নতুন বইয়ের সাথে বাড়ছে বিক্রির ধুম
প্রকাশ: ২০১৬-০২-০৭ ১০:৪৯:২৩
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এখন আর শুধু ক্যাটালগ সংগ্রহ নয়, চলছে বই বিক্রির ধুম। কারণটাও বেশ স্পষ্ট। পুরো মেলা এরই মধ্যে সেজেছে নতুন বইয়ের সম্ভারে। প্রকাশনীগুলো তাদের বেশিরভাগ নতুন বই মেলায় তুলেছেন। তাই পাঠকদের চোখও এখন প্রিয় লেখকদের নতুন বইয়ের দিকে।
সপ্তাহ না পেরোলেও মেলার দুই প্রাঙ্গণ এখন জমজমাট। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুপুর থেকেই মানুষের পদচারণা দেখা যায়। ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা স্টল ঘুরে খোঁজ নেন তাদের পছন্দের বই, কেনেনও।
গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিন বাংলা একাডেমি মাত্র ৭টি নতুন বইয়ের খবর দেয়। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে নতুন বইয়ের সংখ্যা। বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, তৃতীয় দিন নতুন বই আসে ৬৩টি। চতুর্থ দিন ৯৩টি। পঞ্চম দিন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সেই সংখ্যা এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৬টিতে। ৬ষ্ঠ দিন শনিবার আসে ১৫৫টি নতুন বই। শনিবারও ছিল শিশুপ্রহর। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকের পদচারণায় মুখর ছিল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, মেলায় শনিবার পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা ২৮টি নতুন শিশুতোষ বই মেলায় এনেছে। তবে প্রকাশনা সংস্থাগুলো থেকে জানা যায়, এর সংখ্যা পঞ্চাশের অধিক। শনিবার সকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন খায়রুল আলম সবুজ, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম ও অপরেশ কুমার ব্যানার্জি। শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় ১৪৯ জন এবং উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় ৬০ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। শনিবার মেলায় এসেছিলেন কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বললেন, ‘এবার মেলা দেখে আমি আনন্দিত। গত বছর হরতালের কারণে মেলা নিয়ে মানুষের মনে সংশয় ছিল। এবার তা নেই। তাছাড়া অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের কারণেও মানুষের মাঝে সংশয় ছিল। কিন্তু এবার পাঠকের পদচারণায় মেলা ভরে উঠেছে।’ মেলার নিরাপত্তাব্যবস্থারও প্রশংসা করলেন তিনি।
অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের মেলার পরিসর নিয়ে সবাই সন্তুষ্ট। শুরু থেকেই মেলায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকায় বইপ্রেমীরা আসছেন কোনো দ্বিধা ছাড়াই।’
মেলায় প্রচুর দর্শনার্থীর আগমনে সন্তোষ প্রকাশ করেন অনন্যা প্রকাশনীর প্রধান মনিরুল হক। তিনি বলেন, ‘স্টল বিন্যাসের ক্ষেত্রে অনেকেই নিজের পছন্দমতো জায়গা দখল করেছে। লটারির ধার ধারেনি। এটা ঠিক না।’
শনিবার বিকেলে নালন্দা প্রকাশনীর সামনে এম আর মাহবুব রচিত ও সম্পাদিত ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসভিত্তিক বই ‘ভাষাসংগ্রামের স্মৃতি’ ও ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন’ দুটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন ভাষাসংগ্রামী অধ্যাপক ফুলে হোসেন, রওশন আরা বাচ্চু, আবদুল করিম পাঠান, এমএ জলিল ও ভাষা মতিনের স্ত্রী গুলবদন নেছা।
মাহবুব হক শাকিলের কাব্যগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব : অন্বেষা প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মন খারাপের গাড়ি’। শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ফকরুল আলম। বক্তব্য রাখেন অন্বেষা প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাট্যজন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, এ বইয়ের কবিতাগুলোর প্রায় সবই ব্যক্তিগত অনুভূতির কবিতা। কবি নিজের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে শব্দ ব্যবহারে একটু সতর্ক থাকা দরকার।
শামসুজ্জামান খান বলেন, শাকিলের কবিতায় শব্দের বিন্যাসে শিল্পিত বোধের অভিজ্ঞতা হয়। নিজের অনুভূতিতে মাহবুবুল হক শাকিল বলেন, একজন কবি বলতে যা বোঝায়, আমি তা কোনোদিনই ছিলাম না। কবিতায় অতিক্রম করা সময়কে ধরার চেষ্টা করেছি।
নতুন বই : শনিবার মেলায় নতুন ১৫৫টি বই এসেছে। এর মধ্যে গল্প ৩০, উপন্যাস ২৫, প্রবন্ধ ৯, কবিতা ৩৮, গবেষণা ১, ছড়া ৮, শিশুসাহিত্য ৭, মুক্তিযুদ্ধ ২, বিজ্ঞান ৮, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ৩, কম্পিউটার ১, ধর্মীয় ২, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ১ এবং অন্যান্য বিষয়ে ১৭টি। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে অন্যপ্রকাশ থেকে কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হকের ‘সেরা দশ গল্প’, অনন্যা থেকে ইমদাদুল হক মিলনের ‘ছোট সবুজ মানুষ’, অনুপম থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘অন্য জীবন’, বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে সৈয়দ শামসুল হকের ‘বালিকা চন্দ্রযান ও অন্যান্য’, আগামী থেকে আহমদ শরীফের ‘উজান স্রোতে কিছু আষাঢ়ে চিন্তা’, রোদেলা থেকে আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘নজরুল ইসলাম কবি ও কবিতা’, পবিত্র সরকারের ‘নাতী গনেশের বুড়ি’, আলম তালুকদারের ‘জোলার ছানা ভূতের ছানা’, রাতুল গ্রন্থ প্রকাশ থেকে দীপু মাহমুদের ‘তোতা’, জার্নিম্যান বুকস থেকে মুনতাসীর মামুনের ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাপুরুষ সৃষ্টি করেনি কখনও’ ও কথা প্রকাশ থেকে ‘জেনারেলের সঙ্গে’, আতিউর রহমানের ‘বঙ্গবন্ধু সহজপাঠ’, অনন্যা থেকে মহাদেব সাহার ‘হাতে অমৃতকুম্ভ পান করি বিষ’, মাহী প্রকাশন থেকে বেলাল চৌধুরীর ‘সেরা কিশোর গল্প’, অন্বেষা প্রকাশন থেকে ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের ‘হৃদয় আমার’, কথা প্রকাশ থেকে নাসির আলী মামুনের ‘আলাপন’, অনিন্দ্য প্রকাশনী থেকে মোশতাক আহমদের ‘ইলু পিশাচ’, আদর্শ থেকে প্রভাস আমীনের ‘স্পেটিংলি নাও’, পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স থেকে শাহরিয়ারের ‘বেসিক আলী আট’ ইত্যাদি বই।
মূল মঞ্চের আয়োজন : শনিবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ফোকলোর কর্মসূচি, অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. ফিরোজ মাহমুদ। আলোচনায় অংশ নেন ভারতের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক অসীমানন্দ গঙ্গোপাধ্যায়, শাহিদা খাতুন, নন্দলাল শর্মা এবং সাইফুদ্দীন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে অসীম সাহা’র পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সহজিয়া’র শিল্পীরা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী বারী সিদ্দিকী, আকরামুল ইসলাম, দিল আফরোজ রেবা, চন্দনা মজুমদার ও আবদুল হালিম খান।
আজকের আয়োজন : আজ বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘অনুবাদ কার্যক্রম, অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন এ বছর বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত অনুবাদক অধ্যাপক আবদুস সেলিম। আলোচনায় অংশ নেবেন ড. নিয়াজ জামান, অধ্যাপক কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, ড. ফকরুল আলম ও আবদুল্লাহ আল মামুন। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। এছাড়া প্রতিদিনকার মতো সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সানবিডি/ঢাকা/এসএস