানে দেশে গ্যাসের সংকট চলছে। যার কারণে ইতোমধ্যে অনেক কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম দফায় দফায় কমছে। কিন্তু আমাদের দেশে তেলের দাম এখনো কমানো হয়নি। এ অবস্থায় বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে তেলের দাম না কমালে বিনিয়োগ বাড়বে না।
এসময় ব্যবসায়ীরা বলেন, জ্বালানির দাম কমালে গ্যাসের বিকল্প হিসেবে তেল দিয়ে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব। এতে একদিকে দেশের সীমাবদ্ধ গ্যাসের সাশ্রয় হবে অন্যদিকে উৎপাদন খরচও কমে যাবে।
মাতলুব আহমাদ বলেন, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের শ্রেষ্ঠ জায়গা। আগে বাংলাদেশে বিদেশিরা বিনিয়োগ করবে শুনতাম। এখন সরাসরি বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। ইতোমধ্যে ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। তবে বর্তমানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান কয়েকটি বাধা রয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, জমি বরাদ্দ পেতে বেশি খরচ, যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সমস্যা, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাড়বে বলে আশা করেন তিনি। এসব সমস্যার সমাধানে সরকারের সঙ্গে এফবিসিসিআই সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেছে।
মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) চায় না দেশের ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাতলুব আহমাদ বলেন, ভ্যাট আদায়ে র্যাবের খবরদারি অযৌক্তিক। ভ্যাট আদায়ে তৃতীয় কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপ চাই না। আমরা এক টাকার ভ্যাট দিতে গিয়ে তিন টাকার হয়রানির শিকার হতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আলোচনা আমরা বলেছি ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দিতে চায়, হয়রানির শিকার হতে চায় না। এনবিআর চেয়ারম্যান আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন হয়রানি করবে না। তারপরও আমাদের ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে হানা দিচ্ছে, খাতাপত্র নিয়ে যাচ্ছে। তা কম্য নয়। আমাদের শান্তিমত ব্যবসা করতে না দিলে ভ্যাট দিতে পারবো না। আর ভ্যাট না দিলে দেশও এগিয়ে যেতে পারবো না।
এদিকে এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, সরকার সবসময় জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দেয়। আন্তর্জাতিক ব্যারেল প্রতি তেলের দাম ১৩০ ডলার থেকে কমে ৩০ ডলারে নেমে এসেছে। । অথচ সরকার এখনও আগের দামেই জ্বালানি তেল বিক্রি করছে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিনিয়োগ বাড়াতে জ্বালনি ও গ্যাস সংকট সমাধানে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানান ব্যাবসয়ী নেতারা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এফবিসিসিআই এর পরিচালক আবু নাসের বলেন, সাধারণত উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের নিরাপত্তা, আইনের শাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। এ অবস্থা থাকলে ২০১৬ সাল হবে বিনিয়োগের বছর।
অর্থপাচার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, দেশ থেকে ৭৬ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে; আমরাও শুনেছি। কিন্তু বাস্তবতা হলো আইন দিয়ে কখনো টাকা ধরে রাখা সম্ভব নয়। দেশে যদি বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকে তাহলে টাকা পাচার বন্ধ হবে। দেশের টাকা দেশে বিনিয়োগ হবে।