উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৭
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-১০-২২ ১১:৫৫:৩৮
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ নামের একটি মাদ্রাসায় হামলা চালিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে সাত জনে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে ঘটনাস্থলে চার জন ও পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও তিন জনের মৃত্যু হয়।
শুক্রবার (২২ অক্টোবর) ভোর ৪টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৮ এর এইচ-৫২ ব্লকে অবস্থিত মাদ্রাসাটিতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ক্যাম্পে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের কথা বলা হয়েছিল। হামলার কারণ বিষয়ে কিছু জানায়নি পুলিশ।
নিহতরা হলেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১২, ব্লক-জে-৫ এর বাসিন্দা হাফেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষক মো. ইদ্রিস (৩২), ক্যাম্প-৯ ব্লক-১৯ এর মৃত মুফতি হাবিবুল্লাহর ছেলে ইব্রাহিম হোসেন (২৪), ক্যাম্প-১৮, ব্লক-এইচ -৫২ এর নুরুল ইসলামের ছেলে মাদ্রাসার ছাত্র আজিজুল হক (২২), একই ক্যাম্পের ভলান্টিয়ার আবুল হোসেনের ছেলে মো. আমীন (৩২)। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ‘এফডিএমএন’ ক্যাম্প-১৮, ব্লক-এফ-২২ এর মোহাম্মদ নবীর ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক নুর আলম ওরফে হালিম (৪৫), এফডিএমএন ক্যাম্প-২৪এর রহিম উল্লাহর ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক হামিদুল্লাহ (৫৫) ও ক্যাম্প-১৮, ব্লক- এইস ৫২ এর নুর মোহাম্মদের ছেলে ও মাদ্রাসার ছাত্র নুর কায়সার(১৫)।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার বলেন, শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে ‘এফডিএমএন’ ক্যাম্প-১৮ এইচ-৫২ ব্লকে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদ্রাসায় রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। হামলায় মাদ্রাসায় অবস্থানরত চার জন মারা যান। ঘটনা শুনে ময়নারঘোনা পুলিশ ক্যাম্প-১২ এর পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও তিন জন মারা যান। এ সময় পুলিশ হামলাকারীদের একজনকে একটি দেশীয় লোডেড ওয়ান শুটারগান, ছয় রাউন্ড গুলি ও একটি ছুরিসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করেন।
এ ঘটনায় ময়নারঘোনা পুলিশ ক্যাম্প-১২ এর পুলিশ সদস্যরা ‘মদুতুল উম্মা’ মাদ্রাসা ও আশপাশের এলাকায় ব্লকরেইড পরিচালনা করছেন। অন্যান্য ক্যাম্প এলাকাতেও ব্লক রেইড পরিচালনা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে উখিয়া থানা পুলিশ এসে লাশের সুরতহাল এবং মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা তদারকি করছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাদ্রাসায় হামলার ঘটনায় সাত জন মারা গেছেন। মৃতদেহগুলোর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।
এরআগে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ইস্ট-ওয়েস্ট ১ নম্বর ব্লকে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে নস্যাত করতে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। হত্যকাণ্ডের পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যদের গ্রেফতারে তৎপর হয় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ অবস্থার মধ্যেই শুক্রবার ভোরে ক্যাম্পের একটি মাদ্রাসায় হামলার ঘটনা ঘটলো।
এএ