শেষ হলো সুকুকের আবেদন, শিগগির লেনদেন শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-১২-২০ ২৩:৫২:০৪


সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আবেদন গ্রহণ শেষ হলো বেসরকারি খাতের প্রথম শরীয়াহ ভিত্তিক বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড। গত ১৫ ডিসেম্বর কোম্পানির হিসেবে সব টাকা জমা হয়েছে। ফলে খুব শিগগির দেশের পুঁজিবাজারে চালু হতে যাচ্ছে প্রথম সুকুক বন্ডের লেনদেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএসইসি সূত্র মতে, প্রতিষ্ঠানটি ৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড ছেড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এ টাকায় বেক্সিমকো তাদের টেক্সটাইল ব্যবসা সম্প্রসারণ করবে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। বেসরকারি পর্যায়ে এটিই প্রথম সুকুক বন্ড। এর আগে সুকুক বন্ড ছেড়ে সরকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। এরই মধ্যে দুই দফায় সেই অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশের ইতিহাসে বেসরকারি খাতে প্রথম হলো বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক। এটা নিয়ে বাজারে অনেক ধরণের নেতিবাচক প্রচারনা ছিলো। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পুরো ৩ হাজার কোটি টাকার আবেদন জমা পড়েছে। ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়বে বলে মনে করেন তারা।

পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন 

Sunbd Newsক্যাপিটাল নিউজক্যাপিটাল ভিউজস্টক নিউজশেয়ারবাজারের খবরা-খবর

সুকুকের বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ সানবিডিকে বলেন, পুঁজিবাজারে আরও একটি নতুন ইতিহাস রচিত হলো। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পুঁজিবাজারে পণ্যের বৈচিত্র নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এটি তার ফল। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিকল্প একটি পণ্য চালু হলো। আগামীতে আরও অনেক সুকুক আসবে।

তিনি বলেন, বাজারে আরও নতুন পণ্য নিয়ে আসতে কাজ করছে কমিশন। আশা করছি সবার সহযোগিতার মাধ্যমে পুঁজিবাজার একটি কাংখিত লক্ষ্যে পৌছবে। দেশের আর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পুঁজিবাজার বড় ধরণের ভূমিকা পালন করবে।

এ বিষয়ে ইস্যু ম্যানেজার সিটি ব্যংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরশাদ হোসেন সানবিডিকে বলেন, বেসরকারি খাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম গ্রিন সুকুক বন্ড এটি। এতো বড় কাজ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। কাজটি করার এবং আমাদের উপর আস্থা রাখার জন্য কৃতঙ্গতা প্রকাশ করছি  প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানের কাছে। অনেক জটিল কাজটি সল্প সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারায় কৃতঙ্গতা প্রকাশ করছি বাংলাদেশ ব্যাংক,বিএসইসি,ডিএসই,সিএসইসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে।

তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নতুন আরেকটি পণ্যের যাত্রা শুরু হলো। এর পর আরও প্রতিষ্ঠান ইসলামিক সুকুক বাজারে নিয়ে আসবে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের বিকল্প বিনিয়োগের জায়গা তৈরি হবে। কাজটি শেষ হওয়ার আগ থেকেই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর যোগাযোগ শুরু করেছে। এর মধ্যে মালোয়শিয়া, সিঙ্গাপর এবং দুবাই এর অনেক বিনিয়োগকারীরা যোগাযোগ করেছে। তারা সুকুকের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে চায়।

উল্লেখ্য বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুকের ৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৭৫০ কোটি টাকা আইপিওতে উত্তোলনের জন্য বরাদ্দ ছিলো। বাকি ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকার প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। এরমধ্যে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের থেকে ৭৫০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের থেকে ১৫০০ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য বরাদ্দ ছিলো। গত ১৬ আগস্ট সুকুকের আবেদন গ্রহণ শুরু হয়।

যারা যারা সুকুকে আবেদন করেছে: দেশের প্রথম গ্রিন সুকুক বন্ডে আবেদন করেছে, জনতা ব্যাংক ২২০ কোটি,দ্যা সিটি ব্যাংক ২০০ কোটি,রুপালি ব্যাংক লিমিটেড ২০০ কোটি, অগ্রনী ব্যাংক লিমিটেড ১৫০ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংক ১০০ কোটি,শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ১০০ কোটি, ঢাকা ব্যাংক ১০০ কোটি,ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড ১০০ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৮০ কোটি, এবি ব্যাংক লিমিটেড ৭০ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৬০ কোটি,ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৫০ কোটি, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ ৫০ কোটি, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড ৫০ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ৫০ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৫০ কোটি,উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড ৪০ কোটি,এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড ৩০ কোটি, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ২৫ কোটি, সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্স  ২৫ কোটি, সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেড ২০ কোটি, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ২০ কোটি,বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ৮ কোটি, সোনালি লাইফ ২ কোটি, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ২ কোটি, স্টান্ডার্ড ব্যাংক ১ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর্পোরেট ৩০০ কোটি টাকা। এখানে মোট টাকার পরিমাণ  ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। বাকী টাকার মধ্যে বর্তমান শেয়ারহোল্ডাররা ২ কোটি টাকা,আন্ডাররাইটার ১৩৫ কোটি টাকা,পাবলিক সাবক্রিপসন ৪২৩ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে ৩৩৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

সুকুকটির ট্রাস্টি হিসেবে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এবং ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে যথাক্রমে সিটি ব্যংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস ও অগ্রণী ইক্যুইটি এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কাজ করছে।