কৃষকের বাড়তি ব্যয় হবে ২ হাজার কোটি টাকা

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-১১-০৭ ১৫:৩১:৩৯


চলমান রবি মৌসুমের শুরতেই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষকের বাড়তি খরচ হবে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এতে ফসলের উৎপাদন খরচ গড়ে ৪০ শতাংশ বেড়ে যাবে। জমিতে হালচাষ, সেচ দেওয়া, মাড়াই, পরিবহণসহ সংশ্লিষ্ট খাতে এসব অর্থ ব্যয় হবে। বাড়তি খরচ করে উৎপাদনের পর ন্যায্য দামে বিক্রি করা যাবে কিনা সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। ফসল উঠার পর অনেক সময় উৎপাদন খরচের চেয়ে কমে পণ্য বিক্রি করতে হয়।

এ ব্যাপারে কৃষকরা বলেছেন, এমনিতেই সেচ সৌসুমের শুরুতে কৃষি যন্ত্রপাতি ওভারহোলিং করতে তাদের বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়। সেখানে সেচ খরচ বেড়ে গেলে তাদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তারা বলেন, মাসখানেক পরই ঘরে তুলবেন সোনালি ধান। তাই উৎসবের আমেজ চলছিল কৃষকের ঘরে ঘরে। সেই আমেজে গুড়েবালি দিতে হাজির ডিজেলের বাড়তি দাম। তাদের বক্তব্য, কিছুদিনের মধ্যে বোরো আর রবিশস্যের জন্য মাঠ প্রস্তুত করবেন তারা। সেজন্য ব্যবহার হবে সেচ পাম্প-পাওয়ারটিলার। কিন্তু হঠাৎ করেই ডিজেলের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তাদের।

বুধবার রাতে হঠাৎ করে সরকার ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা করেছে। বৃদ্ধির হার ২৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। জ্বালানি তেলে মোট চাহিদার ২১ দশমিক ১৫ শতাংশই ব্যবহৃত হয় কৃষি খাতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সেচ খাতে। এছাড়া হালচাষ, মাড়াই ও পরিবহণ খাতসহ বিভিন্ন যান্ত্রিক খাতে ডিজেল ব্যবহৃত হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি খাতে ডিজেল ব্যবহৃত হয়েছে ৯ লাখ ৭২ হাজার ৫৩৯ টন। যা মোট চাহিদার ২১ দশমিক ১৫ শতাংশ। প্রতি লিটার ৬৫ টাকা হিসাবে এ খাতে কৃষকের খরচ হয়েছে ৭ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে গত অর্থবছরের চেয়ে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এ খাতে ডিজেলের চাহিদা ধরা হয়েছে ১১ লাখ টন। ৮০ টাকা হিসাবে এ খাতে কৃষকের খরচ হবে ১০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ বাড়ছে। এর মধ্যে ডিজেলের চাহিদা বাড়ায় ১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি খরচ হবে। শুধু মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষি খাতে কৃষককে বাড়তি ২ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে।

এদিকে মৌসুমের শুরুতে সবজি, ধান, গম, ভুট্টা, আলু, সরিষা, পেঁয়াজসহ নানা পণ্য উৎপাদনে হালচাষের জন্য কৃষককে আগাম অর্থ দিতে হয়। সেচেও একই অবস্থা। এগুলোর জন্য আগাম বাড়তি অর্থ দিতে হবে। চলতি অর্থবছরের জন্য যে কৃষি ও পল্লি ঋণ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে ডিজেলের মূল্য লিটারে ৬৫ টাকা ধরেই একরপ্রতি ঋণ সীমা নিরূপণ করা হয়েছে। বাড়তি দামের কারণে যে খরচ বাড়বে, তার জন্য কৃষক বাড়তি ঋণ পাবে না। এ কারণে কৃষিঋণ নীতিতে সংশোধনী আনার কথাও বলেছেন কৃষকরা। একই সঙ্গে বাড়তি খরচে উৎপাদিত পণ্য যাতে তারা নায্যমূল্যে বা উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন সে নিশ্চয়তা চেয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রায় ১৩ লাখ ৪০ হাজার ডিজেল এবং ২ লাখ ৭০ হাজার বৈদ্যুতিক পাম্প রয়েছে। প্রতি বছর গড়ে ১০ থেকে ১৬ লাখ টন ডিজেল সেচে ব্যবহার করা হয়। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে ডিজেলের দাম বাড়ে। ডিজেল ও সার পাচার হয়।

সানবিডি/এনজে