আবারো আলোচনায় কক্সবাজারে আরেক হোটেলে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-১২-২৭ ১৫:২১:০৪
কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে আটকে রেখে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনার রেশ না কাটতেই পর্যটন নগরীর আরেকটি হোটেলে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছে। তবে, ঘটনার দুই সপ্তাহ হয়ে গেলেও অভিযুক্তরা গ্রেফতার হননি। উল্টো মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ধর্ষণের শিকার কিশোরী ও তার পরিবারের।
গত ১৩ ডিসেম্বর তুলে নিয়ে শহরের কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনের একটি হোটেলে আটকে রেখে তাকে দুদিন ধর্ষণ করে বখাটে এক যুবক। এ ঘটনায় ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজার সদর থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করা হয়। তবে মামলার প্রায় ১০ দিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ বলছে, অভিযুক্তরা পলাতক।
কক্সবাজার সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হালিম জানান, গত ১৮ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করে মামলাটি করেন।
আসামিরা হলেন-কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে মো. আশিক (২৭) ও তার মা রাজিয়া বেগম (৫৫), বাবা নজরুল ইসলাম (৬০), ভাই মো. কামরুল (৩৪) এবং শহরের ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকার মো. হায়দার ওরফে হায়দার মেম্বারের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (৪০)। ভুক্তভোগী ওই কিশোরী (১৪) কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ওই কিশোরী এক প্রতিবেশীর বাড়িতে যাওয়ার সময় অভিযুক্ত আশিকসহ তিন চারজন যুবক জোর করে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। পরে তাকে শহরের হোটেল-মোটেল জোনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে মমস গেস্ট হাউজে নিয়ে সেখানে তাকে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়।
তবে অভিযুক্ত আশিকের স্বজনদের দাবি, ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আশিকের পরিবার সামাজিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মেয়েটির পরিবার তাতে রাজি ছিল না।
তবে কিশোরীর অভিযোগ, গত কয়েকমাস ধরে স্কুলে ও প্রাইভেটে আসা-যাওয়ার পথে প্রেম নিবেদন ও কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন আশিক। এতে রাজি না হওয়ায় আশিক ও তার সহযোগীরা মিলে তাকে উত্ত্যক্ত করতেন। বিষয়টি আশিকের বাবা-মাকেও জানানো হয়েছে। ১৩ ডিসেম্বর তাকে তুলে নিয়ে হোটেলে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। ১৫ ডিসেম্বর রাত ৮টায় আশিক ওই হোটেল থেকে বের হন। পরে গাড়িতে করে নিয়ে কিশোরীর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে কৌশলে সটকে পড়েন। পরে বাবা-মা তাকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে কিশোরীর বাবা বলেন, ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রতিবেশীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হয় আমার মেয়ে। রাতেও না আসায় তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। ঘটনার দুদিন পর ১৫ ডিসেম্বর রাতে স্থানীয়রা আমার মেয়েকে আশিকের বাড়ির সামনে দেখতে পেয়ে খবর দেন। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, ‘তারা (আশিকের বাবা-মা) উল্টো আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ঘটনার ব্যাপারে মামলা করলে বা আইনের আশ্রয় নিলে আমার মেয়েকে পুনরায় অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলবে। এরপর কোনো উপায় না দেখে মেয়েকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করি। ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করি।’
এ বিষয়ে আইনজীবী রিদুয়ান আলী বলেন, “ভিকটিম কিশোরী ‘পর্যটক’ না হওয়ায় আইশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিক সহযোগিতা পাচ্ছি না। অথচ গত ২২ ডিসেম্বর ধর্ষণের শিকার এক নারী নিজেকে ‘পর্যটক’ হিসেবে উপস্থাপন করায় গণমাধ্যম, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে। নিপীড়িত শিক্ষার্থী স্থানীয় বলে হয়তো সে সহযোগিতা পাচ্ছে না।”
আশিকের মা ও মামলার ২ নম্বর আসামি রাজিয়া বেগমের মোবাইলে ফোন দিলে রিসিভ করেন তার পুত্রবধূ শাহেনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আশিকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, তার দেবর আশিক ও ওই স্কুলছাত্রীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। মেয়েটিকে বউ করে আনতে তারা (শাহেনা) রাজি। কিন্তু মেয়ের পরিবার রাজি নয়।
মামলার ১০ দিন পরও কোনো আসামি গ্রেফতার না হওয়ার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও কক্সবাজার সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হালিম বলেন, মামলার তদন্তকাজ অব্যাহত রয়েছে। আসামিরা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আসামি গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, পর্যটক বিবেচনা নয়, নারীর প্রতি পাশবিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু স্কুলশিক্ষার্থীর মামলায় ছেলের সঙ্গে বাবা-মা, ভাই-বোন আসামি হওয়ায় অভিযোগের বিষয়ে কার কতটুকু সম্পৃক্ততা তা বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে।
সানবিডি/ এন/আই