আশা করি নির্বিঘ্নে বই মেলা !
আপডেট: ২০১৬-০২-০৪ ১৪:৩৩:১৫
উৎসবপ্রিয় বাঙ্গালীর প্রাণের আরেকটি মেলার নাম বই মেলা। প্রতি বছর বই প্রেমীরা তীব্র আশা নিয়ে বসে থাকেন এই মিলন মেলার জন্য। আর লেখক/প্রকাশকরা স্বপ্ন দেখেন। বংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে এই প্রাণের মেলা কেবল বই মেলাই থাকে না । সেটা শেষ অব্দি আনন্দমেলায় পরিনত হয়। পরিনত হয় মিলন মেলায়। আমরা যারা সেখানে নিয়মিত বা অনিয়মিত যাই তারা এই নাগরিক জীবনের ক্লান্তি-অবসাদ ভুলতে, মনের খোরাক যোগাতে, জীবনের কিছুটা সময় অনাবিল-নির্মল-নির্বিঘ্নে আনন্দে কাটাতেই যাই।
প্রতি বছর বাংলা একাডেমি এই আয়োজনের মাঝ দিয়ে আমাদের ঐক্য, সম্প্রীতি যেভাবে ধরে রেখেছে তার জন্য সাধুবাদ জানাতে হয়। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবৎ বই মেলায় ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা আমাদেরকে কিছুটা হলেও বিচলিত করছে বৈকি !
এই দেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান এবং বই প্রেমি লেখকদের উপর তাদের আঘাত শুরু হয়েছিল হুমায়ূন আযাদ সাহেবকে দিয়ে । আর সেটি দিনে দিনে বেড়ে গতবার শেষ হলো অভিজিৎ হত্যার মাঝ দিয়ে। বই মেলার রাস্তায় অভিজিৎ এর পড়ে থাকা বা বন্যার রক্তাক্ত শরীর আমরা ভুলিনি বা অভিজিৎ-এর বইয়ের প্রকাশক দীপনকে নিজ কার্যালয়ে ঢুকে নৃশংস হত্যার কথাও আমরা ভুলিনি।
আমরা সেই সকল হত্যার অবশ্যই বিচার চাই। সেই সব খুনীদের বিচার হতেই হবে। মুক্তবুদ্ধির বিকাশে যে বা যারাই বাধা দিবে তাদের বিচার নানা ভাবেই হবে। প্রকৃতির নিয়মেই হবে।
অভিজিৎ, বন্যা, দীপন বা হুমায়ূন আযাদ-এর উপর এই বর্বোরোচিত আঘাত করা মানেই এই নয় যে, আমরা থেমে যাবো বা এই দেশে আর বই মেলা হবে না বরং আরো বড় পরিসরে বা আরো বই প্রেমিদের সমাগমের মাঝ দিয়েই হবে এই মেলা। এটাই সমুচিত উত্তর ।
তবে আমরা যেটা চাই সেটা হলো, বই মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক রাষ্টীয়ভাবে। এমনটি চাই না যে, সিসি টিভি ক্যামেরা আর বহু স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে নির্বিঘ্নে কেউ লেখক, প্রকাশক বা ক্রেতাকে আঘাত হেনে পালিয়ে যাচ্ছে। বা কোন নারী বা কন্যা শিশু কোন পশুর নীপিনেরর হাত থেকে বাঁচার জন্য বই মেলা উপভোগ না করেই মেলা ত্যাগ করুক। বা এমনটিও চাই না যে, কোন কন্যা শিশু বা নারী একদল হিংস্র জানোয়ারের হাতে নাজেহাল হচ্ছে এটা দেখেও একদল কাপুরুষ না দেখার ভান ধরেছে।
বই মেলা হোক বই প্রেমীদের নির্মল আনন্দমেলা। আর এই মেলার আনন্দ নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমার-আপনার-সকলের । রাষ্ট্রের দায়িত্ব কেবল নিরাপত্তা বলয় তৈরী করা নয় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নাগরিকের জন্য সুযোগ নয় অধিকার।
দিলরুবা শরমিন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী dilrubashormin@gmail.com