‘আইনগত ব্যবস্থার অসামঞ্জস্যতা দরিদ্রদের বিরুদ্ধে ও ধনীদের পক্ষে’

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২২-০১-০৫ ২০:১০:৩৯


বর্তমান আইনগত ব্যবস্থার অসামঞ্জস্যতা দরিদ্রদের বিরুদ্ধে ও ধনীদের পক্ষে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

তিনি বলেন, দারিদ্র্য একটি অন্যায়, এই অন্যায় আরও হাজার অন্যায়ের জন্ম দিয়েছে। এটা আকাশ থেকে পড়া কোন অন্যায় নয়। এটা মানবসৃষ্ট অন্যায়। এটাকে উতরিয়ে আসারও পথঘাট খুঁজে বের করতে হবে। যদিও এটা সম্ভব হবে না, কারণ এর বিরুদ্ধে খুব শক্ত অবস্থান নিয়েছে অনেকেই। এটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য বুদ্ধি ফিকির-টিকির তারা করছে। তারা ছড়িয়ে পড়েছে একই সঙ্গে।

বুধবার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক জাতীয় পর্যায়ের আলোচনা সভায় মন্ত্রী এসব কথা করেন। গণমাধ্যম উন্নয়ন সংগঠন ‘সমষ্টি’র আয়োজন ও গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায় এই আলোচনা সভা হয়।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের হাজার হাজার আইন-কানুন আছে। বিল, জলাশয়, ভূমি রক্ষায় হাজার হাজার আইন আছে এবং কত ভয়ঙ্করভাবে তা প্রয়োগ করা হয়। আমাদের ডিসিরা, এসিল্যান্ডরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০ ঘণ্টা ব্যয় করেন এসব সুরক্ষায়। কয়জন যাবে সামাজিক অন্যায়গুলো- শিশুমৃত্যু, নারীর প্রতি অবহেলা, বউ পেটানো দেখতে। তেমন কেউ নেই।

তিনি বলেন, জলাশয় রক্ষা করতে হবে, কারণ আমি এটা ইজারা নিয়ে খাবো। তথাকথিত শত্রু সম্পত্তি আছে, সেটাকে দেখভাল করতে হবে। কারণ এখানে আমার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গ্রামে খাসজমি আছে শত শত একর। আমি চেয়ারম্যানের ছেলে কিংবা এমপি- আমার এগুলো খেতে হবে। আমার বাবা খেয়েছেন দাদা খেয়েছেন, আমাকেও খেতে হবে। সুতরাং এগুলোর আইন আরও কড়া করতে হবে, প্রয়োগ করতে হবে আরও বেশি।

মন্ত্রী বলেন, এগুলো আপনারা জানেন। এই যে, বর্তমান আইনগত ব্যবস্থার অসামঞ্জস্যতা দরিদ্রদের বিরুদ্ধে ও ধনীদের পক্ষে। রিচ (ধনী হওয়া) কোন অন্যায় নয়, আমি তাদের দোষারোপ করছি না।

এম এ মান্নান আরও বলেন, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর বিষয়টির সঙ্গে আক্ষরিক অর্থেই আমি পরিচিত। মা যেখানে রান্না-বান্না করতেন এর ১০ গজের মধ্যেই অথৈ পানি ছিল বর্ষাকালে। আমি প্রাথমিকে স্কুলে যেতাম সাঁতরে অথবা নৌকায়।

তিনি বলেন, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে সচেতনতা ধীরে ধীরে বাড়বে বলে আমি মনে করি।

পরিকল্পনা কমিশনের উদ্দেশ্য আমরা যতদূর পারি চাকরিটা করে ওই ধরনের প্রকল্প যেগুলোতে তথাকথিত দরিদ্র মানুষের কল্যাণ বলা হয় সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করি। তথাকথিত বললাম ইচ্ছা করে, কারণ তারা স্বেচ্ছায় গরিব হননি, তাদের দরিদ্র বানানো হয়েছে, যোগ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, আমরা সবাই মিলে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু সমস্যার সমাধান করতে পারি। আমরা দৃষ্টিপাত করছি না বলে এই সমস্যা চলছে। এখন দৃষ্টি দিয়েছি। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে একটি ডিপিপি করা হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে ওঠার অপেক্ষায় আছে।

গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রধান নির্বাহী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য এটা সবাইকে মনে করতে হবে। শিশুদের পক্ষে কথা বলার কেই নেই, এটা আমাদেরই করতে হবে। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর তথ্য বেশিরভাগই রেকর্ড হয় না, তই বিষয়টি দৃষ্টির আড়ালে থেকে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে শিশুকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে শিশু একাডেমি ভূমিকা রাখতে পারে। মাঠ পর্যায়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্যকেও এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় উদ্যোগ প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান। এতে সূচনা বক্তব দেন ‘সমষ্টি’র পরিচালক মীর মাশরুর জামান, বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর নিয়ে উপস্থাপনা করেন গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের কমিউনিকেশন ম্যানেজার সারওয়ার ই আলম ও ‘সমষ্টি’র পরিচালক মো. রেজাউল হক। বিশেষ অতিখি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের কমিউনিকেশন বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস। এতে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি ও গবেষকরা অংশ নেন।

এএ