জয়পুরহাটের মাঠে মাঠে আলু উত্তোলনের ধুম, মিলছে না কাঙ্ক্ষিত দাম

জেলা প্রতিনিধি আপডেট: ২০২২-০১-০৪ ১৭:৩২:০৮


জয়পুরহাটের মাঠে মাঠে আগাম জাতের আলু উত্তোলনের ধুম পড়েছে। এই আলুর ফলন কম হলেও দাম ভালো থাকে। তাই প্রতিবছর ভালো দাম পাওয়ার আশায় চাষিরা আগাম জাতের আলু রোপণ করেন। কিন্তু এবার আলুর ফলন গত মৌসুমের চেয়ে ভালো হলেও দাম নিয়ে হতাশায় রয়েছেন চাষিরা। চাষাবাদে খরচ বৃদ্ধি পেলেও মাঠে কিংবা হাটে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত মূল্য।

আগাম জাতের আলুচাষিরা জানান, এখন যারা আলু তুলছেন, তাদের সব খরচ বাদ দিয়ে কিছুটা লাভ থাকছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর বাজার প্রতি মণে এক শ থেকে দেড় শ টাকা কমে গেছে। এভাবে কমতে থাকলে আগামী সপ্তাহে যারা আলু তুলবেন তাদেরকে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এতে হতাশায় আছেন সেখানকার আলুচাষিরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার বুম্বু বানিয়াপাড়া, কোমরগ্রাম, ভাদশার দুর্গাদহসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষান-কৃষানিরা আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখন মূলত মিউজিকা, গ্রানোলা, ফ্রেশ, ক্যারেজ, রোমানা পাকরি এবং বট পাকরি আলু বেশি তোলা হচ্ছে।

আক্কেলপুর বাজারে সোমবার (৩ জানুয়ারি) সকালে আলু বিক্রি করতে আসা চাষিরা জানান, আজকের বাজারে প্রতি মণ ক্যারেজ আলু ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। আর গ্রানোলা আলু ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা মণ। আলুর দাম দিনদিন নেমেই যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চাষিদের লোকসানে পড়তে হবে।

এবার ৪৫ শতক জমিতে আগাম জাতের মিউজিকা আলু চাষ করেছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার বানিয়াপাড়ার আলুচাষি মুবিনুল ইসলাম মোবিন। তিনি বলেন, রোপণের ৫৮ দিন বয়সে আমি আলু তুলেছি। জমিতে বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ৬৫ মণ। কিন্তু পাইকারকে প্রতি বস্তায় ৩ কেজি হারে বিঘাপ্রতি কয়েক মণ আলু ঢলতা (অতিরিক্ত) দিতে হবে। এজন্য বিঘাপ্রতি ৬৫ মণ ফলন হলেও সব বাদে ৬০ মণের দাম পাওয়া যাবে।

বর্তমানে আলুর বাজার কম। আমার আলু আগেই ৪৬০ টাকা মণ হিসেবে দরদাম করে রেখেছিলাম। এজন্য খরচ বাদে কিছু টাকা লাভ করতে পেরেছি। এই আলু আজকের বাজারে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা মণ। আমার আরও আলু আছে। দশ-পনেরো দিন পরে সেগুলো তুলতে হবে। কিন্তু বাজার দিন দিন যেভাবে নেমে যাচ্ছে তাতে লোকসান গুনতে হবে বলে জানান তিনি।

কোমরগ্রাম দক্ষিণপাড়ার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি নিজেই আলু রোপণ থেকে শুরু করে নিড়ানি, বাঁধানো এবং ভার বহনসহ যাবতীয় কাজ করেছি। তাই অন্যের থেকে বিঘাপ্রতি ৫-৬ হাজার টাকা খরচ কম হয়েছে। এক বিঘা জমির আলু তুলেছি। ফলন হয়েছে ৬৬ মণ। ৪৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছি।

আলুর পাইকারি ক্রেতা আসলাম হোসেন আলী বলেন, বাজারে এখন আগাম জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। এসব আলু ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে। কাঁচাবাজারের মূল্য সঠিকভাবে বলা যায় না। এক সপ্তাহ পরে আলুর দাম বাড়তেও পারে। আবার কমতেও পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৪০ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ১০০ হেক্টর, পাঁচবিবিতে ৭ হাজার, কালাইয়ে ১১ হাজার ১০০, ক্ষেতলালে ৯ হাজার এবং আক্কেলপুরে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমি। কিন্তু ৪০ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে আলুর অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে।

সানবিডি/ এন/আই