জুম্মা বারের কিছু আমল ও গুরুত্ব
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-১১-২৬ ১০:২৩:১৭
আমরা যারা মুসলমান তারা সকলে জুম্মাবারকে এটি ফজিলত পূর্ন দিন বলে জানি। কিন্তু অনেকে হয়ত জানেনা কেন এ দিনটি ফজিলত পুর্ন। এক বার দেখা যাক কি কি কারনে অন্যদিনের চেয়ে এই দিন অধিক মর্যাদাবান ।
জুমাবার মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক উৎসব। প্রায় মুসলিম রাষ্ট্রে এ দিনে পালিত হয় সাপ্তাহিক ছুটি। ছুটির আমেজ ও ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য দুটি মিলে এই দিনের প্রতি মুসলমানদের হৃদয়ে রয়েছে আকর্ষণ ও গভীর টান। এই দিনটি মুসলমানদের সমাবেশের দিন। তাই এই দিনকে ‘ইয়াওমুল জুমা’ বলা হয়।
আল্লাহ তায়ালা নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও সব জগৎকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয় দিনের শেষ দিন ছিল জুমার দিন। এ দিনেই হজরত আদম (আ.) সৃজিত হন। এ দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিনেই জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়। কেয়ামত এই দিনেই সংঘটিত হবে। আল্লাহ তায়ালা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্য এই দিন নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু পূর্ববর্তী উম্মতরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ইহুদিরা ‘ইয়াওমুস সাবত’ তথা শনিবারকে নিজেদের সমাবেশের দিন নির্ধারণ করে নেয় এবং খ্রিস্টানরা রোববারকে, আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতকেই তৌফিক দান করেছেন যে, তারা শুক্রবারকে মনোনীত করেছে। ইবনে কাসির ৪/৩৬৫
ইসলামে জুমার গুরুত্ব অপরিসীম। স্বয়ং আল্লাহ পাক কোরআনে এরশাদ করেন, يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا نُودِىَ لِلصَّلَوٰةِ مِن يَوْمِ ٱلْجُمُعَةِ فَٱسْعَوْا۟ إِلَىٰ ذِكْرِ ٱللَّهِ وَذَرُوا۟ ٱلْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ‘হে মু’মীনেরা! জুমার দিনে যখন নামাজের আযান দেওয়া হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের উদ্দেশ্যে দ্রুত ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো।’(সূরা জুম’আ : ৯)
তাই জুমার আজানের আগেই সব কর্মব্যস্ততা ত্যাগ করে জুমার নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে মসজিদে গমন করা মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব। প্রথম আসআদ ইবনে জুরারাহ রাযি মদিনায় জুমার নামায প্রতিষ্ঠা করেন। মহানবী (সা.) প্রথম জুমার নামায বনু সালিমের মসজিদে আদায় করেন। – জাদুল মায়াদ ১/৩৪১
এই দিনটি মুসলমান জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে তখন মানুষ যে দোয়াই করে তাই কবুল হয়। এ দিনে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তন্মধ্যে কয়েকটি আমল নিম্নে উল্লেখ করা হলোথ হজরত আউস ইবনে আউস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে ভালোভাবে গোসল করবে, সকাল সকাল প্রস্তুত হয়ে হেঁটে মসজিদে গমন করে ইমাম সাহেবের কাছে বসবে এবং মনোযোগী হয়ে তার খুতবা শ্রবণ করবে এবং অনর্থক কর্ম হতে বিরত থাকবে, তার প্রত্যেক কদমে এক বছরের নফল রোজা এবং এক বছরের নফল নামাজের সওয়াব আল্লাহ পাক তাকে দান করবেন। – নাসাঈ শরিফ ১৫৫
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে উত্তমরূপে ওযু করবে অতঃপর জুমার মসজিদে গমন করবে এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করবে তার এ জুমা থেকে পূর্ববর্তী জুমাসহ আরও তিন দিনের গোনাহগুলো ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি খুতবা শ্রবণে মনোযোগী না হয়ে খুতবা চলাকালীন কঙ্কর-বালি নাড়ল সে অনর্থক কাজ করল।’ – মুসলিম শরিফ : ১/২৮৩
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তেলাওয়াত করবে তার (ঈমানের) নূর এ জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। – মেশকাত শরিফ : ১৮৯
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, কোনো মুসলমান ওই মুহূর্তে আল্লাহর কাছে যা কিছু প্রার্থনা করবে অবশ্যই আল্লাহ পাক তাকে তা দান করবেন। সুতরাং তোমরা ওই মূল্যবান মুহূর্তকে আসরের পর থেকে দিনের শেষ পর্যন্ত তালাশ কর। – আবু দাউদ : ১/১৫০
উপর্যুক্ত হাদিসগুলোর দ্বারা প্রমাণিত হয়, জুমার দিনে মুসলমানদের জন্য কর্তব্য হচ্ছে, সব ব্যস্ততা ত্যাগ করে আজানের আগেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে মসজিদে গমন করা, খুতবা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা, খুতবা চলাকালীন কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকা, জুমার দিনে যেকোনো সময় সূরা কাহফ তেলাওয়াত করা এবং জুমার দিনে আল্লাহ তায়ালার কাছে বিশেষভাবে প্রার্থনা করা।
এ ছাড়া আরও অনেক আমল রয়েছে। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বর্তমানে জুমার নামায মুসলমানদের কাছে অবহেলিত। আজানের পরও মসজিদগুলো ফাঁকা থাকে। খুতবার শেষ পর্যায়ে তড়িঘড়ি করে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করে। এরূপ করা শরিয়তের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয়।
তাই যাদের মধ্যে ঈমানের সামান্যতম চেতনা রয়েছে, তারা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান জুমাকে নিয়ে এমন অবহেলা করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন ||
লেখক: আজাদ আহমেদ
এএ