‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মদকে মাদকদ্রব্য থেকে আলাদা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত’

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-১২-২৮ ১৭:৪১:০৬


পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মদকে মাদকদ্রব্য থেকে আলাদা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান।

গত ১৩ ডিসেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর আওতায় মদকে মাদকদ্রব্য শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজ বিশেষজ্ঞ যারা উপস্থিত ছিলেন তারা বলছেন, অ্যালকোহল অনেক আগে থেকেই মাদক বলে চিহ্নিত আছে। যেহেতু কোর্টে নির্দেশনা রয়েছে এটা আমরা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব। এখন পর্যন্ত আমরা যেটা ফলো করছি, সবগুলোকেই আমরা মাদক বলে চিহ্নিত করছি। লিকারকে কীভাবে আলাদা করে দেখা যায় সেটা নিয়ে আমরা আবারও বিস্তারিত আলোচনা করবো।

তিনি আরও বলেন, মাদক আমাদের দেশে তৈরি হয় না। ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসছে। টেকনাফের যত উপরে যাবেন বান্দরবানের দিকে, এটা ইনঅ্যাকসেসবল জায়গা। হেঁটে বর্ডার এলাকায় যেতে দুতিন দিন লাগে। আমরা বর্ডার রোড করছি। এর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, বছর দুয়েকের মধ্যে বর্ডার রোডের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। তখন আমাদের বর্ডার গার্ডরা সীমান্তে গিয়ে পাহারা দিতে পারবে এবং মাদকের প্রবেশ থেকে আমরা অনেকাংশে মুক্তি পাব বলে আশা করছি। শতভাগ হবে এটা আমরা চিন্তা করি না কিন্তু অবশ্যই আমরা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। আমরা কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করেছি, আরও শক্তিশালী করার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। সারা বাংলাদেশে এখন যত্রতত্র মাদকের বিস্তার ঘটে যাচ্ছে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমাদের কঠোর থেকে কঠোরত ব্যবস্থা নিতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ৪ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মাদক মামলা রয়েছে। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রণালয়ে সহযোগিতা কামনা করা হবে। সীমান্তে মাদক নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়া পরামর্শ এসেছে। অনলাইনে যেমন সব কিছু বিক্রি হয়, আমরা এখন দেখছি অনলাইনে মাদক বিক্রি শুরু হয়েছে। কঠোরভাবে মনিটরিং করে যারা অনলাইনে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেন, সব উৎপাদিত পণ্যের গায়ে এবং চিঠি-পত্রের ওপরে ‘মাদককে না বলুন’ স্লোগান লেখার জন্য উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সুপারিশ এসেছে। মাদকের বিরুদ্ধে গণজাগরণ তৈরি করার জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২২ সাল থেকে মাদকের বিরুদ্ধে এই গণজাগরণ কার্যক্রম শুরু হবে। প্রত্যেক বিভাগে, প্রত্যেক জেলায়—প্রয়োজনে প্রত্যেক উপজেলা-ইউনিয়নে এই কার্যক্রম শুরু করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদক আইনে একটি ডেডিকেটেড কোর্ট করার কথা বলা হয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয় থেকে কিছু জটিলতা এসেছিল। সে জন্য আমরা আবার আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বসে একটি সিদ্ধান্তে এসেছি, প্রত্যেক কোর্টে একটি বিশেষ ব্যবস্থা করা জন্য মাদকের মামলাগুলো যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি করা যায়। আইনমন্ত্রী বলেছেন, এ জন্য উদ্যোগ নেবেন। এদিকে আরও বেশি নজর দেওয়ার জন্য আমরা আবারও অনুরোধ করবো।

মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পাশাপাশি চিকিৎসা কেন্দ্র যুক্ত করা হবে। নিরাময় হলো একদম সম্পূর্ণ সুস্থ করে ফেলা। ৭০ শতাংশের বেশি মাদকসেবী সম্পূর্ণ সুস্থ হয় না। ৩০ শতাংশ আবারও ফিরে আসে। চিকিৎসা কেন্দ্র যদি সঙ্গে থাকে সেটাই উপযুক্ত নাম হবে। কারণ শতভাগ নিরাময় আমরা করতে পারছি না। চিকিৎসা ও নিরাময় কেন্দ্র আমরা এই নামটি রাখতে চাই। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। আরও কীভাবে এটাকে প্রয়োগ করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের ডেডিকেটেড কোর্ট করার কথা ছিল। সেটা যেহেতু করা যায়নি, তাতে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে সেটা নিরসনের জন্য আইনমন্ত্রী কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন, বলেন তিনি।

ইয়াবার বিস্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টেকনাফের অধিবাসীরা বলে এটা নাকি মাদক না, ট্যাবলেট। এদের সচেতন করতে হবে।

পুলিশ-বিজিবি-কোস্টগার্ড-অধিদপ্তর দিয়ে আমরা সচেতন করতে পারবো না। জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য যা যা করা দরকার আমরা সেটাই করছি। সরকারি যে কোনো চাকরির জন্য ডোপ টেস্টের (মাদক পরীক্ষা) বাধ্যতামূলক হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন।

এএ