যুক্তরাষ্ট্রে চরমপন্থি হামলায় অংশ নেয় সেনাসদস্যরাও
আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-১২-২২ ১০:৪৫:০৫
যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। মহামারি রূপ নিয়েছে হত্যা-হানাহানি। কমছে না জাতিগত বিদ্বেষ, বর্ণবাদও। তেমন কোনো কারণ ছাড়াই অবলীলায় একজন আরেকজনকে গুলি করে মেরে ফেলছে।
চলতি বছর দেশটির ছোট-বড় প্রায় ডজনখানেক শহরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রেকর্ড হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ও মহামারি সৃষ্ট নানাবিধ মানসিক ট্রমা, অর্থনৈতিক ক্ষতি ও বন্দুকের ঢালাও ব্যবহার পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে।
চলতি সপ্তাহে এএফপির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এদিকে মার্কিন সরকারের এক রিপোর্ট মতে, যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ উগ্রবাদী হামলাও বাড়ছে। এসব হামলায় অংশ নিচ্ছে দেশটির সেনারাও। সোমবার এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানায় পেন্টাগন। এদিন সামরিক বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের জন্য নতুন নির্দেশনা প্রকাশ করেছে প্রতিরক্ষা বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক অস্থিরতা বিষয়ে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, হত্যা ও হানাহানিতে চলতি বছর রেকর্ড গড়েছে পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া শহর। শহরটিতে এ বছর ৫৩৫টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে যা ১৯৯০ সালের পর গত ৩০ বছরে সর্বোচ্চ। শুধু তাই নয়, একসময় ‘ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার শহর’ খ্যাত ফিলাডেলফিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অপর দুই বৃহত্তম শহর নিউইয়র্ক ও লস এঞ্জেলেসকেও ছাড়িয়ে গেছে।
সোমবার পেন্টাগন জানায়, গত এক বছরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রায় ১০০ সদস্য নিষিদ্ধ চরমপন্থি কার্যকলাপে অংশ নিয়েছিল। ২০২১ সালে মার্কিন সংসদের হামলার ঘটনায় সাবেক সেনা সদস্যরাও জড়িত ছিলেন। উদ্রবাদ বন্ধে পরিষেবা সদস্যদের জন্য নতুন নির্দেশিকাও প্রকাশ করেছে মার্কিন সেনা সদর দপ্তর।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন পার্লামেন্টে হামলার ঘটনার পর সেনা সদস্যদের চরমপন্থা মোকাবিলায় প্রতিরক্ষা বিভাগের নীতিগুলো পর্যালোচনা করার নির্দেশ দেন পেন্টাগন প্রধান লয়েড অস্টিন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের পাশাপাশি ৬ জানুয়ারি ইউএস ক্যাপিটলে হামলায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর কয়েক ডজন সাবেক সদস্য অংশ নিয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রায় ১০০ সক্রিয় দায়িত্বরত বা রিজার্ভ সদস্য গত এক বছরে নিষিদ্ধ চরমপন্থি কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছে। তবে এই সদস্যরা কোন ধরনের কার্যকলাপে যুক্ত ছিল তা প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এ সময় তিনি নিষিদ্ধ কার্যকলাপের উদাহরণ হিসাবে ‘সরকার উৎখাত বা অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ’ শব্দগুলো ব্যবহার করেন।
এক বিবৃতিতে অস্টিন বলেন, ‘প্রতিরক্ষা বিভাগের বেশির ভাগ সদস্যই এই দেশের সম্মান রক্ষা এবং দেশসেবায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা মার্কিন সংবিধানকে সমুন্নত রাখার যে শপথ নিয়েছিল, আমার বিশ্বাস খুব কম সদস্যই এই শপথ লঙ্ঘন করেছে।’ পর্যালোচনায় নিষিদ্ধ চরমপন্থি কার্যকলাপ সম্পর্কে সেনা সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়।
নতুন নীতিতে সন্ত্রাসবাদের সমর্থন করা বা সরকার উৎখাত সমর্থন করা থেকে শুরু করে কোনো চরমপন্থি গোষ্ঠীর পক্ষে তহবিল সংগ্রহ বা সমাবেশ করা বা পছন্দ করা বা সোশ্যাল মিডিয়াতে চরমপন্থি মতামত প্রকাশ বা শেয়ার করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে দুটো ধাপকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। পূর্ববর্তী নীতিগুলোতেও চরমপন্থি কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ছিল কিন্তু এত বিশদ বিবরণ ছিল না। কাউকে দায়বদ্ধ করার জন্য দুটো ধাপও নির্দিষ্ট করা হয়নি।
সেনাবাহিনী দীর্ঘ দিন ধরে সৈন্যদের মধ্যে অল্পসংখ্যক শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী এবং অন্য চরমপন্থিদের সম্পর্কে সচেতন ছিল। কিন্তু প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন এবং অন্য নেতারা ৬ জানুয়ারি বিদ্রোহের সময় সামরিক ভেটেরান্স এবং কিছু বর্তমান সেনাসদস্য উপস্থিত ছিলেন তা স্পষ্ট হওয়ার পর বাহিনীতে চরমপন্থা নির্মূল করার জন্য একটি বৃহত্তর প্রচারণা শুরু করেন।
সানবিডি/ এন/আই