মুহাম্মাদ (সা.)-এর দাওয়াতের পদ্ধতি
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-১১-০২ ১৬:১০:৫৬
ইসলামের দিকে দাওয়াত ও তাবলিগের মূলনীতি কেমন হবে? দাওয়াত ও তাবলিগের কী পদ্ধতি ঘোষণা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোমের সম্রাটকে ইসলাম গ্রহণের জন্য কোরআনের যে ঘোষণাটি পাঠিয়েছিলেন। সে ঘোষণাটি কেমন ছিল?
আল্লাহ তাআলা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে দাওয়াতের রীতি-পদ্ধতি নাজিল করেছিলেন। কোরআনুল কারিমে ইসলাম গ্রহণের সে পদ্ধতিটি অবলম্বন করে তিনি রোমের সম্রাটকে দাওয়াত দিয়েছিলেন।
কোরআনের বৈচিত্রময় দাওয়াতের পদ্ধতি দেখে স্বয়ং রোমের সম্রাটও বিস্মিত হয়েছিলেন। ইসলামের দাওয়াত এত সুন্দর ও কল্যাণকর হতে পারে! দাওয়াতের ব্যাপারে উভয় পক্ষের জন্য সাধারণ একটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখেই মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করেছিলেন এভাবে-
قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْاْ إِلَى كَلَمَةٍ سَوَاء بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاَّ نَعْبُدَ إِلاَّ اللّهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلاَ يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضاً أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُولُواْ اشْهَدُواْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ
(হে রাসুল! আপনি) বলুন, ‘হে আহলে-কিতাবগণ! একটি বিষয়ের দিকে আস। যা আমাদের মধ্যে এবং তোমাদের মধ্যে সমান। (তা এই যে,)-
> আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না,
> তাঁর সঙ্গে কোনো শরিক সাব্যস্ত করব না এবং
> একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাব না।
এরপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে বলুন, ‘তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমরা (মুসলিম) আত্ম-সমর্পণকারী।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৬৪)
অর্থাৎ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের মূলনীতি ছিল এমন যে, ‘না তারা কোনো মূর্তিকে, না ক্রুশকে, না আগুনকে এবং না অন্য কোন কিছুকে প্রভু বলে স্বীকার করবে। বরং কেবল এক আল্লাহরই ইবাদত করব। আর এটাই ছিল প্রত্যেক নবির দাওয়াত।
রোম সম্রাটের প্রতি বিশ্বনবির চিঠি
কোরআনুল কারিমের এই নির্দেশ অনুযায়ী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে চিঠি পাঠান এবং চিঠির মাধ্যমে এই আয়াতের দাবী অনুযায়ী তাকে ইসলাম কবুল করার প্রতি আহবান জানান। দাওয়াতটি ছিল এমন-
فَأَسْلِمْ تَسْلَمْ، أَسلِمْ يُؤْتِكَ اللهُ أَجْرَكَ مَرَّتَيْنِ فَإِنْ تَوَلَّيْتَ فَإِنَّ عَلَيْكَ إِثْمَ الْأَرِيسِيِّينَ
‘ইসলাম কবুল করে নাও, নিরাপত্তা পাবে; মুসলিম হয়ে যাও, তাহলে মহান আল্লাহ তোমাকে দ্বিগুণ নেকি দেবেন। কিন্তু যদি তুমি ইসলাম স্বীকার না কর, তাহলে তোমার কতৃত্বাধীন প্রজাদের পাপও তোমার উপর পতিত হবে।’ (বুখারি)
কারণ, প্রজাদের ইসলাম স্বীকার না করার কারণই হবে তুমি। কোরআনুল কারিমের আলোচ্য আয়াতে তিনটি মৌলিক বিষয় উল্লিখিত হয়েছে। তাহলো-
১. কেবল আল্লাহরই ইবাদত করা;
২. তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা এবং
৩. কাউকে শরিয়তের বিধান প্রণয়নের ইলাহি মর্যাদা না দেওয়া।
এটাই সেই ‘অভিন্ন বাক্য’ যার উপর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রতি আহলে-কিতাবদেরকে আহবান জানানো হয়েছিল। (আহসানুর বয়ান)
সুতরাং বর্তমান সময়েও এই শতধা-বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন উম্মতকে ঐক্যবদ্ধ করতে এ আয়াতে উল্লেখিত উক্ত তিনটি বিষয়কে এবং এই ‘অভিন্ন বাক্য’কে অধিকরূপে মূলনীতি ও বুনিয়াদ হিসাবে গ্রহণ করার বিকল্প নেই।
তাফসিরে জালালাইনের বর্ণনায়-
হে রাসুল! আপনি বলে দিন, হে আহলে কিতাব তথা আসমানি কিতাবের অনুসারি ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা, আস এমন কথার দিকে; যা আমাদের ও তোমাদের মাঝে একই রকম। একই সমান তার বিষয়সমূহ। তাহলো- আমরা আল্লাহ ব্যতিত কারও ইবাদত করি না, কোনো কিছুকেই তাঁর সঙ্গে শরিক করি না। তোমরা যেমন তোমাদের ধর্মের অভিজ্ঞ ও সন্ন্যাসীদেরকে ‘রব’ বলে মেনে নিয়েছ, তেমনি আমাদের কেউ আল্লাহ ব্যতিত অপর কাউকেও রব বলে গ্রহণ করে না। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাওহিদ তথা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া থেকে বিমুখ হয় তবে তোমরা তাদের বল- তোমরা আমাদের ব্যাপারে এ কথার উপর সাক্ষী থাকা যে, আমরা আত্মসমার্পনকারী অর্থাৎ তাওহিদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের অবলম্বনকারী।
ভিন্ন ধর্মে দাওয়াতের মূলনীতি
আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে দাওয়াত ও তাবলিগের মূলনীতি, পদ্ধতি কেমন হবে তা ঘোষণা করা হয়েছে। তাহলো- ‘আস! ওই বিষয়ের দিকে, যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান’। এ আয়াত থেকে তাবলিগ ও ধর্মের প্রতি কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলকে আহ্বান করার মূলনীতি জানা যায়। তাহলো এমন যে-
‘ভিন্ন মতের কাউকে ধর্মের প্রতি আহ্বান জানাতে হলে প্রথমে তাকে শুধু এমন বিষয়ের প্রতি আহ্বান জানানো উচিত, যে বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হতে পারেন।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনুল কারিমের নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলামের দিকে আহ্বান করার তাওফিক দান করুন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো পদ্ধতিতে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে সম্পৃক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সানবিডি/ এন/আই