গোটা দেশটাকে অপরাধ জগতে পরিণত করেছে : রিজভী
প্রকাশ: ২০১৬-০২-০৫ ১২:৩৯:১০
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ঘটনায় পুলিশের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ভোটারবিহীন গদি আটকে রাখা শাসকগোষ্ঠী দেশকে চরম অরাজকতার লীলাভূমিতে পরিণত করেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বিরোধী দল নির্মূল অভিযানে লেলিয়ে দিয়ে সরকার তাদের বুকের মাপটা বড় করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এদেশে সাধারণ মানুষের কাছে এখন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ডিভাইসটা হয়ে পড়েছে আইনের রক্ষকরা ভক্ষকে পরিণত হওয়া।’ শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি রিজভী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর বিচার বহির্ভূত হত্যা, বেআইনি গুম ও গুপ্তহত্যা সংঘটিত করতে সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যে ছাড়পত্র দিয়েছিল, তাতে তারা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে এখন বিবেকহীন অবিশ্বাস্য রকম বেপরোয়া ‘আউট ল’ তে পরিণত হয়েছে। সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সদা তৎপর র্যাব-পুলিশ কর্তৃক এখন সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করা যেন গা সওয়া করে দেয়া হয়েছে। চাঁদাবাজি, জুলুম, প্রহার, নিরীহ মানুষকে আটক করে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে মামলা দেয়া বা ভয় দেখানো, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, আদায় না হলে হত্যা করাসহ পৈশাচিক অপকর্মে লিপ্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদস্যরা ।’
চাঁদা না দেয়ায় বৃহস্পতিবার মিরপুরের চা দোকানি বাবুল মাতব্বরের শরীরে পুলিশ আগুন দিয়ে হত্যা করেছে দাবি করে তিনি এর নিন্দা জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। একইসঙ্গে এই ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘বর্তমান অবৈধ সরকারের অন্তর্লোকজুড়ে অপরাধের চেতনা। সেখানে ন্যায়, সভ্যতা, সুবিচারবোধ বলে কিছু নেই। জবাবদিহীহীন সরকারের কোন নৈতিকতাবোধ থাকেনা। সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন এবং র্যাব-পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নিজ নিজ বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে খেদ প্রকাশ করে বলেছিলেন-‘আপনাদেরকে অস্ত্র দেয়া হয়েছে কী পকেটে রাখার জন্য, নাকি ব্যবহার করার জন্য ?” সুতরাং জনগণের ঘাম নিংড়ানো পয়সার সেই অস্ত্র শেখ হাসিনার র্যাব-পুলিশ প্রয়োগ করছে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বেআইনি ও দায়িত্বহীন আচরণের কারণে গত জানুয়ারি মাসে গড়ে প্রায় প্রতিদিন একজন করে শিশু নিহত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী আহমেদ।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বাইসাইকেল যেমন বিড়াল হতে পারেনা তেমনি জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা কোন অবৈধ সরকার কখনোই জনকল্যাণ ও জনগণকে শান্তি এবং স্থিতি দিতে পারেনা। অপরিণামদর্শী অপকর্মই এইসব সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এরা গোটা দেশটাকে অপরাধ জগতে পরিণত করেছে। এদের কাছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবিক অধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কোন মূল্য নেই। এরা নিজেদের ক্ষমতায় থাকতে প্রয়োজনে দেশের স্বাধীনতাকে বিকিয়ে দিতেও দ্বিধা করে না।’
তিনি বলেন, ‘সরকার নিষ্ঠুর, নির্দয় রক্তপাতের মাধ্যমে গোটা জাতিকে স্থির, নিস্তব্ধ গোরস্থানে পরিণত করতে চাচ্ছে। কবরের শান্তি যুদ্ধের চেয়েও আরও বেশি নিরাশ্বাস, নি:সঙ্গ ও আরও ভয়ঙ্কর। দেশবাসী অপেক্ষা করছে-প্রধানমন্ত্রীর আত্মম্ভরী প্রগলভতার যবনিকাপাতের খবর শোনার জন্য। গোটা দেশ এখন অগ্নিগর্ভ। যদি জনগণের মনের কথা, বেদনার কথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী উপলব্ধি করতে না পারে, তাহলে জনগণের ক্ষোভ যেকোনো মূহুর্তে সুনামীর ন্যায় আছড়ে পড়ে দস্যু দলের ন্যায় আচরণকারী বর্তমান সরকারকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ।’
সানবিডি/ঢাকা/আহো