বিসিএস রিটেনের জন্য পূর্ণাঙ্গ বইয়ের তালিকা এবং সিলেবাস
আপডেট: ২০১৬-০২-০৭ ১৯:৫৪:১৪
বাংলা
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) সূত্রে জানা গেছে, বাংলা প্রথম পত্রে থাকবে ১০০ নম্বর। অংশ নিতে হবে সাধারণ ও টেকনিক্যাল উভয় ক্যাডারের প্রার্থীদের। ব্যাকরণ অংশে বরাদ্দ ৩০ নম্বর। প্রশ্ন করা হবে শব্দ গঠন, বানান বা বানানের নিয়ম, বাক্য শুদ্ধি বা প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ, প্রবাদ প্রবচন ও বাক্য গঠন থেকে।
ভাবসম্প্রসারণ ও সারমর্ম লিখতে হবে। প্রতিটিতে নম্বর বরাদ্দ থাকবে ২০ করে। বাকি ৩০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য থেকে। এ অংশে শর্ট টাইপের প্রশ্ন হওয়ার বেশি সম্ভাবনা।
বাংলা দ্বিতীয় পত্র শুধু সাধারণ ক্যাডারের জন্য। এ অংশেও নেওয়া হবে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা। ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ, কাল্পনিক সংলাপ লিখন, পত্রলিখন, গ্রন্থ সমালোচনা-প্রতিটিতে ১৫ নম্বর করে মোট ৬০ নম্বর থাকবে। সবচেয়ে বেশি নম্বর বরাদ্দ রচনা লিখনে। এতে থাকবে ৪০ নম্বর। রচনা আসতে পারে সমসাময়িক কোনো ইস্যু, জাতীয় সমস্যা ও সমাধান. মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে।
ইংরেজি
ইংরেজি ২০০ নম্বরের পরীক্ষা উভয় ক্যাডারের জন্য। প্রথম পত্রে নতুন যোগ হয়েছে রিডিং কম্প্রিহেনশন। প্রথম পত্রের পুরো ১০০ নম্বরের উত্তর করতে হবে অনুচ্ছেদটি বুঝে পড়ে। ৩০ নম্বরের যাচাইমূলক প্রশ্ন থাকবে। গ্রামারের ব্যবহার থেকে থাকবে ৩০ নম্বর। অনুচ্ছেদের সারাংশ লিখতে হবে ১০০ শব্দের মধ্যে। এতে বরাদ্দ থাকবে ২০ নম্বর। অনুচ্ছেদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইংরেজি পত্রিকায় ছাপার উপযোগী পত্র লিখতে বলা হবে। এতেও থাকবে ২০ নম্বর।
দ্বিতীয় পত্রের ১০০ নম্বরের অর্ধেক অর্থাৎ ৫০ নম্বর বরাদ্দ থাকবে রচনা লিখনে।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) জানায়, নির্ধারিত বিষয়ে নির্দিষ্ট শব্দের মধ্যে রচনা এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে, যেন মূলভাব ও ধারণা পুরোপুরি ফুটে ওঠে। খেয়াল রাখতে হবে বানান ও বাক্যের শুদ্ধতার দিকেও। সমসাময়িক ও জাতীয় ইস্যু থেকেই রচনা আসার বেশি সম্ভাবনা।
বিগত বছরগুলোতে ইংরেজি প্রথম পত্রে অনুবাদ থাকলেও এ বছর থেকে উত্তর করতে হবে দ্বিতীয় পত্রে। একটি অনুচ্ছেদকে বাংলা থেকে ইংরেজি এবং অপর একটি অনুচ্ছেদকে ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করতে হবে। বরাদ্দ থাকবে ২৫ করে মোট ৫০ নম্বর। ইংরেজি বই, দৈনিক, ম্যাগাজিন নিয়মিত পড়লে প্রস্তুতিতে দারুণ কাজে দেবে। ইংরেজি খবর ও বিবিসি শুনলে প্রস্তুতিতে সহায়ক হতে পারে।
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ প্রসঙ্গ থেকে সাধারণ ও প্রফেশনাল-উভয় ক্যাডারের প্রার্থীদের ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থা, জনসংখ্যা, জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, অর্থনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, দারিদ্র্য বিমোচন, ভিশন ২০২১, পরিবেশ ও প্রকৃতি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও তার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, সংবিধান, সরকারের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, আইন ও আইনসভা, রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র, সচিবালয়, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার কাঠামো, বিচারব্যবস্থা, পররাষ্ট্রনীতি এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশ, বৈদেশিক সাহায্য, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, রাজনৈতিক দল, নির্বাচনী ব্যবস্থা, তথ্য অধিকার, ই-গর্ভনেন্স, এনজিও, বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। বাজারে সাধারণ জ্ঞানের অনেক বই পাওয়া যায়। নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা পড়তে হবে, খবর শুনতে হবে। চোখ রাখতে হবে সাধারণ জ্ঞানবিষয়ক মাসিক পত্রিকায়।
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ
আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গও উভয় ক্যাডারের জন্য। ১০০ নম্বরের প্রশ্ন করা হবে তিনটি বিভাগে। প্রথম অংশে সাধারণ ধারণা ও অর্জিত জ্ঞান থেকে ১০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে (প্রশ্ন থাকবে ১২টি)। প্রতিটি প্রশ্নে ৪ করে মোট বরাদ্দ থাকবে ৪০ নম্বর। দ্বিতীয় অংশে ১৫ নম্বরের তিনটি বিশ্লেষণমূলক প্রশ্নোত্তর লিখতে হবে (প্রশ্ন থাকবে চারটি), প্রতিটি প্রশ্নে ১৫ নম্বর করে মোট থাকবে ৪৫ নম্বর। তৃতীয় অংশে বাকি ১৫ নম্বরের জন্য থাকবে একটি সমস্যা সমাধানমূলক প্রশ্ন। এর কোনো বিকল্প থাকবে না।
প্রথম অংশে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নানা বিষয়, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে যোগসূত্র, আধুনিক রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের ধরন, সার্বভৌমত্ব, ক্ষমতা ও বিশ্ব নিরাপত্তা, জাতীয়তাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ, বিশ্বায়ন, পররাষ্ট্রনীতি, কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড, স্বাধীনতা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের নানা বিষয় যেমন-বাণিজ্য, মুক্ত বাণিজ্য, বৈদেশিক সাহায্য, ঋণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ, বৈশ্বিক দারিদ্র্য, এমডিজি, পরিবেশগত সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ (যেমন জলবায়ু পরিবর্তন) থেকে প্রশ্ন থাকতে পারে।
দ্বিতীয় অংশে জাতিসংঘের কর্মপদ্ধতি, প্রধান ক্ষমতাধর দেশগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান, বিশ্বের প্রধান সমস্যা ও দ্বন্দ্ব, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রভৃতি বিষয়ে প্রশ্ন আসতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বৈশ্বিক পরিবর্তন, অস্ত্র ব্যবস্থাপনা, বৈদেশিক সাহায্য বিষয়ে থাকতে পারে তৃতীয় অংশের সমস্যা সমাধানমূলক প্রশ্ন।
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়ে ৫০ করে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় বসতে হবে সাধারণ ও প্রফেশনাল উভয় ক্যাডারের প্রার্থীদের। গাণিতিক যুক্তি অংশে ১০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫। প্রশ্ন করা হবে পাটিগণিত ও বীজগাণিতিক সমাধান, জ্যামিতি থেকে। অভেদ, গড়, শতকরা, সরল, সুদকষা, এলসিএম, জিসিডি, অনুপাত, লাভ-ক্ষতি, বীজগাণিতিক সূত্র, রৈখিক ও দ্বিঘাত সমীকরণ, লিনিয়ার ও এর গুণক নির্ণয়, দ্বিঘাত সমীকরণ, সূচক ও লগারিদম, গাণিতিক ও জ্যামিতিক ক্রম, ত্রিভুজ, বৃত্ত ও পিথাগোরাসের উপপাদ্য, আয়তন নির্ণয়, কার্টেসিয়ান জ্যামিতির দূরত্ব, সরলরেখা সমীকরণ, ত্রিকোণমিতিক অনুপাত ও ফাংশন, সেট, ভেন ডায়াগ্রাম, হিসাবের মূলনীতি এবং প্রাথমিক সম্ভাব্যতা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।
মানসিক দক্ষতা অংশে থাকবে ভার্বাল বা মৌখিক যুক্তি, অ্যাবস্ট্রাক্ট ও মেকানিক্যাল রিজনিং, স্পেস রিলেশন, গাণিতিক দক্ষতা, ভাষা ও বানান সম্পর্কিত প্রশ্ন। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতার ওপর অনেক সহায়ক বই পাওয়া যায় বাজারে। টপিকস অনুসারে প্রস্তুতি নিলেই এ অংশে ভালো করা যাবে।
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কেবল সাধারণ ক্যাডারের জন্য। এ বিষয়ে পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের। নম্বর বিভাজন সাধারণ বিজ্ঞান ৬০, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি ২৫ এবং ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস টেকনোলজি ১৫ নম্বর। সাধারণ বিজ্ঞানের প্রশ্ন করা হবে আলো, শব্দ, চুম্বকত্ব, অম্ল ক্ষার, লবণ, পানি, বায়ুমণ্ডল, খাদ্য ও পুষ্টি, রোগ ও স্বাস্থ্যসেবা, জৈব প্রযুক্তি থেকে। কম্পিউটার টেকনোলজি, ইনফরমেশন টেকনোলজির নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি অংশে। ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকসের নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস টেকনোলজি থেকে।
পেশাসংশ্লিষ্ট বিষয়
প্রফেশনাল বা টেকনিক্যাল ক্যাডারে সংশ্লিষ্ট পদের জন্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। যে যে বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, সে বিষয় বেছে নিতে হবে। নিজের বিষয়ে ভালো ধারণা থাকলেই এ পরীক্ষায় ভালো করা যায়। সিলেবাসে কোন বিষয়ে কী কী টপিক পড়তে হবে তার একটি নির্দেশনা আছে। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সিলেবাস অনুসারে বারবার ঝালিয়ে নিতে হবে আগের পড়া বিষয়গুলো। বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির জন্য অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের বই পড়লেই ভালো করা যাবে।
সূত্র: কালেরকণ্ঠ
সানবিডি/ঢাকা/রাআ