সুচিকে ২০২২ সালের পুরো সময়ই গৃহবন্দী থাকতে হবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক আপডেট: ২০২২-০১-০৮ ১৭:৪৮:১৪


বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা নিজ দেশে করোনা ঠেকাতে সফলতা দেখাতে পারছেন না। সময় মতো টিকা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। করোনা মহামারিতে অনেক বিশ্ব নেতার বিরুদ্ধেই এসব অভিযোগ থাকলেও অনেকটাই রেহাই পাচ্ছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সুচি। দ্য ইকোনমিস্ট-এর এক প্রতিবেদনে মিয়ানমারের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

১১ মাস ধরে কারাবন্দি রয়েছেন দেশটির গণতান্ত্রিক নেত্রী অং সান সুচি। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে মিয়ানমারের আদালতে বিচার কার্যক্রম চলছে। আভাস পাওয়া যাচ্ছে, ২০২২ সালের পুরোটাই হয়তো তাকে গৃহবন্দীই থাকতে হবে।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে নেয় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। তবে দেশটির সিংহভাগ জনগণ বিষয়টি মেনে নেয়নি। রাস্তায় বিক্ষোভ, সরকারি কাজকর্ম বয়কটসহ সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় তারা।

সম্প্রতি দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। গত মাসেও দেশটিতে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে বিধ্বস্ত কায়া রাজ্যে জান্তা সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশুসহ ৩৫ জনকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ আসে। মিয়ানমারে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্ন্তজাতিক বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের দুই কর্মীও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেছে সেনাবাহিনী। স্থানীয় পর্যবেক্ষণকারী সংগঠনগুলো বলছে, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১৩শর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের কারিগর হলেন শীর্ষ জেনারেল মিন অং হ্লাইং। দেশের মানুষের আন্দোলন-বিক্ষোভের জেরে তিনি ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনকে ঘিরে ২০২৩ সালেও আলোচনায় থাকবেন দেশটির এই সেনাপ্রধান। আক্রমণের শঙ্কা থাকলেও বিশাল সৈন্যবহর নিয়ে তিনি রাজধানী নেইপিদোতেই অবস্থান করবেন।

ধারণা করা হচ্ছে, গত বছরের শুরুর দিকে যে সহিংসতা শুরু হয়েছে দেশটিতে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। আন্দোলন সহিংসতা এখন গ্রাম-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুব্ধ জনগণ এবং গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনকারীরা দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও জান্তা সরকারের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালাতে পারেন, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সাহসী জাতিগত-সংখ্যালঘু মিলিশিয়ারা প্রসারিত সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগ করতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন এসব মিলিশিয়া। তারা কেউ কেউ অভ্যুত্থানের পর থেকে গড়ে ওঠা শত শত মিলিশিয়াদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের সহিংস আন্দোলন আরও সমন্বয় করবে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটি গৃহযুদ্ধের দিকেও ধাবিত হতে পারে।

জেনারেল মিন অং হ্লাইং তার অর্থনীতির দায়িত্বভারকে বৈধতার বেড়াজালে আটকে রেখেছেন। দেশটির তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মন্ত্রিসভা যোগ্য টেকনোক্র্যাট দিয়ে গঠিত হয়নি। বলা চলে সেটি পরিণত হয়েছে চাকচিক্য প্রদর্শনের জন্য, কাজের জন্য নয়। তারা মিয়ানমারের কাঠ, জেড (সবুজ রঙের প্রায়-স্বচ্ছ একটি পাথর) এবং বিরল ধাতু বিক্রির অর্থ নিজেদের পকেট ভরছেন।

জেড পাথরের সবচেয়ে বড় বাজার প্রতিবেশী দেশ চীন। সেখানে একে ‘স্বর্গের পাথর’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। দেশটির মোট জিডিপির অর্ধেকই আসে এই জেড শিল্প থেকে। ফলে ২০২৬ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারের জিডিপির আকার করোনা পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আসার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমারের বাজার ব্যবস্থাপনা আরও ভেঙে পড়বে, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে এবং দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে যাবে বহু মানুষ।

এদিকে গণতন্ত্রের দাবিতে চলা আন্দোলনে আরও সক্রিয় অবস্থান থাকবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের। বলা চলে, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সরকার গঠনের আশা তৈরি হবে।

মিয়ানমারে চলমান সেনাশাসনের অবসান ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ‘ছায়া সরকার’ গঠন করে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সংসদ সদস্যদের জোট। এই ছায়া সরকারে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) পাশাপাশি দেশটির ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর রাজনীতিকরা রয়েছেন। তারা আত্মগোপনে থেকে ছায়া সরকার পরিচালনা করছেন।

এই ছায়া সরকার ক্রমাগত সেনাবাহিনীকে তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে। মিয়ানমারের জনগণের কাছেও তাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট ও ফরাসি সিনেটেরও সমর্থন রয়েছে এই ছায়া সরকারের প্রতি।

ব্যালটে জিতে না আসলেও শত বাধা সত্ত্বেও উদ্বাস্তু হওয়া প্রায় দুই লাখ মানুষকে সহযোগিতা করছে মিয়ানমার ছায়া সরকার। তাছাড়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কারণে বহু মানুষ দেশ ছেড়েছেন। নিজ দেশের মানুষের প্রতি দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর নিষ্ঠুরতা চালানোর বিরুদ্ধে সোচ্চার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও। অনেকটা নিরাশার মধ্য দিয়ে যাওয়া মিয়ানমারের জনগণ এখন তাকিয়ে আছে ২০২৩ সালের নির্বাচনের দিকে।

সানবিডি/ এন/আই