সব সময় ‘ফার্স্ট’ হতে নেই!
:: প্রকাশ: ২০২১-১০-১৮ ১০:২২:৩০
স্কুল জীবনের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে সবার, থাকেই। শিশুর কোমল-নরম মনে এক ধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয় এখান থেকেই। ক্লাসে প্রথম হতে হবে। পেছনের সারির শিক্ষার্থীদের দেখা হয় ভিন্ন চোখে। অথচ ক্লাসে প্রথম না হলেও বড় হয়ে মানুষ কতো কী হয়ে যায়, সেই নজির আমাদের চারপাশে অসংখ্য, অজস্র। অথচ স্কুল জীবনের ঢুকে যাওয়া এই মানসিকতা আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায় পেশাগত জীবনেও। ব্যবসা কিংবা চাকরি যেখানেই হোক, সবাই কেবল প্রথম হতে চায়। অথচ শেষে থাকারও এক বিশেষ সুবিধা আছে, সেটা অনেকেই বুঝতে চায়না।
যেমন ব্যবসার কথাই বলা যাক। প্রতিযোগিতা এড়ানো গেলে যে একচেটিয়া বাজার দখলের সুযোগ তৈরি হয় এটা কে না বোঝে? অথচ প্রতিযোগিতা এড়ানোর কৌশলটাই আমরা বুঝতে চাইনা। একচেটিয়া ব্যবসা করতে হলে আপনার হাতে থাকতে হবে সেই পণ্য যা অন্য কারো কাছে নাই। আবার মানুষের ‘মন’ বোঝারও বিকল্প নাই। কেননা এমন কিছু যদি আনেন যা মানুষ গ্রহণই করলো না, তাহলে সারা বছর গোডাউন ভরপুর থাকবে, আর ব্যবসা উঠবে লাটে, এটাও সহজ সমীকরণ!
একটা উদাহরণ দেয়া যাক। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত পত্রিকা ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ এর নাম কম বেশি সবাই জানে। এর বাজার মূল্যের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘টুইটার’ এর বাজারমূল্যের তুলনা করা যাক। উভয় কোম্পানিতেই কয়েক হাজার কর্মী কাজ করে এবং দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই কয়েক মিলিয়ন মানুষ সংবাদ বা তথ্য পায়।
২০১৩ সালে টুইটার সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ সময় এর বাজারমূল্য ছিল আড়াই হাজার কোটি মার্কিন ডলার, যা ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’-এর বাজার মূল্যের চেয়ে ১২ গুণ বেশি। যদিও ২০১২ সালে নিউইয়র্ক টাইমস যখন ১৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার আয় করে সে সময় টুইটার লোকসান গুনছে। কিন্তু পরের দশকে এই চিত্র পুরোটা পাল্টে যায়।
কারণ কি? কারণ ‘ক্যাশ ফ্লো’ বা নগদ অর্থের প্রবাহ। যখন থেকে টাইমস লাভজনক, টুইটার তখন ছিলই না। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা টুইটারকেই বেছে নিয়েছে, টাইমসকে নয়।
ভালো ব্যবসা সেটাই যা ভবিষ্যতের জন্য ‘ক্যাশ ফ্লো’ তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। বিনিয়োগকারীরা দেখলো যে, আগামী এক দশকেই টুইটার একচেটিয়া বাজার দখল করবে আর বিপুল মুনাফা করবে। তারা এটাও বুঝেছে যে, টুইটার যখন লাভে আসবে, তখন সংবাদপত্রের তেমন কোন চাহিদাই থাকবে না। বর্তমান অবস্থা সেটাই প্রমাণ করে। নিউইয়র্ক টাইমস শুধু নয়, আরও অন্যান্য স্বনামধন্য পত্রিকাগুলো টিকে থাকার জন্য মানুষের কাছে হাতও পাতছে!
সহজ করে বললে, একটি ব্যবসার বর্তমান মূল্য হচ্ছে ভবিষ্যতে এটি কী পরিমাণ অর্থ আয় করবে। আর এটা নির্ধারণ করতে পারে কেবল তিনিই, যিনি নিজের ব্যবসা সম্পর্ক সুক্ষ্ম পরিকল্পনা করতে পারে, ভবিষ্যতকে দেখতে পায়।
জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রও একই। আপনি ভবিষ্যতে কী করবেন, কতোদূর যাবেন তা বলে দেবে আপনি আসলে কতোদূর যেতে চান ও কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন সেই বিষয়। স্কুলে প্রথম হতে না পারলেও জীবনের আরও বহু ক্লাস আছে যেখানে আপনি সফল হতে পারেন। এক্ষেত্রে গতিপ্রকৃতি বুঝে ক্রমাগত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই না ধরা দেবে সাফল্য!
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, চীন আন্তর্জাতিক বেতার
সানবিডি/ এন/আই