বিশ্বব্যাংকের বিমা খাত উন্নয়ন প্রকল্পে সম্পৃক্ত হচ্ছে দেশের বেসরকারি বিমা কোম্পানি
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-১২-২০ ১৭:০০:১৯
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান বাংলাদেশের বিমা খাত উন্নয়ন প্রকল্প (বিআইএসডিপি)’র সাথে এবার বেসরকারি লাইফ ও নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত তদারক কমিটির বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি, সাধারণ বিমা করপোরেশন ও জীবন বিমা করপোরেশন এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে শুরু হওয়া ৬৩২ কোটি টাকার এই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে দেশের বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক ও বিআইএসডিপি’র তদারক কমিটির সভাপতি এস এম শাকিল আখতার বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রকল্পে বর্তমানে শুধু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৪টি প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত রয়েছে। যেখানে ৭৯টি বেসরকারি লাইফ ও নন-লাইফ বিমা কোম্পানি বাদ রয়েছে।
বেসরকারি খাতের এসব কোম্পানিকে বাদ দিয়ে দেশের বিমা খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি খাতের ৭৯টি লাইফ ও নন-লাইফ বিমা কোম্পানিকে এবার বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশের বিমা খাত উন্নয়ন প্রকল্পে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এস এম শাকিল আখতার জানান, বাংলাদেশের বিমা খাত উন্নয়ন প্রকল্প (বিআইএসডিপি)’র আওতায় বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোর উন্নয়নে কি কি সুবিধা দেয়া যাবে সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে তদারক কমিটির প্রথম বৈঠকে। যা আগামী ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বিআইএসডিপি সূত্রে জানা গেছে, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি, সাধারণ বিমা করপোরেশন এবং জীবন বিমা করপোরেশনের পেশাদারিত্ব এবং প্রযুক্তিগতভাবে আরো সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের বিমা খাত উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় বিশ্বব্যাংক।
বাংলাদেশের বিমা খাত উন্নয়নে নেয়া ৬৩২ কোটি টাকার এই প্রকল্পে সরকার অর্থায়ন করবে ১১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন করবে ৫১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর। প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয়েছে ২৭ ফেব্রুয়ারি। বিশ্বব্যাংকের সাথে চুক্তি হয় ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল এবং সরকারের সাথে হয় ৪ জুলাই। একই বছরের ৮ জুলাই প্রকল্পের প্রজেক্ট ইফেক্টিভনেস ঘোষণা হয় এবং ২৭ আগস্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিট গঠন হয়।
বিআইএসডিপি’র আওতায় যেসব কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কর্মপদ্ধতির সার্বিক অটোমেশন বাস্তবায়ন, ঝুঁকিভিত্তিক কার্যকর তত্ত্বাবধান পদ্ধতি প্রবর্তন, তথ্য প্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিক অবকাঠামো নির্মাণ, মরটালিটি এবং মরবিডিটি টেবিল প্রণয়ন, বিমা তথ্য বিশ্লেষণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র বাস্তবায়ন।
এ ছাড়াও বিমা ব্যবস্থাপনা, নীতি ও প্রতিবিধি, তত্ত্বাবধান পদ্ধতি প্রভৃতি বিশেষায়িত ক্ষেত্রে সামর্থ্য বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ, ইন্স্যুরেন্স কোর প্রিন্সিপল বাস্তবায়ন, বিদ্যমান আইনের আলোকে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের গভার্মেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক ও সাংগঠনিক কাঠামো আধুনিকায়ন, গ্রাহকদের বিমা দাবি সংক্রান্ত অভিযোগ ওয়ান-স্টপ সার্ভিস প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি করাসহ ইউনিফাইড মেসেজিং প্লাটফরম স্থাপনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন।
আইনী কাঠামো শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বিমা আইন ২০১০ এর আওতায় ১৩টি বিধিমালা এবং ৩১টি প্রবিধানমালাসহ মোট ৪৪টি বিধিমালা ও প্রবিধানমালা প্রণয়ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যার মধ্যে ৮টি বিধিমালা ও ১৪টি প্রবিধানমালা সম্পন্ন হয়েছে। এসব বিধি ও প্রবিধান সম্পন্ন করার মাধ্যমে আইনী কাঠামো শক্তিশালীকরণ করার বিষয়টিও এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির আধুনিকায়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- বিমা বিষয়ক আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচি প্রণয়ন, ইন্স্যুরেন্স একাডেমির কোর্স কারিকুলাম ও ম্যানুয়েলস যুগোপযোগীকরণ, ইন্স্যুরেন্স একাডেমির প্রশিক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধি ও তথ্য প্রযুক্তি অবকাঠামো নির্মাণ।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের বিমা খাতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জীবন বিমা করপোরেশন ও সাধারণ বিমা করপোরেশন ছাড়াও ৩৪টি বেসরকারি লাইফ বিমা কোম্পানি এবং ৪৫টি বেসরকারি নন-লাইফ বিমা কোম্পানিসহ সর্বমোট ৮১টি বিমা প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা করছে। এর মধ্যে বিদেশি মালিকানাধীন একটি লাইফ বিমা ও দেশি-বিদেশি যৌথ উদ্যোগের একটি লাইফ বিমা কোম্পানি রয়েছে।
সূত্র: ইন্স্যুরেন্স বিডি
এএ