ঢাবি ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগের একাধিক কর্মী!

প্রকাশ: ২০১৬-০২-০৯ ২০:৪৩:৫৯


downloadজাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার কয়েকটি হল কমিটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব নেতাকর্মী এখনো ছাত্রলীগের অধীনে হলে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

ছাত্রলীগ হয়েও ছাত্রদলের পদ পাওয়ায় এ নিয়ে ছাত্রলীগের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। ছাত্রলীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজ, গণফোরামের ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রদলের কমিটিতে পদ পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পদ পেয়েছেন ওই হলের ছাত্রলীগকর্মী আল মুইদ। মুইদ দাবি করেন, ‘আমি ছাত্রদলের সঙ্গে কখনো সংশ্লিষ্ট ছিলাম না। কিন্তু আমাকে ষড়যন্ত্র করে এ পদ দেওয়া হয়েছে।’

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক মারুফ হাসান, ছাত্রবিষয়ক উপসম্পাদক মহিউদ্দিন মাহি ও উপপ্রচার সম্পাদক আবদুর রহমান রনি। এ তিনজনই হল শাখা ছাত্রদলের সদস্য পদ পেয়েছেন। তবে তাঁরা ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে দাবি করেছেন।

ফজলুল হক মুসলিম হলের ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হাসান মেহেদী। তবে লিখিত অভিযোগপত্রে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রজীবনে আমি প্রথম দুই বছর ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম কিন্তু এখন কোনো ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই। তারপরও আমাকে পদ দেওয়া হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে শুভ পাটোয়ারী, আশরাফুল আলম আকাশ ও নাফিস সাদিক নামের তিনজন ছাত্রলীগকর্মী হল শাখা ছাত্রদলের সদস্যপদ পেয়েছেন। তাঁরাও ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে দাবি করেন।

এ ব্যাপারে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক আবদুস ছাত্তার পাটোয়ারি বলেন, ‘পার্টি অফিসে লাগাতার কয়েকদিন কেন্দ্রীয় নেতাদের টিম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলভিত্তিক মিটিং করা হয়েছে। হল এবং সেশনভিত্তিক প্রার্থীরা তাঁদের নাম স্বাক্ষর করেছেন। সেখান থেকে বাছাই করে পদ দেওয়া হয়েছে। দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলে তো কাউকে এমনিতেই পদ দেওয়া হয়নি।’

তবে এ কাজে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘যাদেরকে কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে কোনো ছাত্র না থাকায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তারা এ কাজ করেছে।’

এদিকে ছাত্রলীগ ছাড়াও ছাত্রদলের কমিটিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা পদ পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন ওই হলের জাফরুল হাসান নাদিম। জানা গেছে, জাফরুল গণফোরামের ছাত্র সংগঠনের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন ওই হলের তানভীর আহমেদ তন্ময়। তিনি জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া ছাত্রদলের ঢাবির হল কমিটিগুলোতে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মুহসীন হলের আরো দুজন, জসিম উদদীন হলের দুজন ও সূর্য সেন হলের তিনজনকে পদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

গত শনিবার মধ্যরাতে ছাত্রদলের ৭৩৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর হল শাখা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা জেলা ও মহানগরের কমিটিও অনুমোদন দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি হয়েছেন আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার সিদ্দিকী। আল মেহেদী বিবাহিত। তবে তিনি দাবি করেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’ বাসার সিদ্দিকী পাঁচটি মামলার আসামি বলে জানা গেছে।

সানবিডি/ঢাকা/রাআ