দুই সপ্তাহে আইপিও অনুমোদন:বিএসইসি চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-১২-২২ ১৯:০৮:০৬


বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) কোম্পানি মাত্র দুই সপ্তাহে অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে এর জন্য বিএসইসির নির্দেশিত সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে দিতে হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের (ডিএসই) উদ্যোগে বাজার উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিভিন্ন গ্রুপ অফ কোম্পানিজেরর চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং চেম্বার প্রতিনিধি বৃন্দের সাথে  “কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সম্ভাবনা ও সুযোগ” শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য পুঁজিবাজারের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের সুযোগ ও সুবিধা সম্পর্কে করপোরেট কোম্পানিগুলোকে অবগত করা এবং এ সংক্রান্ত পলিসি প্রনয়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা৷ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন,বর্তমান সরকার খুবই ব্যবসা বান্ধব সরকার। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নির্দেশনা হলো নিয়ম নীতির মধ্যে ব্যবসাকে অগ্রাধিকার দিয়ে জনগনকে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা ও সহযোগিতা প্রদান করা। আইপিও’র অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজীকরণের জন্য বিএসইসি একটি চেকলিস্ট দেয়া আছে৷ সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দিলে বিএসইসি’র আইপিও অনুমোদন করতে ২ সপ্তাহের বেশি প্রয়োজন হবে না৷ কোম্পানিগুলো চেক লিস্ট কাগজপত্র জমা না দেয়ায় অনুমোদনের সময় বেশি লাগে৷ বিএসইসি’র কার্যক্রম অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং এর প্রত্যেকটি ডেস্কই হলো হেল্প ডেস্ক৷ উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার জন্য আমরা প্রস্তুত৷

তিনি আরও বলেন, গত ১ (এক) বিএসইসি বছরে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড ও আইপিও অনুমোদন দিয়েছে৷ অনেকে সমালোচনা করেন যে, অনেক আইপিও অনুমোদন দেয়া হচ্ছে৷ এছাড়াও পুঁজিবাজার ওভার ভ্যালুড হচ্ছে৷ একই সাথে সূচক বাড়ছে৷ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় দেশের পুঁজিবাজার অনেক পিছিয়ে আছে৷ সব কিছুতেই আমরা হীনমন্যতা বোধ করি৷ দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে, সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুঁজিবাজারকে আমরা যদি এগিয়ে নিতে না পারি তাহলে এই দেশের উন্নতি হবে না৷

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন,পুঁজিবাজার হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদী অর্থ সংগ্রহের জায়গা৷ আর ব্যাংক হচ্ছে স্বল্প মেয়াদী ঋণের জায়গা৷ ব্যাংকে গ্রাহকগন সর্বোচ্চ ৩ বছরের জন্য এফডিআর রাখে৷ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানকে ১৫ বছরের ঋণ দেয়৷ গ্রাহক যদি প্রয়োজনে টাকা তুলতে আসলে ব্যাংক তারল্য সমস্যায় পড়ে৷ এছাড়া পৃথিবীতে কম ব্যক্তিই আছে যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিয়মিত পরিশোধ করতে পারে৷ আমরা পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। পুঁজিবাজারকে অর্থ যোগানের নির্ভরযোগ্য উৎসে রূপান্তর করতে চাই। দীর্ঘ মেয়াদী অর্থ যোগানের জন্য আমরা পুঁজিবাজারে বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আসছি৷

বিএসইসি’র কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা এ বছর স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি। আমরা যখন স্বাধীন হয়েছিলাম তখন ৯টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি ছিল। যার সম্মিলিত মূলধন ছিল ১৩ কোটি টাকা। কত সামান্য মূলধন নিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম। আজ ডিএসই’র মার্কেট ক্যাপ প্রায় ৬৫ বিলিয়ন ডলার। আজ ডিএসইতে ৩০০ এর বেশি কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে। তাই আমাদের হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। উদ্যোক্তারা অত্যন্ত সম্মানিত গোষ্ঠী। আমরা সরকারী কর্মচারী হিসেবে সরকারের নিয়ম অনুযায়ী আপনাদের সেবা প্রদানের চেষ্টা করব। আমরা উদ্যোক্তাদের নিয়ম অনুযায়ী সাহায্য করতে চাই।

তিনি আরও বলেন, আপনারা আপনাদের প্রয়োজনটা আমাদের বলেন। আমরা আপনাদের সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। আপনাদের ব্যক্তিগতসহ যে কোন সমস্যা আমরা দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করবো। নারীদের জন্য বিশেষায়িত বন্ড চালু করার জন্য কমিশনের গভীর আগ্রহ রয়েছে। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদেরকে যদি সাথে নিয়ে আসতে না পারি, আমাদের এই সেবাগুলো যদি তাদের কাছে পৌঁছে দিতে না পারি, তাহলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো না। নারীদের কিভাবে বিশেষ সহায়তা প্রদান করা যায় সে বিষয়ে কমিশন চেষ্টা করছে। পরিশেষে তিনি সবাইকে সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন৷

এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মুর্শিদী, এমপি বলেন, আমরা যে বড় শিল্প গ্রুপ হয়েছি তা সম্ভব হয়েছে দেশের স্বাধীনতার কারণে৷ দেশের উন্নয়নের জন্য আমাদের সকলকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে৷ যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ বর্তমানে আইটি কোম্পানিগুলো খুব ভালভাবে কাজ করছে৷ তাদেরকে কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে ব্যবসা বৃদ্ধি করার সুযোগ দিতে হবে৷ এছাড়াও সেক্টর অনুযায়ী সকলকে নিয়ে কাজ করতে হবে৷ এছাড়াও পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধি যাতে সঠিকভাবে হয় সে দিকে নজর দিতে হবে৷ তাহলে পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে৷ এর জন্য আমাদের হতাশ না হয়ে ইতিবাচক চিন্তাধারা বজায় রেখে কাজ করতে হবে৷ নীতিভ্রষ্ট না হয়ে যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করলে বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছেন তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা যাবে৷

স্বাগত বক্তব্যে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক আমিন ভূইয়া বলেন, আপনারা লক্ষ করেছেন ২০২০ সালের মে মাস থেকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার পরিবর্তিত হচ্ছে। এই সময়ে পুঁজিবাজারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ডিএসইতে ও ভাল কিছুর জন্য পরিবর্তন হচ্ছে। যে “পাঁচ পি”র উপর ডিএসই তার ডিজিটাল পরিবর্তন আনয়নে কাজ করবে তা হল-পিপল, প্লাটফর্ম, প্রোডাক্ট, প্রসেস এবং পলিসি। এই পাঁচপির সঠিক সম্মিলন এবং সমন্বিত বাস্তবায়নে শেয়ারহোল্ডারদের লাভবান করার পাশাপাশি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

প্রথম পি হলো পিপল- পিপল হলো আমাদের কর্মকর্তা, কর্মচারী, ব্রোকার, বিনিয়োগকারী এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। এক্ষেত্রে আমরা যে উন্নয়ন করি তার ফল যাতে সকলে পায়। দ্বিতীয় পি হলো প্লাটফর্ম- আমরা প্লাটফর্মে যে বিনিয়োগ করবো নিশ্চিত করতে হবে যে এটি বিনিয়োগকারী, ব্রোকারসহ অন্যান্য সকলের প্রয়োজন পূরণ করবে। আমরা পরিবর্তনটি আনবো ভালোর জন্য। তৃতীয়পি হলো প্রোডাক্ট-বর্তমানে আমাদের দুইটি প্রোডাক্ট রয়েছে। একটি হলো ইক্যুইটি, অন্যটি হলো বন্ড। আমাদের মার্কেটে আরও প্রোডাক্ট এর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। আশা করি আগামীতে ডিএসইতে আরও অনেক প্রোডাক্ট থাকবে৷ চতুর্থ পি হলো প্রসেস- আমাদের চিন্তা করতে হবে আমাদের যে প্রসেসই গ্রহণ করি তা যেন সকলের উপকারে আসে৷ সর্বশেষ পি হলো পলিসিজ। পুঁজিবাজারের প্রধান রেগুলেটর হলো বিএসইসি৷ এছাড়াও ডিএসই এবং সিএসইও পুঁজিবাজারের রেগুলেটর৷ মূলতঃ বিএসইসি পুঁজিবাজারের জন্য পলিসি দেয় তা খুব বিনিয়োগ বান্ধব৷ ডিএসই এই পলিসিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে৷ তিনি আরও বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে কোম্পানিগুলোর সাথে কথা বলবো৷ তাদের থেকে শুনবো এবং পুঁজিবাজরে তালিকাভুক্ত হতে তাদের যথাসম্ভব গাইড দিবো এবং সহায়তা করবো৷ যাতে তারা দ্রুত তালিকাভুক্ত হতে পারে। আমি সকলের মঙ্গল কামনা করে আমার বক্তব্য শেষ করছি।

ডিএসই’র চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে রেজিষ্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে প্রায় ২ লক্ষাধিক কোম্পানি নিবন্ধিত রয়েছে৷ এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার কোম্পানি আয়কর দেয়৷ পক্ষান্তরে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত আছে মাত্র ৩৪৭টি কোম্পানি৷ আমরা দেশের বাহিরে কয়েকটি রোড শো করেছি, যাতে বিদেশি কোম্পানিগুলো দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে৷ আমাদের দেশে অনেক বড় বড় গ্রুপ অব কোম্পানিজ আছে৷ পুঁজিবাজারে কোম্পানিসমূহ তালিকাভুক্ত হলে কি কি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় তা আরও বিশদভাবে শিল্পদ্যোক্তাদের কাছে উপস্থাপন করা হবে৷ সেই লক্ষ্যে আমরা প্রয়োজনে টিম গঠন করে এ ধরনের সভা সেমিনার অব্যাহত রাখব।

মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের পটভূমি; কাঠামোগত ওভারভিউ; ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালন কাঠামো; বাংলাদেশ পুঁজিবাজার: পণ্য এবং বোর্ডসমুহ; বাংলাদেশ পুঁজিবাজার তহবিল সংগ্রহ প্রক্রিয়া: ইক্যুইটি অর্থায়ন; আইপিওর জন্য সাধাণ প্রয়োজনীয়তা; বাংলাদেশ পুঁজিবাজার তহবিল সংগ্রহ প্রক্রিয়া: ঋণ অর্থায়ন; বাংলাদেশ পুঁজিবাজার তহবিল সংগ্রহ প্রক্রিয়া: মিউচুয়াল ফান্ড এবং ইটিএফ; বাংলাদেশ পুঁজিবাজার তহবিল সংগ্রহ প্রক্রিয়া: বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল; বাজার মূলধন টু জিডি; আইপিও’র সংখ্যা; উদ্যোক্তাদের পুঁজিবাজারে অর্থায়ন; বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের জন্য উদীয়মান বাজারের গুরুত্ব; উদীয়মান বাজারে সম্ভাব্য স্থানান্তর সুবিধা; পুঁজিবাজারের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধির মাইক্রো স্তরের সুবিধা; কোম্পানির পোস্ট লিস্টিং মূল্যায়ন; পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থায়নের ম্যাক্রো স্তরের সুবিধা; তারল্যের চক্রাকার সুবিধা; পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থায়নে অনীহা: পর্যবেক্ষণ বনাম বাস্তবতা৷

পরে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ডেফোডিল গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মোঃ সবুর খান, আব্দুল মোমেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. এস. এম মাঈনুদ্দিন মোনেম, র‌্যাঙ্কস গ্রুপের পরিচালক মিসেস রোমানা রউফ চৌধুরী, বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মোঃ সাইফুর রহমান, মোহাম্মদ রেজাউল করিম এবং ডিএসই’র পরিচালক মো. শাকিল রিজভী৷